
Betvisa
6.88% Weekly Cashback on 2025 IPL Sports
১৮০ - আরও ভালোভাবে বলতে গেলে ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। গত কয়েক মাসে সেই সংখ্যাটার সঙ্গে অত্যন্ত পরিচিত হয়ে উঠেছেন ভারতবাসী। কারণ সেই গতিতেই ছুটতে পারে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। কিন্তু সেই ১৮০-র সংখ্যার আড়ালে লুকিয়ে আছে অন্য বাস্তব।
মুম্বই এবং দিল্লির মধ্যে একটি সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস চলাচল করে। যে ট্রেনকে রাজধানী এক্সপ্রেসের সমগোত্রীয় ট্রেন বলা যেতে পারে। কারণ বান্দ্রা টার্মিনাস থেকে নয়াদিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন স্টেশন (দূরত্ব ১,৩৬৬ কিমি) যেতে সম্পর্কক্রান্তির ১৬ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট লাগে। সেখানে মুম্বই রাজধানীর ১,৩৮৬ কিমি অতিক্রম করতে লাগে ১৫ ঘণ্টা ৩২ মিনিট।
কয়েক সপ্তাহ আগে আমি যখন বান্দ্রা থেকে সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসে চেপে নয়াদিল্লিতে গিয়েছিলাম, তখন প্রায় সঠিক সময় হজরত নিজামুদ্দিন স্টেশনে নেমে গিয়েছিলাম। অর্থাৎ সহজ অঙ্ক অনুযায়ী, সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৮১.৫৫ কিমি। যা মুম্বই রাজধানীর ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি - ঘণ্টায় ৮৯.২৩ কিমি।
কিন্তু বন্দে ভারতের মধ্যে কেন আচমকা সম্পর্কক্রান্তি এবং রাজধানী সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করছি? কারণটা একেবারে সহজ। গত কয়েক মাসে আমরা বন্দে ভারত নিয়ে অনেক কথাবার্তা শুনছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বুক চিরে যখন সেই সাদা-নীলে রাঙা ট্রেনটা ছুটে যায়, তখন চঞ্চুর মতো নাকটা দেখে জাপান ও ফ্রান্সের মতো দেশের হাইস্পিড ট্রেনের কথা মনে পড়ে যায়।
তবে জাপান ও ফ্রান্সের হাইস্পিড ট্রেনের তুলনায় বন্দে ভারতের সর্বোচ্চ গতি প্রায় অর্ধেক। যেখানে জাপানের বুলেট ট্রেন বা ফ্রান্সের টিজিভি ট্রেনের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩২০ কিমি ছুঁয়ে ফেলতে পারে, সেখানে বন্দে ভারত ঘণ্টায় ১৮০ কিমিতে ছুটতে পারে। যা ২০০ কিমিতেও ছুটতে সক্ষম। সেজন্য বন্দে ভারতকে 'সেমি হাইস্পিড' ট্রেনও বলা হয়। আর সেই 'সেমি হাইস্পিড' ট্রেন দিয়ে স্বপ্নের জাল বোনা শুরু হয়ে গিয়েছে - খুব শীঘ্রই ভারতে ছুটতে শুরু করবে হাইস্পিড ট্রেন।
কিন্তু 'সেমি হাইস্পিড'-র তকমা থাকলেও আদৌও কি সেটা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে? কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। ২০৬০৭ মাইসুরু বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের কথাই ধরা যাক। ভোর ৫ টা ৫০ মিনিটে চেন্নাই সেন্ট্রাল থেকে ছাড়ে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। ৪৯৬ কিমি অতিক্রম করে মাইসুরুতে পৌঁছায় বেলা ১২ টা ২০ মিনিটে। অর্থাৎ গড় গতিবেগ হল ঘণ্টায় ৭৬.৩১ কিমি। তুলনায় কিছুটা গতিবেগ বেশি ২২৪৩৬ নয়াদিল্লি-বারাণসী এক্সপ্রেসের। নয়াদিল্লি থেকে বারাণসীর ৭৫৯ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করতে আট ঘণ্টা লাগে। অর্থাৎ গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৯৪.৮৮ কিমি।
আবার ২২২২৬ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস সোলাপুর থেকে ছাড়ে সকাল ৬ টা ৫ মিনিটে। ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসে পৌঁছায় বেলা ১২ টা ৩৫ মিনিটে। ৪৫২ কিমি পথ অতিক্রমের সময় গড় গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ৬৯.৫৪ কিমি। তবে শুধু সোলাপুর-ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নয়, দেশের একাধিক বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের গড় গতিবেগ তেমন বেশি নয়। আপাতত দেশে যে সব বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, সেগুলির গড় গতিবেগ মোটামুটি ঘণ্টায় ৬৪ কিমি থেকে ৯৪ কিমির মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
অর্থাৎ সোজা বাংলায় বলতে গেলে সম্পর্কক্রান্তি বা রাজধানীর মতো গড় গতিবেগ থাকছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের। অথচ সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস বা রাজধানী অনেক বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে। সেখানে বন্দে ভারত আপাতত স্বল্প দূরত্বের মধ্যে চালানো হচ্ছে। এবার আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের গড় গতিবেগ দেশের আর পাঁচটা প্রথমসারির ট্রেনের স্তরে থেকে যাচ্ছে?
