প্রিয়জন হারানো সব সময়ই দুঃখের। কিন্তু এমন কিছু দুঃখ থাকে, যার সঙ্গে মিশে থাকে তীব্র রাগ, যন্ত্রণা। এমনটাই হয়েছে ময়ূরবিহারের ঘোষ পরিবারের সঙ্গে। তাঁদের পরিবারের এক সদস্য স্প্যানিয়্যাল গোত্রের সারমেয় মাইলোর উপর অত্যাচার করে তাকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে একটি পোষ্য কেয়ার সেন্টারের বিরুদ্ধে। দিন সাতেক আগে ঘটনাটি ঘটেছে নয়ডায়।
কী ঘটেছে ঘটনাটি? ওই পরিবারের সদস্যরা অক্টোবর মাসের ৪ তারিখ শহরের বাইরে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। ফলে আর পাঁচ জন পোষ্যের মালিকের মতোই তাঁরা একটি পোষ্য কেয়ার সেন্টারের দ্বারস্থ হন মাইলোকে রাখার জন্য। সেন্টারটির নাম ‘পজ পয়েন্ট’ (Paw’s Point) কথা ছিল ২১ তারিখ তাঁরা সেখান থেকেই মাইলোকে নিয়ে যাবেন। পোষ্য কেয়ার সেন্টার থেকে ওই দিনই নাকি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানানো হয়, তাঁদের পোষ্যকে গাড়ি করে অন্য কোনও জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই সময়ে সে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। তড়িঘড়ি পরিবারের সদস্যরা ওই এলাকায় পৌঁছোন এবং তল্লাশি শুরু করেন।
কলকাতা থেকে টেলিফোনে ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তাঁরা বলেন, ‘২১ তারিখ বিকেল থেকে আমরা খোঁজা শুরু করি। যে এলাকায় মাইলো হারিয়ে গিয়েছে বলে ওঁরা বলেছিলেন, সেই এলাকায় আমরা খুঁজতে থাকি। পোষ্য কেয়ার সেন্টারের মালিক স্বাতী নামের এক মহিলা। তাঁর এক বন্ধু বাইক নিয়ে আসেন। তাঁর বাইকে চেপেও আমরা গভীর রাত পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি চালিয়ে যাই। কিন্তু মাইলোকে পাওয়া যায় না।’
পরের দিন অর্থাৎ ২২ তারিখ আবার ভোর ৫টা নাগাদ ওই এলাকায় পৌঁছোন বলে জানান তাঁরা। তাঁদের কথায়, ‘৮টার পরে আমরা স্বাতীকে ফোন করি। তিনি বলেন, তিনিও ভোর থেকে ওই এলাকায় আছেন এবং তল্লাশি চালাচ্ছেন। যদিও তাঁকে আমরা দেখতে পাইনি। আমরা তাঁকে বলি যে, ৫টা থেকে আমরা মাইলোকে খুঁজছি। একথা শুনে উনি একটু চমকে যান, আর বলেন, একটু আগেই নাকি ওখান থেকে চলে গিয়েছেন। এতেই আমাদের সন্দেহ জাগে।’
এর পরে পোষ্য কেয়ার সেন্টারের কথায় ভরসা না রেখে পরিবারের লোকজন আশপাশে ফ্ল্যাটবাড়ির ফুটেজ পরীক্ষা করতে যান। এমনকী পুলিশের সাহায্য নিয়েও ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা হয়। আর তখনই এক মর্মান্তিক ভিডিয়ো তাঁদের চোখে পড়ে। একটি ভিডিয়োয় তাঁরা দেখতে পান, মাইলোর গলায় দড়ি বেঁধে বাইকের পিছনে দৌড় করানো হচ্ছে এবং থামলেই বেধরক মার দেওয়া হচ্ছে তাকে! এই দৃশ্যে শিউড়ে ওঠেন তাঁরা। সবচেয়ে বিস্মিত হন এটি দেখে, মাইলোকে খোঁজার জন্য যে ব্যক্তি নিজের বাইকে চাপিয়ে তাঁদের ঘোরাচ্ছিলেন, সেই ব্যক্তিই এবং তাঁর বাইকই ওই ফুটেজে রয়েছে। অথচ তিনি নিজে তল্লাশির সময়ে সে কথা ঘুণাক্ষরেও উল্লেখ করেননি।
ঠিক এর পর পরই পুলিশের থেকে খবর আসে, রাস্তার পাশে একটি কুকুরের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। বিশ্বন্দুরা সেখানে হাজির হয়ে আবিষ্কার করেন, সেটি তাঁদের পোষ্যেরই মৃতদেহ। মৃতদেহটি যেখানে পাওয়া গিয়েছে, সেটি পোষ্য কেয়ার সেন্টারের থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তার? পরিবারের একজন বলেন, ‘পুলিশ বলেছে, গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সেটি নাও হতে পারে। ভিডিয়োটি যত দূর পর্যন্ত দেখা যায়, তত দূর পর্যন্ত মাইলোর গলায় দড়ি বাঁধা ছিল। তার পরে কী হয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে।’
কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, কোথায় তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল? এই সব প্রশ্নের উত্তর এখন পাওয়া যায়নি। পরিবারের অভিযোগ, ‘সত্যিই গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে, নাকি ওরা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে তা আমরা জানি না। ওকে পোষ্য কেয়ার সেন্টারের বাইরে কেন বার করা হল, সেটাও জানি না। স্নান করানোর জন্য তো ওভাবে রাস্তায় দৌড় করিয়ে কেউ নিয়ে যায় না। আমাদের সন্দেহ, বেআইনি ভাবে ব্রিডিং করানোর পরিকল্পনা ছিল ওই পোষ্য কেয়ার সেন্টারের।’
এর পরে তাঁরা ফের থানায় যান এবং এফআইআর করার দাবি করেন। তাঁদের দাবি, পুলিশ প্রথমে এফআইআর নিতে চায়নি। পরে তাঁরা বিষয়টির বিচার চেয়ে মানেকা গান্ধীর কাছেও আবেদন করেন। এর পরে এফআইআর করা হলেও, ওই পোষ্য কেয়ার সেন্টার ও তার মালিকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
বর্তমানে তাই সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। #JusticeForMilo হ্যাশট্যাগ প্রচার করে তাঁরা এখন সুবিচারের প্রত্যাশায়। তাঁদের অভিযোগ, ইতিমধ্যেই ওই পোষ্য কেয়ার সেন্টারের তরফে পরোক্ষভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল এবং অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ারও প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু তাঁরা এর শেষ দেখেই ছাড়বেন বলেও মন্তব্য করেছেন।
ইতিমধ্যেই ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় মারাত্মক আকার নিয়েছে। দিল্লি, নয়ডা-সহ দেশের নানা প্রান্তের মানুষ এমন ঘৃণ্য কাজের নিন্দা করেছেন। আগামী দিনে যাতে ঘোষ পরিবারের মতো আর কাউকে কাঁদতে না হয়, তার জন্য পদক্ষেপের দাবিও উঠেছে।