এ এক বদলের বাংলাদেশ। যার রাজধানী ঢাকায় শনিবার থেকে শুরু হয়েছে ‘অমর একুশে বইমেলা–২০২৫’। বইমেলা হতেই পারে। তা নিয়ে কোনও সমস্যা এখানে দেখা যায়নি। এই বইমেলার চলতি বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়—‘গণ অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ’। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূস এই বইমেলার উদ্বোধন করেন। শুরুতে বিষয়টি তাও বহু মানুষ মেনেই নিচ্ছিলেন। কিন্তু তাল কাটল যখন দেখা গেল ডাস্টবিনের গায়ে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। আর ওই ডাস্টবিনের সঙ্গে ছবি তুলছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি পোস্ট করা হয়েছে। এই ডাস্টবিনে হাসিনার ছবি থাকাকে মানুষের ‘অভিব্যক্তি প্রকাশের স্বাধীনতা’ বলে ব্যাখ্যা করেছে আয়োজক সংস্থা।
এদিকে বাংলা অ্যাকাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে ‘অমর একুশে বইমেলা–২০২৫’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক মহম্মদ আজম। চলতি বছর অমর একুশে বইমেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্টল বসেছে। তারাই স্টলের পাশে ডাস্টবিন রেখেছে। ডাস্টবিনের গায়ে সাঁটানো হাসিনার বিকৃত মুখের ছবি। অমর একুশে বইমেলা পরিদর্শনে মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে গিয়েছিলেন তাঁর প্রেস সচিব শফিকুল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্টলে গিয়ে হাসিনার ছবি–সহ ডাস্টবিনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন।
আরও পড়ুন: ‘আমরা বিজেপির মতো নই, কুম্ভমেলায় যেমন হল’, বানতলা কাণ্ডে ক্ষতিপূরণ ও তদন্তের নির্দেশ মেয়রের
অন্যদিকে উদ্বোধনের পর শনিবার থেকে বইমেলা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রত্যেকদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইমেলা। শেখ হাসিনার বিকৃত ছবি–সহ ডাস্টবিনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা লিখেছেন, ‘বইমেলায় আসলে আপনার হাতের অপ্রয়োজনীয় ময়লা–আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলতে ভুলবেন না। ফ্যাসিস্ট, গণহত্যাকারী হাসিনার ছবি শুধু বইমেলার ডাস্টবিনে নয়, সারাদেশের ডাস্টবিনে ছড়িয়ে দিন।’ এভাবেই বইমেলায় মানুষের মনে হাসিনা বিরোধী প্রচার শুরু করা হয়েছে।
এছাড়া এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া হলেও সব মানুষ তা সমর্থন করেননি। বরং এমন রুচির সমালোচনা করেছেন অনেকে। কারও সম্পর্কে মতবিরোধ থাকতে পারে, অপছন্দও হতে পারে, কিন্তু এভাবে কালিমালিপ্ত করা ঠিক নয় বলেই অনেকে তুলে ধরেছেন। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার একটি ছবিতে বইমেলার ওই ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতেও দেখা গিয়েছে শফিকুলকে। বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে সেই ছবি দেখানো হয়েছে। শফিকুল অবশ্য ওই ছবি নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে লেখেন, ‘শনিবার বাংলা অ্যাকাডেমিতে একুশে বইমেলার প্রথমদিন ডাস্টবিনে জঞ্জাল নিক্ষেপ।’ পরে তাঁর সরিয়ে ফেলা হয়। বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিন বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘সাম্প্রতিক দেশকাল’কে বলেন, ‘এটা আমাদের নজরে এসেছে। মানুষের অভিব্যক্তি প্রকাশের স্বাধীনতায় বাংলা অ্যাকাডেমি হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’