২০১৪ সালের এক নৃশংস খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। ১১ বছর ধরে জেল খাটার পর তাঁদের মুক্তি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১৯ সালে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন ওই তিন জন। এই তিনজন হলেন, মৃতার প্রাক্তন স্বামী সুরজিৎ দেব, তাঁর সঙ্গিনী লিপিকা পোদ্দার এবং সঞ্জয় বিশ্বাস।
আরও পড়ুন; শিশুকে ধর্ষণ-খুন, ২০১৩-র ঘটনায় দোষীর মৃত্যুদণ্ড রদ, যাবজ্জীবন সাজা দিল হাইকোর্ট
বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানায়, ঘটনার সময় অভিযুক্তদের কোনও একজনও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, এমন কোনও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। আদালতের পর্যবেক্ষণ, অভিযুক্তদের দোষ প্রমাণ করতে সরকারপক্ষ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের ২০ মে মাসে শিয়ালদা স্টেশনের পার্কিং জোনে এক মহিলার কাটা দেহাংশ উদ্ধার করে পুলিশ। লেপে মোড়া দেহের কিছু অংশ ছিল ট্রলি ব্যাগে। জানা যায়, ওই মহিলার নাম জয়ন্তী দেব। তদন্তে নামে রেল পুলিশের স্পেশাল ইউনিট (জিআরপি)। তখন গ্রেফতার করা হয় জয়ন্তীর প্রাক্তন স্বামী সুরজিৎ তাঁর বান্ধবী লিপিকা এবং সঞ্জয় বিশ্বাসকে। সুরজিৎ ও লিপিকার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয় এবং দাবি করা হয়, সঞ্জয় প্রমাণ লোপাট করতে সহায়তা করেছিলেন। ২০১৫ সালে চার্জ গঠনের পর ২০১৯ সালে নিম্ন আদালত তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যু দণ্ড দেয় ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও ধার্য করে।
পরে মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। তিনজনের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণে যুক্তি ও প্রমাণ পর্যাপ্ত ছিল না বলে মনে করেছে উচ্চ আদালত। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বহু আগেই সুরজিৎ তাঁর বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সঙ্গিনী লিপিকার সঙ্গে অন্যত্র থাকছিলেন। ঘটনার দিন অভিযুক্তদের কেউই ঘটনাস্থলের আশেপাশে ছিলেন না।
বিশেষ করে সঞ্জয় বিশ্বাসের দেওয়া স্বীকারোক্তি, যেটির উপর ভিত্তি করে ট্রায়াল কোর্ট সাজা দিয়েছিল তা পরে তিনি নিজেই প্রত্যাহার করে নেন। অথচ সেই স্বীকারোক্তিকে ভরসা করে সাজা ঘোষণা করেছিল নিম্ন আদালত। অভিযুক্তদের পক্ষে আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, সেই স্বীকারোক্তির নির্ভরযোগ্যতা যাচাই বা জেরা করার সুযোগই দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে জেলে বন্দি থাকার পর অবশেষে এই রায় তিনজনের জীবনেই বড় স্বস্তি এনে দিল।