নয় নয় করে 'কালীঘাটের কাকু' ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের হাতে প্রায় ৭৫ থেকে ৭৮ কোটি টাকা তুলে দিয়েছিলেন তিনি! সূত্রের দাবি, তিনি নাকি বিজেপি নেতা! ছিলেন 'কাকুর সহযোগী'! নাম - অরুণ হাজরা ওরফে চিনু। নানা কারণ দেখিয়ে বারবার আদালতে হাজিরা দেওয়া এড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু, এবার আর তা করা গেল না। বিচারকের নির্দেশ মাফিক আজ (মঙ্গলবার - ২৯ এপ্রিল, ২০২৫) বিচার ভবনের এজলাসে হাজিরা দিতে হল নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অন্যতম 'মধ্যস্থতাকারী' চিনুকে। আর তিনি আদালতে হাজিরা দিতেই চিনুর আইনজীবীর দাবি, তাঁর মক্কেলের নাকি আত্মহত্যা করার প্রবণতা রয়েছে!
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই যে চার্জশিট পেশ করেছে, সেখানে এই অরুণ হাজরা ওরফে চিনুর নাম রয়েছে। তাঁকে সেখানে সুজয়কৃষ্ণের 'সহযোগী' এবং চাকরিপ্রার্থী, এজেন্ট ও মূল অভিযুক্তদের মধ্য়ে 'মধ্যস্থতাকারী' হিসাবেই ব্যাখ্য়া করা হয়েছে বলে দাবি সূত্রের। সিবিআই গোয়েন্দাদের দাবি, শুধুমাত্র প্রাথমিকে নিয়োগ নয়, চিনুর হাতযশের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে এসসসি-র নিয়োগ দুর্নীতিতেও।
কেমন ছিল এই চিনুর মোডাস অপারেন্ডি? এই প্রশ্নের জবাবে আদালতকে সিবিআই জানিয়েছে, সারা রাজ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতেন চিনুর এজেন্টরা। তাঁদের কাজ ছিল চিনুর হয়ে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তোলা। যার বিনিময়ে তাঁদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত। চাকরিপ্রার্থীদের টাকা এভাবে এজেন্ট মারফত পৌঁছত চিনুর হাতে। তারপর সেই টাকা চিনু তুলে দিতেন কালীঘাটের কাকুর হাতে! সিবিআই-এর দাবি, এইভাবেই বিপুল পরিমাণ অর্থ পৌঁছে গিয়েছিল কালীঘাটের কাকুর কাছে। তার পরিমাণ অন্তত ৭৫ কোটি! সম্ভবত, তারও বেশি!
এহেন চিনুকে হাজিরা দেওয়ার জন্য আগেই নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু, নানা অছিলায় তিনি সেই নির্দেশ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। চিনু বয়সে প্রবীণ। তাঁর আইনজীবীর দাবি ছিল, তিনি নাকি গুরুতর অসুস্থ! তাই চিকিৎসকরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন! এই কারণ দেখিয়েই গত সপ্তাহেও হাজিরা এড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, বিচারকের নির্দেশ ছিল মঙ্গলবার যেন অবশ্য়ই চিনু আদলতে উপস্থিত থাকেন। অগত্যা এদিন তাঁকে এজলাসে হাজিরা দিতে হয়।
কিন্তু, এদিনও তাঁর আইনজীবী মক্কেলের অসুস্থতা নিয়ে সওয়াল করেন। জানান, অরুণ হাজরা ওরফে চিনুর উচ্চ রক্তচাপ ও সুগারের সমস্যা রয়েছে। এমনকী তাঁর নাকি আত্মহত্য়া করার প্রবণতাও রয়েছে!
এদিকে, এদিন তদন্তকারী অফিসার আদালতে উপস্থিত না থাকায় বিচারক অসন্তুষ্ট হন। তিনি কেস ডায়ারি খতিয়ে পড়েন। বিচারকের পর্যবেক্ষণ, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৭৫ কোটি টাকারও বেশি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, সেই ব্যক্তি যেদিন আদালতে হাজিরা দিলেন, সেদিনই তদন্তকারী আধিকারিক আদালতে অনুপস্থিত! এ নিয়ে বিস্ময় ও বিরক্তি দুই-ই প্রকাশ করেন বিচারক।