গরমের ছুটিকে ঢাল করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলার স্কুলগুলিতে তালা লাগিয়ে দিয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। আসলে শিক্ষাকে বেসরকারীকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার। তাই প্রথম ধাপ হচ্ছে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে লাটে তুলে দেওয়া। সেই বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্বার ছাত্র আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করছে এসএফআই। কোচবিহার শহরে গোপাল সাহা ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই অভিযোগের কথা জানালেন এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্যী এবং রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে।
গত ৩০ এপ্রিল থেকে গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে সরকারি স্কুলগুলিতে। আর শুক্রবার এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্যী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ইতিমধ্যেই এই রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীরা চাকরি হারিয়েছেন। আর তার জেরে শিক্ষার পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে রাজ্যের বড় অংশের স্কুলগুলিতে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে এই স্কুলগুলি চালানোই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। এই বিষয়টি যাতে ঘুণাক্ষরেও সাধারণ মানুষের বুঝতে না পারে এবং ধামাচাপা দিতেই এভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সময় লকডাউন পরিস্থিতিতে এভাবেই অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আবারও এই কাজ করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: নিকাশি ও জঞ্জাল ব্যবস্থাপনায় কর্পোরেট সংস্থা, ঝাঁ–চকচকের উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার
এসএফআই অভিযোগ তুলেছে, ২০১১ সালের আগে বছরে ৬৫টি ছুটি পেত স্কুলগুলি। এই ছুটিগুলির ক্ষেত্রে জেলাস্তরে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করা হতো। আর এই গরমের ছুটি কবে নাগাদ হবে তা আবহাওয়া দেখে স্থির হয়েছে। কারণ উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া বিস্তর ফারাক। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে রাজ্যের ক্ষমতাসীনরা দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের স্কুলগুলির ক্ষেত্রে একসঙ্গে গরমের ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তখন উত্তরবঙ্গের মানুষ রাতে ঘুমোনোর সময় চাদর বা কম্বল ব্যবহার করেন। অথচ দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ স্কুলগুলিতেও চলছে গরমের ছুটি।
এবার এই সব অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামতে চলেছে এসএফআই। আর তাতে শিক্ষানুরাগী, শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদেরও সামিল করতে চাইছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন। রাজ্যজুড়ে বড় আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে প্রণয় কার্যীর বক্তব্য, ‘ছুটি ঘোষণা হলে সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলগুলির ছুটি হয় প্রায় একই সঙ্গেই। কিন্তু উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সরকারি স্কুলগুলি ছুটি আর বেসরকারি স্কুলগুলি গরমের ছুটি ঘোষণা করেনি। এটা থেকে পরিষ্কার রাজ্য সরকার তথা রাজ্যের শিক্ষা দফতর চাইছে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা বেঁচে থাকুক। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হোক।’