শুধু কথার কথা নয়, ভারতীয় রেলের পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে বড় অঙ্ক বরাদ্দ করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। জানা যাচ্ছে, শুধু এই বাজেট নয়, আগামী দশ বছর যাতে বিপুল টাকা ধরা থাকে, সেভাবে প্ল্যান করা হচ্ছে। যদিও চলতি বছর এপ্রিল-মে-তে সাধারণ নির্বাচন। তবে তারজন্য রেল সংক্রান্ত পরিকল্পনা কোনও ভাবেই থেমে থাকছে না। পয়লা ফেব্রুয়ারি ভোট অন অ্যাকাউন্টস পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। ভোটের ফলের পর নয়া সরকার চূড়ান্ত বাজেট ফের পেশ করবে। রেলমন্ত্রকের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, আগামী এক দশকে ভারতীয় রেল তার নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণ এবং ট্রেনের গতি বাড়ানোর জন্য রেকর্ড ৫০,০০০ কিলোমিটার নতুন ট্রেন ট্র্যাক স্থাপনের জন্য কমপক্ষে ৭ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরে নতুন লাইন বসানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে উৎসাহিত হয়ে রেল এখন বন্দে ভারতের মতো উচ্চগতির ট্রেন পরিচালনা করতে পারে এমন আধুনিক ট্র্যাকের সংখ্যা হুহু করে বাড়াতে চায়। নতুন ট্র্যাক স্থাপন করা হবে ভিশন ২০৪৭ ডকুমেন্টের অধীনে। আগামী ২৫ বছরে ১৫-২০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে এক লাখ কিলোমিটার নতুন ট্র্যাক ও গেজ পরিবর্তন সহ রেলের পুরো খোলনলচে বদলে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে।২০২২-২৩ সালে রেকর্ড ৫,২০০ কিলোমিটার নতুন ট্র্যাক সফলভাবে যুক্ত করেছে রেল। আগামী ১০ বছরের জন্য এই গতি বজায় রাখার পাশাপাশি আধুনিক উচ্চ গতির পরিবহন ব্যবস্থা পরিচালনা করতে সক্ষম একটি শক্তিশালী পরিকাঠামোর জন্য পুরনো জীর্ণ ট্র্যাকগুলি বদলে ফেলা হবে।রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এর আগে একটি সাক্ষাত্কারে মিন্টকে বলেছিলেন যে ভারতের প্রতিটি অংশে আধুনিক রেল পরিকাঠামো আনতে নতুন ট্র্যাক স্থাপন করা জাতীয় পরিবহনের মূল ফোকাস ক্ষেত্র হবে।আগামী বছরের বাজেটে ৫০০-৫,৫০০ কিলোমিটার নতুন ট্র্যাক স্থাপনের জন্য ৫০০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হতে পারে। এটি নতুন লাইনের জন্য ২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের ৩১,৮৫০ কোটি টাকার চেয়ে ৫০% এরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।বাজেটে ২০২৩ ও ২২ অর্থবছরে নতুন ট্র্যাক স্থাপনের জন্য যথাক্রমে ২৬,০০০ কোটি এবং ২১,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২৩ অর্থবছরে ৫,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি ট্র্যাক স্থাপন করা হয়েছিল এবং ২০২৪ অর্থবছরেও সেই পরিকল্পনা আছে।বর্তমান খরচে ১ কিলোমিটার ট্র্যাক নির্মাণে খরচ হবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ইস্পাতের মতো মৌলিক ইনপুটগুলির দামের গতিবিধির পাশাপাশি ট্র্যাক স্থাপনের জন্য জমি পাওয়ার উপর নির্ভর করে এটি পরিবর্তিত হতে পারে। ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, বন্দে ভারতের মতো উচ্চগতির এবং আধা-উচ্চগতির ট্রেনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে রেল নতুন লাইনের মাধ্যমে, যা ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে।পরিকাঠামো পরিকল্পনা পূরণে কেন্দ্র মোট বাজেট সহায়তার (জিবিএস) মাত্রা বজায় রাখবে বলে আশা করছে রেল। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে কেন্দ্র রেকর্ড ২,৪০,২০০ কোটি টাকার জিবিএস সরবরাহ করেছে, যা ২০২২-২৩ সালের ১,৫৯,৩০০ কোটি টাকার (সংশোধিত অনুমান) থেকে ৫১ শতাংশ বেশি। যেভাবে উত্তরোত্তর যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে রেলে, সেটার কথা মাথায় রেখেই পরিকাঠামো উন্নত করছে রেল। প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা কাটিয়ে কত দ্রুত বিভিন্ন প্রকল্প সবুজ সঙ্কেত পেতে পারে, এখন সেটাই দেখার।