ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতির পর রবিবার রাতে নতুন করে কোনও গুলিবর্ষণ বা ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেনি নিয়ন্ত্রণরেখা বা সীমান্তবর্তী এলাকায়। এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। গত ১৯ দিনের মধ্যে রবিবার রাতকে ‘প্রথম শান্ত রাত’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। গত শনিবার বিকেলে সংঘর্ষ বিরতিতে সম্মত হয় ভারত এবং পাকিস্তান। কিন্তু তারপরেও ওই দিন রাতে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে পাক সেনার বিরুদ্ধে। এদিকে, সোমবারই পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনায় বসতে চলেছে ভারত।
নিয়ন্ত্রণরেখা বা সীমান্তবর্তী এলাকায় ‘শান্ত রাত’
ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়েছে,‘জম্মু ও কাশ্মীর এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত লাগোয়া অন্যান্য এলাকায় মোটের উপর রাত শান্তিপূর্ণ ছিল। নতুন করে কোনও অশান্তি বা ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। গত কয়েক দিনের মধ্যে এটাই প্রথম শান্ত রাত।’ কিন্তু গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর থেকেই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি অশান্ত হয়ে পড়ে। তার আগে ৩ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর একাধিক সেক্টরে গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠে পাক সেনার বিরুদ্ধে। ভারতীয় সেনা তার পাল্টা জবাবও দেয়।কিন্তু ভারতের অপারেশ সিঁদুর স্ট্রাইকের পর ১১ মে পর্যন্ত তা ড্রোন, যুদ্ধবিমান হামলা পর্যন্ত গড়াই।
পাকিস্তানের হামলা বন্ধ হতেই পুঞ্চ, পাঠানকোট, জম্মু সিটি, আখনুর, রাজৌরি, ফিরোজপুরের মতো শহরগুলির বাসিন্দারা স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার করছেন। সম্প্রতি লাগাতার গুলিবর্ষণ-ড্রোন হামলায় পুঞ্চের সুরানকোট কার্যত ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছিল।আতঙ্কে বাসিন্দারা শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। কেউ কেউ আবার কাছের পাহাড়ি গ্রাম এবং বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিল। আবার কেউ কেউ জম্মুর নিরাপদ স্থানে চলে যায়। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বাসিন্দারা শীঘ্রই পুঞ্চে ফিরে আসার আশা প্রকাশ করেছেন।সংঘর্ষ বিরতি চুক্তির পর গত রাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় কোনও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের খবর পাওয়া যায়নি।যদিও শনিবার রাতে শ্রীনগর, জম্মুর একাধিক জায়গায় গুলি এবং বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গিয়েছে। উধমপুরে পাক ড্রোন হামলা আটকছে ভারত। রাজস্থানের বারমের, জয়সলমের এবং পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে ব্ল্যাক আউট করা হয়। অন্ধকার করে দেওয়া হয় কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ এলাকাও। পাক ড্রোন উড়তে দেখা গিয়েছে গুজরাটের কচ্ছেও।এরপরেই বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। হামলা নিয়ে তদন্ত করছে ভারতীয় সেনা। পাকিস্তান চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ভারত জবাব দিচ্ছে।
কেবল সীমান্তবর্তী এলাকা নয়, পাঞ্জাবের চণ্ডীগড়-সহ অন্যান্য শহরগুলিতেও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। রবিবার সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে সমস্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা নিয়েছে প্রশাসন।চণ্ডীগড়ের ডেপুটি কমিশনার বলেন, 'দৈনন্দিন জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল।' তিনি আরও বলেন, দোকানপাট এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক সময় অনুযায়ী খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নাগরিকদের যে কোন ধরণের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, রাজস্থানের জয়সলমীরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। বাজার খুলছে।এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, 'দিনের বেলায় কোনও সমস্যা নেই। সন্ধ্যা ৭:৩০ টার দিকে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়...তবে আমাদের জীবিকা প্রভাবিত হয় না।'