হিমোফিলিয়া রোগীদের চিকিৎসায় জীবনদায়ী ওষুধ 'অ্যান্টি হিমোফিলিক ফ্যাক্টর' (এএইচএফ) সরবরাহে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। প্রত্যেক রোগীর সপ্তাহে তিনটি করে ‘ফ্যাক্টর-৮’ বিনামূল্যে পাওয়ার কথা থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একটিও ইনজেকশন মিলছে না বিভিন্ন ইএসআই হাসপাতালে। এর ফলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের হিমোফিলিয়া আক্রান্ত রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা দিশাহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলার ইএসআই হাসপাতালের ভাঁড়ার শূন্য থাকায়, কর্তৃপক্ষের তরফে নতুন করে কোনও সুনির্দিষ্ট উত্তরও পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, সরবরাহকারী সংস্থাকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ‘ফ্যাক্টর-৮’ ইনজেকশন পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে সরবরাহ না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের কোনও উপায় নেই বলে জানান শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের সুপার অদিতি দাস।
বিশ্ব হিমোফিলিয়া ফেডারেশনের (ডব্লিউএফএইচ) সুপারিশ অনুযায়ী, সপ্তাহে অন্তত তিনবার এএইচএফ প্রয়োগ করলে রোগীর ‘ফ্যাক্টর লেভেল’ শূন্যে নামবে না। কিন্তু সরবরাহ বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন অনেক রোগী। শ্যামনগরের সুমন্ত রায়ের মতো অনেকেই কল্যাণী ইএসআই হাসপাতালে ইনজেকশন নিতে এসে খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। সুমন্তের শরীরে ইতিমধ্যেই রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে এবং অস্থিসন্ধির সংযোগস্থলে ফুলে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
আরও পড়ুন। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় TMC বিধায়ক তাপস সাহাকে ফের তলব ইডি-র
সোদপুরের এক ৩২ বছর বয়সী যুবক কামারহাটি ইএসআই হাসপাতাল থেকে শেষ পনেরো দিন ধরে ইনজেকশন না পাওয়ায় হাঁটুর ভিতরে ক্রমাগত রক্তক্ষরণে ভুগছেন। মানিকতলা, শিয়ালদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বর্ধমান, হাওড়া সহ বিভিন্ন জেলার রোগীরাও একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বাইরে থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ করে ইনজেকশন কেনার সামর্থ্য না থাকায় অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, বিনা চিকিৎসায় তাঁদের মৃত্যু হতে পারে।
ইএসআই-এর হিমোফিলিয়ার নোডাল অফিসার অদিতি দাস জানান, নিয়মিত ইনজেকশন না পেয়ে যাঁদের রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে, তাঁদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু ‘ফ্যাক্টর-৮’ মজুত রাখা হয়েছে। তবে, নিয়মিত ইনজেকশন না পাওয়ার কারণে অস্থিসন্ধির স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন। স্কুলের শিক্ষকরা আদৌও যোগ্য তো? ২ সপ্তাহের মধ্যে তথ্য আপলোড করতে বলল হাইকোর্ট
হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তীর মতে, ‘রক্তক্ষরণ কম হওয়া, অস্থিসন্ধির ক্ষতি না হওয়া এবং প্রাণঘাতী রক্তক্ষরণ আটকাতে এই ইনজেকশন প্রয়োজন। নিয়মিত ইনজেকশন না দিলে, অস্থিসন্ধির ক্ষতি পুরোপুরি আটকানো সম্ভব নয়।’
হিমোফিলিয়া রোগীদের জীবন রক্ষার্থে এই জীবনদায়ী ইনজেকশনটি দ্রুত সরবরাহের উদ্যোগ নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করতে হবে, এমনটাই দাবি করছেন চিকিৎসকরা।