জাল পাসপোর্ট মামলার তদন্তে ফের অ্যাকশনে ইডি। আজ (বৃহস্পতিবার - ১৭ এপ্রিল,২০২৫) এই মামলার তদন্তে নদিয়ায় খানাতল্লাশি শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা তথ্য অনুসারে - নদিয়ার চাকদার বাসিন্দা এক ব্যক্তির বাড়িতে এদিন সকাল থেকে তল্লাশি অভিযান শুরু করেন ইডি আধিকারিকরা।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, চাকদার এই বাসিন্দা জাল পাসপোর্ট ও ভুয়ো নথি তৈরির চক্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকতে পারেন। অন্তত এমনই দাবি সামনে আসছে। উল্লেখ্য, এর আগে গত মঙ্গলবারও (১৭ এপ্রিল,২০২৫) পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেই অভিযান চলাকালীন বিরাটি থেকে আজাদ মল্লিক নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযোগ, এই আজাদ মল্লিক আদতে বাংলাদেশের নাগরিক। তাঁকে জেরা করেই নদিয়ার চাকদার বাসিন্দা এক ব্যক্তির কথা জানতে পারে ইডি। আজ সেই ব্যক্তির বাড়িতেই তল্লাশি অভিযান চলছে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের দাবি, চাকদার এই বাসিন্দাকে দিয়েই নাকি ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরির কারবার চালাতেন আজাদ মল্লিক।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, বাংলাদেশি নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও আজাদ এপার বাংলার কাঁচরাপাড়ার একটি ক্যাফে থেকে জাল পাসপোর্ট এবং অন্যান্য ভুয়ো নথি তৈরির কারবার চালাতেন। এক-একটি ভুয়ো পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য তিনি অন্তত ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নিতেন। টাকার অঙ্কটা বেড়ে কখনও কখনও ৩০ থেকে ৪০ হাজারেও পৌঁছে যেত!
জানা গিয়েছে, জাল পাসপোর্ট এবং বিভিন্ন ধরনের ভুয়ো নথি ও পরিচয়পত্র তৈরি চক্রের মূলত 'মিডলম্যান' হিসাবে কাজ করতেন আজাদ মল্লিক। তিনি যে এই ধরনের চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তার প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ তাঁর মোবাইলেই পাওয়া গিয়েছে। যে কারণ, ইতিমধ্যেই আজাদ মল্লিকের দু'টি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। তাদের অনুমান, এই চক্রের বাংলাদেশি এজেন্টরা, যাঁরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে কারবার চালান, তাঁদের সঙ্গেও আজাদের নিয়মিত যোগযোগ ছিল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের শেষের দিকে ভুয়ো নথির ভিত্তিতে জাল পাসপোর্স তৈরির চক্রের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের তরফে এই বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আনা হয়। যার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করে কলকাতা পুলিশ। সেই তদন্তেই জাল পাসপোর্ট তৈরির চক্রের কথা জানা যায়।
এই চক্রের সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশের হাতে মোট ১০ জন গ্রেফতার হন। গত মাসেই এই মামলায় চার্জশিট জমা করেছে কলকাতা পুলিশ। জানা গিয়েছে, রাজ্যের সর্বত্রই এই চক্রের জাল ছড়িয়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে চার্জশিটে ১৩০ জনকে অভিযুক্ত হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যাঁদের মধ্য়ে ১২০ জনই বাংলাদেশি নাগরিক! এমনকী, কয়েকজনের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে 'লুক আউট' নোটিস পর্যন্ত জারি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রাথমিকভাবে কলকাতা পুলিশ ভুয়ো পাসপোর্ট মামলার তদন্ত শুরু করলেও পরবর্তীতে সেই মামলার তদন্তভার হাতে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।