চোপড়ার একটি ভিডিয়ো সম্প্রতি ভাইরাল হয়। ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। হায় হায় একী বাংলার হাল! বলে প্রতিবাদে নেমে পড়েন বিরোধীরা।
কী আছে সেই ভিডিয়োতে?
সেই ভিডিয়োতে( এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) দেখা গিয়েছিল এক যুবক ও এক তরুণীকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। সেই ঘটনায় সামনে আসে চোপড়ার এক দাপুটে তৃণমূল নেতা তাজিমুলের নাম। কিন্তু এলাকায় তাজিমুল বললে বাসিন্দারা প্রথমেই প্রশ্ন করবেন, কোন তাজিমুলের কথা বলছেন?
আসলে তিনি এলাকায় পরিচিত জেসিবি বলে। জেসিবি নামে একডাকে তাকে চেনেন বাসিন্দারা। যেদিন সালিশিসভায় এই ভয়াবহ মধ্য়যুগীয় তালিবানি নির্যাতন করা হয়েছিল সেদিন দেখা গিয়েছিল ঘটনাস্থলে প্রচুর মানুষ সেই দৃশ্য দেখছেন। কোথাও প্রতিবাদের কোনও ব্যাপারই নেই। আর জেসিবি যে প্রথমবার এমন করলেন তা নয়, এর আগেও তিনি একাধিকবার এই ধরনের সালিশির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। এমনকী স্থানীয়দের একাংশের কাছে তিনি ‘সমাজসেবী’। সেই তাজিমুলের সমাজসেবার ধরন জানতে পারলে চমকে যাবেন যে কেউ।
কে এই জেসিবি? কেন তিনি জেসিবি?
ছোটবেলা থেকেই বেশ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জেসিবি। বেশ লম্বা চওড়া চেহারা। এই চেহারার সুবাদেই তিনি জেসিবি বলে এলাকায় পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন। এমনটাই মত অনেকের। এরপর তাজিমুল থেকে তিনি এলাকায় জেসিবি বলেই পরিচিত হয়ে যান। তার চলাফেরা দাপটের বহিঃপ্রকাশ একেবারে চোখে পড়ার মতো। অনেকটাই শাহজাহান পার্ট টু।
২০১৮ সাল থেকে শাসকদলের রাজনৈতিক বৃত্তে ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। তৃণমূল বিধায়ক হামিদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন দ্রুত। এরপরই চোপড়ার লক্ষ্মীপুরের অঘোষিত 'বিচারক' হয়ে ওঠেন জেসিবি। এলাকায় গ্রাম্য বিবাদ থেকে পরকিয়া সম্পর্কে শাস্তির বিধান সবটাই নিয়ন্ত্রণ করত এই জেসিবি। খুন সহ ১২টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। খবর এমনটাই।
২০২১ সালে ওসমান গনি নামে এক যুবককে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালের এক সিপিএম কর্মীকে গুলি করে খুনের অভিযোগেও নাম জড়িয়েছিল জেসিবির বিরুদ্ধে। এমনকী পরিত্যক্ত চা বাগানের জমি বিক্রি থেকে এলাকায় তোলাবাজি সবটাই নিয়ন্ত্রণ করতেন লক্ষ্মীপুরের এই বেতাজ বাদশা।
সেই জেসিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরেই তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার জবি থমাস জানিয়েছেন, আগের যে ভিডিয়োর অভিযোগ উঠেছে সেগুলিও খতিয়ে দেখা হবে। এদিকে তৃণমূল নেতৃত্বও গোটা ঘটনায় বিরক্ত। কার্যত লক্ষ্মীপুরে যাতে সন্দেশখালির পুনরাবৃত্তি না হয় এনিয়ে সতর্ক তৃণমূল নেতৃত্ব। এদিকে ঘটনার কথা জানাজানি হতেই তড়িঘড়ি থানার আইসিকেও শোকজ করা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে চোপড়াতে কি ৭ বছরের জেসিবি রাজের অবসান ঘটবে?