সেই উত্তরের জন্য আপনাকে একেবারেই হাতড়াতে হবে না। শুধু একটা কথা বলতে চাই, ফর্মুলা ওয়ানে যে সব গাড়ি থাকে, তা যদি শহরের রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়, সেগুলি কি ওরকম বিদ্যুতের গতিতে চলতে পারবে? উত্তরটা একেবারেই না। আর সেই 'না'-র মধ্যেই অন্তর্নিহিত আছে বন্দে ভারত গড় গতিবেগ কম হাওয়া কারণ। আপাতত ভারতে যে রেললাইন আছে, তার অনেকটাই সেমি হাইস্পিড ট্রেনের জন্য উপযুক্ত নয়। সেইসঙ্গে ভারতে যাত্রীবাহী ট্রেনের যা চাপ, তাতে বন্দে ভারতকে নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় ছুটতে দেওয়া অসম্ভব।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। বিকেল ৪ টে ৫৩ মিনিটে কল্যাণ স্টেশনে পৌঁছায় মুম্বই-সোলাপুর বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। দু'মিনিটের স্টপেজের পর সেটি বিকেল ৪ টে ৫৫ মিনিটে বেরিয়ে যায়। একই সময় কল্যাণ স্টেশন থেকে ছাড়ে ২০৯২০ একতা নগর-চেন্নাই সেন্ট্রাল সাপ্তাহিক সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। যে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিবেগ বন্দে ভারতের থেকে অনেকটাই কম। সেই পরিস্থিতিতে কল্যাণে যদি একতা নগর-চেন্নাই সেন্ট্রাল সাপ্তাহিক সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসকে টপকাতে না পরে বন্দে ভারত, তাহলে ওই ট্রেনের পিছনে আটকে যাবে। যে দুটি ট্রেনেরই গন্তব্য সোলাপুর। বড়জোর একতা নগর-চেন্নাই সেন্ট্রাল সাপ্তাহিক সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসকে কল্যাণ ছাড়ার পর কোথাও দাঁড় করিয়ে বন্দে ভারতকে ছেড়ে দিতে হবে।
সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বন্দে ভারতের গতিশীল ট্রেনকে নিজের পূর্ণ ক্ষমতায় ছোটানোর জন্য আমাদের স্পেশাল করিডরের উপর জোর দিতে হবে। যে করিডর দিয়ে শুধু এরকম সেমি হাইস্পিড ট্রেন বা হাইস্পিড ট্রেন ছুটবে। তবে ‘দ্য হিন্দু’-তে এক রেল আধিকারিক জানিয়েছিলেন, বর্তমানে শুধুমাত্র যাত্রী পরিবহণের মাধ্যম নয় বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। বিলাসবহুল, আরামদায়ক যাত্রার জন্য নয়া প্রজন্মের যাত্রীদের আকাঙ্খা হল সেই সেমি-হাইস্পিড ট্রেন।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: 'হিন্দুস্তান টাইমস' গ্রুপের 'লাইভ মিন্ট'-র হয়ে এই প্রতিবেদন লিখেছেন প্রাক্তন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট দিলীপ ডি'সুজা। সেই প্রতিবেদনের বাংলায় অনুলিখন করা হয়েছে। লেখকের মত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত।)
(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক )
6.88% Weekly Cashback on 2025 IPL Sports