বিজেপিশাসিত একাধিক রাজ্য-সহ দেশের নানা প্রান্তের অশান্তি ঘটনা, এমনকী অগ্নিকাণ্ডের ছবিও বাংলায় আয়োজিত বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হওয়া অশান্তির ছবি বলে দেগে দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করছে বিজেপি। এবং সেই ভুয়ো প্রচার চালিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী! তাই তাঁদের বাংলার মানুষের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় বাংলার মানুষ বুঝবে তাঁদের মেরুদণ্ড নেই!
আজ (সোমবার - ১৪ এপ্রিল, ২০২৫) এভাবেই সুকান্ত-শুভেন্দু-অমিত মালব্য-সহ সমগ্র বিজেপি দলকে নিশানা করে তোপ দাগলেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা দলের সোশাল মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা দেবাংশু ভট্টাচার্য। এদিন একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন তিনি। তাতে দাবি করেন, সুকান্ত ও শুভেন্দুরা বাংলাকে অশান্ত করতে ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন। এই কাজ তাঁরা করছেন, নিজেদের সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল ব্যবহার করে। এমনকী, ভুয়ো পোস্টগুলি পরে মুছে দিলেও এই অন্য়ায়ের জন্য তাঁরা নিজেরা বা বিজেপির কোনও নেতা ক্ষমাপ্রার্থনা করছেন না, কিংবা ভুল স্বীকার করছেন না!
তাই দেবাংশু দাবি তোলেন, শুভেন্দু ও সুকান্তকে টিভি ক্যামেরার সামনে এসে হাতজোড় করে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে বুঝতে হবে তাঁরা আদতে মেরুদণ্ডহীন! এর পাশাপাশি ভুয়ো খবর ছড়ানোর জন্য যে সুকান্ত মজুদারের বিরুদ্ধে বাংলার প্রশাসনের তরফে আইনি পদক্ষেপও করা হবে, সেই বার্তাও স্পষ্ট ভাষায় দেন দেবাংশু। এবং শেষে আসা খবর অনুসারে, ইতিমধ্য়েই বিজেপি রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
এদিন দেবাংশু একটি সোশাল মিডিয়া পোস্টের স্ক্রিনশটের রঙিন প্রিন্টআউট প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরেন এবং জানান নিজের ভেরিফায়েড অ্য়াকাউন্ট থেকে সেই পোস্ট করেছিলেন সুকান্ত। যা তিনি পরে মুছেও দেন।
দেবাংশু বলেন, 'সুকান্ত মজুমদার, ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য সভাপতি, তিনি এই ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন, আপানারা সকলে জানেন। শুধু সুকান্ত মজুমদারই যে এই পোস্ট করেছিলেন, তাই নয়। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও এই পোস্ট করা হয়েছিল। এখানে সুকান্ত মজুমদার যা লেখার লিখেছেন। লিখে ন'টি ছবি দেওয়া হয়েছে, সেই ন'টি ছবির মধ্য়ে প্রথম ছবি গণেশ চতু্র্থীর, দ্বিতীয়টি সরস্বতী পুজোর, তৃতীয়টি রামনবমীর, হোলি, দিওয়ালি, দুর্গাপুজো, হনুমান জয়ন্তী, দশেরা এবং সংক্রান্তির ছবি।'
দেবাংশুর দাবি, এই সবক'টি ছবিই বাংলার বলে দাবি করেছিলেন সুকান্ত। কিন্তু, সেগুলিরও একটি আদতে বাংলার ছবি নয়। তৃণমূলের এই যুব নেতা বলেন, 'আমরা যখন তথ্য বের করি, (জানতে পারি) প্রত্যেকটি ছবি, একটিও বাংলার ছবি নয়। বাইরের রাজ্য়ের ছবি। প্রথম ছবিটি সিএএ প্রোটেস্টের - ২০১৯-২০ সময়ের। দ্বিতীয় ছবিটি লখনউয়ের এনআরসি প্রোটেস্টের। চতুর্থ ছবিটি জলন্ধরের। সেটি হোলি বলে চালানো হলেও, আসলে একটি অগ্নিকাণ্ডের ছবি! পঞ্চম ছবিটি ম্যাঙ্গালোরের, সপ্তম ছবিটি কর্ণাটকের, অষ্টম ছবিটি উত্তরপ্রদেশের। আর, সংক্রান্তির ছবি বলে যেটিকে চালানো হয়েছে, সেটি আসলে অসমের এনআরসি প্রোটেস্টের ছবি। বিজেপিশাসিত রাজ্য়ের অশান্তির ছবিও বাংলার বলে চালানো হয়েছে!'
এরই সঙ্গে, দেবাংশু আরও একটি বিশেষ ঘটনা উল্লেখ করে জানান, বিজেপির তরফে ভুয়ো প্রচার করা হচ্ছিল যে মনসুর মহম্মদ নামে বাংলার কোনও এক তৃণমূল বিধায়ক নাকি পুলিশ অফিসারদের পেটাচ্ছেন! দেবাংশুর দাবি, তাঁদের সোশাল মিডিয়া টিম তথ্যতলাশ করে জানতে পেরেছে, আদতে ওই ব্যক্তির নাম মণীশ চৌধুরী। এবং তিনি ২০১৮ সালে বিজেপির মিরাটের কাউন্সিলর ছিলেন! তিনিই একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকে পুলিশ পিটিয়েছিলেন। সেই ঘটনাও বাংলার বলে চালানোর চেষ্টা করা হয় বলে জানান দেবাংশু।