তেলঙ্গনায় মাও-দমন অভিযানে নেমে বিরাট সাফল্য পেল নিরাপত্তাবাহিনী। গুলির লড়াইয়ে নিকেশ করা হল সংগঠনের আঞ্চলিক কমান্ডার-সহ সাত মাওবাদীকে। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে তেলঙ্গনার মুলুগু জেলায়।
উল্লেখ্য, দিন কয়েক খানেক আগেই এই এলাকায় দুই আদিবাসীকে খুন করা হয়। সূত্রের দাবি, তাঁদের 'পুলিশের চর' সন্দেহে খুন করা হয়। সেই ঘটনার পরই এদিনের এই অভিযান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সংবাদ সংস্থা আইএএনএস সূত্রে খবর, রবিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মাওবাদীদের সঙ্গে গুলির লড়াই শুরু হয় নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের। মাও-দমন অভিযান চালাতে দক্ষ, অত্যাধুনিক গ্রেহাউন্ড বাহিনী স্থানীয় চালপাকার জঙ্গলে কয়েকজন মাওবাদীর লুকিয়ে থাকার খবর পায় এবং তাদের খুঁজে বের করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এরপর ওই মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ করতে বলেন বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু, মাওবাদীরা সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। উলটে নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ করে গুলি চালাতে শুরু করে তারা। অতএব, আত্মরক্ষার খাতিরে নিরাপত্তাবাহিনীকেও পালটা গুলি চালাতে হয়।
এই গুলির লড়াই চলাকালীনই সাত মাওবাদীর মৃত্যু হয়। সূত্রের দাবি, নিহতদের মধ্যে কুখ্যাত মাও নেতা ভদ্রু ওরফে কুরসাম মাংরু ওরফে পাপান্নাও রয়েছেন। ৩৫ বছরের ওই মাও নেতা মাওবাদীদের ইয়েল্লান্ডু-নার্সাম্পেট অঞ্চল কমিটির কমান্ডার ছিলেন। পাশাপাশি, তিনি মাওবাদীদের তেলঙ্গনা রাজ্য কমিটিরও অন্যতম সদস্য ছিলেন।
পাপান্না ছাড়াও আরও যে ছয় মাওবাদীকে এদিনের এই অভিযানে নিকেশ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন - ৪৩ বছর বয়সী এগোলাপু মাল্লাইয়া, ২২ বছরের মুস্সাকি দেভল, ২৩ বছর বয়সী মুস্সাকি যমুনা, ২৫ বছরের জয় সিং, ২২ বছর বয়সী কিশোর এবং ২৩ বছরের কামেশ। পুলিশের হাতে আসা তথ্য বলছে, নিহত এই ছয় মাওবাদীই পাপান্নার নেতৃত্বে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন।
এদিনের এই ঘটনাস্থল থেকে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা একে-৪৭, জি৩ এবং ইনসাস রাইফেল উদ্ধার করেছেন। এছাড়াও, অন্যান্য অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া এই সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে।
তথ্য বলছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে তেলঙ্গনার এই বনাঞ্চলে এত বড় মাও-দমন অভিযান হয়নি। সূত্রের দাবি, ইদানীং মুলুগু জেলায় মাওবাদীদের আনাগোনা বেড়েছে। তারা এই এলাকাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। গত ২১ নভেম্বর যে দুই আদিবাসী বাসিন্দাকে খুন করা হয়েছিল, তাঁদের গায়ে 'পুলিশের চর' তকমা সেঁটে দিয়ে, মাওবাদীরা তাঁদের খুন করেছিল বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২১ নভেম্বরের সেই ঘটনায় নিহত উইকা রমেশ এবং উইকা অর্জুনের মধ্য়ে প্রথম জন পেরুরু গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব ছিলেন। তাঁদের মৃতদেহের কাছ থেকে একটি নোট উদ্ধার করা হয়েছিল, যে নোটে ওই দুই ব্যক্তিকে 'পুলিশের গুপ্তচর' বলে দাবি করা হয়েছিল।
সেই নোট মাওবাদীরাই রেখে গিয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে, রবিবার যে সাত মাওবাদীকে নিকেশ করা হয়েছে, তাঁরা কেউ ২১ নভেম্বরের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিনা, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।