সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় স্পষ্ট করেছে যে, সংবিধানের ৩৯ (বি) ধারার অধীনে থাকা সম্পত্তি অধিগ্রহণ বা বিতরণের ক্ষমতা সীমিত এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনের ভিত্তিতেই তা প্রয়োগ করা যাবে।
সংবিধানের ৩৯ (বি) ধারায় সব ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে না সরকার: SC
সংবিধানের ৩৯ (বি) অনুচ্ছেদ অনুসারে নাগরিকদের প্রতিটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তি সরকার চাইলেই তা অধিগ্রহণ করতে পারে না। এমনই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। আজ শীর্ষ আদালতের ৯ বিচারপতির বেঞ্চ বলে, জনসাধারণের মঙ্গলের জন্যও যদি কোনও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করতে হয়, তাও ৩৯ (বি) অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করা যায় না সব সময়। যদিও প্রধান বিচারপতি আজ পর্যবেক্ষণে বলেন, কিছু ক্ষেত্রে সরকার ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি দাবি করতে পারে। আজ ৯ জনের বেঞ্চের মধ্যে ৮ বিচারপতিই রায় দিয়ে জানায়, ৩৯ (বি) ধারা প্রয়োগ করে সব ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে না সরকার। (আরও পড়ুন: স্বাধীন বিচার বিভাগের অর্থ এই নয় যে সরকার বিরোধী রায় দিতে হবে: CJI চন্দ্রচূড়)
উল্লেখ্য, ভারতীয় সংবিধানের ৩৯ (বি) ও ৩১ (সি) ধারার অধীনে, রাজ্য সরকারগুলিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যাতে তারা জনগণের কল্যাণের জন্য সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে বা তা বিতরণ করতে পারে। কিন্তু সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে সম্পত্তি বলতে ব্যক্তিগত সম্পত্তিও বোঝানো হয় কি না, তার নির্দিষ্ট উল্লেখ নেই। ওই অংশ নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছিল। তবে, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় স্পষ্ট করেছে যে, এই ধরনের ক্ষমতা সীমিত এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনের ভিত্তিতেই তা প্রয়োগ করা যাবে। ভারতে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে আজকের এই রায় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি হৃষিকেশ রায়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা, বিচারপতি মনোজ মিশ্র, বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল, বিচারপতি এসসি শর্মা এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহ সংখ্যাগরিষ্ঠ রায় দেন। এদিকে অপর দ্বিতীয় একটি রায় দেন বিচারপতি নাগরত্ন। তিনি পৃথক রায় দিলেও প্রথম রায়ের সঙ্গেই সহমত পোষণ করেন। আর এই মামলায় তৃতীয় রায়টি লিখেছেন জাস্টিস ধুলিয়া। তিনি ভিন্নমত পোষণ করেছেন। (আরও পড়ুন: কমলা না ট্রাম্প, এগিয়ে কে? মার্কিন নির্বাচনের আগে সর্বশেষ সমীক্ষাগুলি কী বলছে?)
উল্লেখ্য, এই ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল মুম্বইয়ের প্রপার্টি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত রায় দিল, কোনওভাবেই সংবিধানের ৩৯(বি) ও ৩১(সি) ধারার মাধ্যমে সব ব্যক্তিগত সম্পত্তি রাষ্ট্রের অধিগ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রধান বিচারপতি বলেন, 'আমরা মনে করি, কোনও ব্যক্তির মালিকানাধীন সম্পত্তি ৩৯ (বি) ধারার অধীনে পড়ে কিনা তা নির্ধারণ করতে প্রেক্ষাপট নির্ভর। সব ব্যক্তিগত সম্পত্তিই যে জনগণের সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে, তা কিন্তু না।' বেঞ্চ আরও জানায় যে, সংশ্লিষ্ট সম্পদকে জনগণের স্বার্থের সম্পদ হিসেবে গণ্য করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ বিচার করা হবে। এর জন্যে সম্পদের প্রকৃতি, তার বৈশিষ্ট্য, সম্প্রদায়ের ওপর তার প্রভাব, সম্পদের সঙ্কটের বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবে। রায়ে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি সরাসরি জনগণের কল্যাণে প্রয়োজন কিনা, তার উপর নির্ভর করবে সম্পত্তি অধিগ্রহণের সম্ভাবনা।