তৃণমূলের জেলা কো–অর্ডিনেটর আনন্দময় অধিকারীর সঙ্গে সোমবার বৈঠক করলেন ভোট–কুশলী প্রশান্ত কিশোরের দলের সদস্যেরা। কারণ আনন্দময় অধিকারী একমাত্র ব্যক্তি যিনি সুতাহাটাতে থেকেও গোটা পূর্ব মেদিনীপুরের খবর রাখেন। শুধু তাই তাই নয়, অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ এই আনন্দবাবু। শিশির অধিকারী তাঁকে নিজের ছেলের মতো ভালবাসেন। তাই পিকে–র টিম খোঁজ নিচ্ছিল আনন্দবাবুর কাছ থেকে। তবে শুভেন্দুর বিষয়ে কোনও তথ্য দেননি তৃণমূলের জেলা কো–অর্ডিনেটর। তৃণমূল ছাড়েননি এই বাকপটু আনন্দবাবু।দলীয় সূত্রে খবর, তমলুকের নিমতৌড়তে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ অফিসে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ কর্মাধ্যক্ষ আনন্দময়ের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছিলেন ‘পি কে’র দলের এক সদস্য। বৈঠকে তিনি আনন্দময়ের কাছ থেকে জেলার সমীকরণ জানতে চান। এমনকী তিনি কোনদিকে আছেন, তাও জানতে চেয়েছেন। কিন্তু আনন্দবাবু সুকৌশলে পুরো বিষয়টি মিডিয়ার কাছ থেকে এড়িয়ে গিয়েছেন। যে তথ্য মিডিয়ার কাছে তিনি দিয়েছেন তা ধ্রুব মিথ্যে। কোনও ক্ষোভ–বিক্ষোভ প্রশমনে পি কে’র দল আসেনি তাঁর কাছে। তিনি অবশ্য মিডিয়াকে বলেছেন, ‘বঙ্গধ্বনি কর্মসূচিতে জায়গা না পাওয়াতে তাঁর ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তা প্রশমনে এসেছিল পিকে’র টিম। আর সেই খবরই বাজারে ছড়িয়েছে।সূত্রের খবর, ক্ষোভ যদি তৈরি হওয়ার ছিল তাহলে তা আরও আগেই হতে পারত। এই আনন্দবাবুকে তৃণমূল নেতার পাশাপাশি এলআইসি’র এজেন্ট বলে পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষ চেনেন। তিনিও এই বার্তাই কৌশলে দিয়ে রাখতে চান। এলাকার মানুষের উপকার করেন তিনি। তারপরও তাঁর ক্ষোভ তৈরি হয়নি। তিনি চাইলেই যে কোনও সরকারি বড় জায়গায় যেতে পারতেন। তা তিনি করেননি। সুতরাং সংবাদমাধ্যমকে যা জানানো হয়েছে তা সঠিক খবর নয়।উল্লেখ্য, মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল থেকে সরে যাওয়ার ঘিরে জল্পনা চলছে। এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দু অনুগামী কয়েকজনের বিরুদ্ধে জেলায় পদক্ষেপ করেছে তৃণমূল। আনন্দময়ও শুভেন্দু অনুগামী বলে জেলা পরিচিত। শুভেন্দুর বিভিন্ন অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এমনকী ভোটের সময় সুতাহাটা এবং সংলগ্ন এলাকার দায়িত্ব শুভেন্দু এই আনন্দময়বাবুকেই দিতেন। কারণ শুভেন্দু অধিকারী জানেন আনন্দময়বাবু হাসি মুখে ভোটটি করিয়ে দিতে পারেন। অর্থাৎ ক্লিন সুইপ।সূত্রের খবর, তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর হিসাবে আনন্দময় তমলুক, ময়না, নন্দকুমার, মহিষাদল, হলদিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম পাঁশকুড়া বিধানসভায় দলের সাংগঠনিক কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন। দলের অন্দরে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য হলেও তা সামলানো তাঁর মতো নেতার কাছে নস্যি। স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত রয়েছে মাথার উপর। তাই তিনি এখন হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সদস্য। সম্প্রতি তিনি এই খবর পেলেও হাতে কাগজ পাননি বলে খোঁজ করছেন। এমনকী বিশ্বস্ত এক সৈনিককে সেটা জোগাড় করে দিতে বলেছেন। পিকে’র টিমের সঙ্গে কী কথা হল তা জানতে শুভেন্দু তাঁকে তলব করতে পারে বলেও ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন তিনি।আনন্দময়ের কাছে পিকে’র টিমের সদস্য জানতে চান, শুভেন্দুর অরাজনৈতিক কর্মসূচিগুলিতে কেন গিয়েছিলেন তিনি? এখন তিনি তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন, না শুভেন্দুর সঙ্গে, তা-ও স্পষ্ট করতে বলেন। আনন্দময় পিকের টিমকে জানান, শুভেন্দুর অরাজনৈতিক সভায় যাওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় নিষেধ ছিল না। আর শুভেন্দু যতক্ষণ তৃণমূলে রয়েছেন, তিনিও শুভেন্দুর সঙ্গে রয়েছেন। শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়লে তাঁর সঙ্গে থাকবেন না। কিন্তু শুভেন্দু কোথায় যাবেন? তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন। কিন্তু অনেকেই বলছেন, একমাত্র আনন্দময় অধিকারীই জানেন শুভেন্দুর পরবর্তী পদক্ষেপ। তিনি চেপে যাচ্ছেন।এদিন বৈঠকের কথা স্বীকার করে আনন্দময় অধিকারী বলেন, ‘পিকে’র টিমের প্রতিনিধি আলোচনার জন্য এসেছিলেন। আমার সঙ্গে কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’ কিন্তু সূত্রের খবর, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী আনন্দময়বাবুকে ডেকে পাঠাতে পারেন। তার তারিখ এখনও নির্দিষ্ট হয়নি। শুভেন্দুর সঙ্গে আনন্দময়ের বৈঠকের পরই তাঁকে ডাকা হবে। কারণ ইতিমধ্যেই আনন্দময় অধিকারী বেশ কয়েকটি মেইল করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে।