কলকাতা পুরসভা নির্বাচন আগামী ১৯ ডিসেম্বর। তাই চতুর্মুখী লড়াইয়ে এখন কলকাতা শহর সরগরম হয়ে উঠেছে। সেখানে তারকা প্রচারক থেকে হেভিওয়েট নেতা–নেত্রীরা পথে নেমেছেন। কলকাতা পুরসভার মোট ১৪৪টি ওয়ার্ড। তার মধ্যে দক্ষিণ কলকাতার চারটি ওয়ার্ড বেশ নজরকাড়া হয়ে উঠেছে। রীতিমতো চায়ের কাপে তুফান তুলে এই চর্চাই শোনা যাচ্ছে ওয়ার্ডগুলিতে পা রেখে।
কলকাতা পুরসভার ৮২ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে প্রার্থী হয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এলাকাটি ভবানীপুর চত্ত্বর–সহ অন্যান্য এলাকা নিয়ে গঠিত। বামফ্রন্ট এখানে মহিলা প্রার্থী দিয়েছে—পারমিতা দাশগুপ্ত। কিন্তু এই ওয়ার্ডে সদ্য প্রচার করে ভোটব্যাঙ্ক তুলে দিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম। উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য পথে নেমে। সেখানে তিনি এখন অ্যাডভান্টেজে রয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। সেখানে বিজেপি দাঁড় করিয়েছে অবাঙালি প্রার্থী প্রতাপ সোনকার–কে। আর কংগ্রেস এখানে কাউকে প্রার্থী করেনি। তাই এখানে ত্রিমুখী লড়াই।
কলকাতা পুরসভার ৮৫ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেবাশিস কুমার। তিনি আবার এলাকার বিধায়ক। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ কলকাতা জেলার সভাপতিও। দেশপ্রিয় পার্ক থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি এলাকা এখানে স্থান পেয়েছে। যা তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। সদ্য তিনি এখানে খেটেই বিধায়ক হয়েছেন । তাই বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে না। তিনিও অ্যাডভান্টেজে আছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। এখানে বিজেপি প্রার্থী করেছে রুবি মুখোপাধ্যায়কে। এলাকায় তিনি খুব একটা পরিচিত মুখ নন। তবে প্রচার করছেন। কংগ্রেস এখানে প্রার্থী করেছে জয়দেব ভৌমিককে। যিনি প্রার্থী হয়েছেন বলে নিজের বাড়ি থেকেই বিতাড়িত হয়েছেন। আর বামফ্রন্ট এখানে গোবিন্দ নস্করকে প্রার্থী করেছে।
কলকাতা পুরসভার ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ড অত্যন্ত পশ এলাকা বলেই পরিচিত। এখানে বহ প্রভাবশালী মানুষজন থাকেন। গত পুরসভা নির্বাচনে এখান থেকে বিজেপি জিতেছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিযোগ, এলাকায় তাঁরা কোনও পুর–পরিষেবা পাননি। এবার এই ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এখানে প্রার্থী করেছে মনীষা বোস–কে। যিনি অত্যন্ত পরিচিত মুখ। এই এলাকার মহিলা এবং খুব জনপ্রিয়ও বটে। এখানে তৃণমূল কংগ্রেসকে খাটতে হলেও বিজেপির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগকে হাতিয়ার করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রার্থী মনীষা বোস–এর দাদাশ্বশুর চলচ্চিত্র জগতের পথিকৃৎ দেবকি কুমার বোস। তিনি বলেন, ‘এই ওয়ার্ড যে দলের দখলে ছিল সেই দলের পক্ষ থেকে এলাকায় কাজ করা হয়নি। এটা সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে। আমি এই ওয়ার্ডকে মডেল ওয়ার্ড করতে চাই।’ এখানে বিজেপি প্রার্থী করেছে অনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়কে। যিনি এলাকার মেয়ে নয় বলেই জানা যাচ্ছে। তেমন প্রচারও দেখা যাচ্ছে না। বামেরা দ্যুতিশ্রী দাস সোম–কে প্রার্থী করেছে। সেভাবে তাঁকে এলাকার মানুষ চেনেন না। আর কংগ্রেস এখানে প্রার্থী করেছে কলি নারায়ণ মুখোপাধ্যায়কে। সেখানে ঘরের মেয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্খী মনীষা বোসই থাকছেন অ্যাডভান্টেজে।
কলকাতা পুরসভার ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মালা রায়কে। যিনি এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। কলকাতা পুরসভায় তিনি দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তাঁকে সাংসদও করা হয়। এই এলাকায় তিনি ২০১৯ সালে নিজের জন্য, ২০২১ সালে দেবাশিস কুমারের জন্য খেটেছিলেন। সুতরাং চেনা মাঠেই নেমেছেন তিনি। যা একপ্রকার তাঁর অ্যাডভান্টেজ। এখানে বামেরা প্রার্থী করেছে কার্তিক মণ্ডলকে। যিনি মালা রায়ের স্ট্যাচারে পড়েন না। কংগ্রেস এখানে কাউকে প্রার্থী করেনি। আর বিজেপি সীমা শীলকে প্রার্থী করেছে। তিনিও মালা রায়ের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর কাছে সামান্যই। প্রার্থী মালা রায় অবশ্য বলছেন, ‘এখানে কারা প্রার্থী হয়েছেন তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। কারণ মানুষ বিচার করবেন। কারও নামে আমি কোনও কুৎসা করব না। তাঁরা করলেও করব না। কারণ এখানে আমি শুধু তুলে ধরব আমার কাজ। সবটাই এলাকার মানুষ জানেন।’