অবিভক্ত ভারতের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়ায় তাঁর জন্ম। বর্তমানে তা পশ্চিম বর্ধমান জেলা। এপার বাংলার সেই ভূমিপুত্র বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামকে এবার বাংলাদেশ দিল জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। শেষমেশ এল ঢাকার তরফে কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা।
বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ইউনুস সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রকের সচিব মহম্মদ আতাউর রহমানের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে। আর তা সকলকে জানানোর জন্য গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কাজী নজরুল ইসলামের ১৯৭২ সালের মে মাসে তাঁর ঢাকায় পা রাখার সময় থেকে ধরে তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনুস সরকার। ফলত বর্ধমানের ভূমিপুত্র কাজী নজরুল ইসলাম যবে ঢাকা গিয়েছিলেন সেই তারিখ থেকে ধরে তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হল।
বাংলা দেশের ‘সময় নিউজ’ এ প্রকাশিত তথ্য বলছে, ১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে সপরিবারে কাজী নজরুল ইসলাম পৌঁছেছিলেন ঢাকায়। সেসময় তাঁর বসবাসের জন্য ঢাকার ধানমান্ডির ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (পুরাতন) সড়কের ৩৩০-বি বাড়িটি বরাদ্দ করা হয়েছিল। উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, দীর্ঘ অসুস্থতার জেরে ২৯ অগস্ট ১৯৭৬ সালে নজরুল ইসলামের মৃত্যু হয়। তাঁর একটি কবিতায় ব্যক্ত করা ইচ্ছা অনুযায়ী, তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটি মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। এর আগে, ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে কবিকে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। 'একুশে পদক', যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় অসামরিক সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ কাজী নজরুল ইসলামকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
১৮৯৯ সালে বর্তমান পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের চুরুলিয়াতে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। কাজী নজরুলের বাবা ছিলেন একজন ইমাম। মা জাহিদা,বাবা কাজী ফকির ও ভাইবোনদের নিয়ে ছিল কাজী নজরুলদের পরিবার। অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশ বিতারণে বিদ্রোহী কবি নজরুলের লেখনি একটা সময় জনমানসে ব্রিটিশ বিরোধিতার আগুন জ্বালিয়েছিল। এরপর ব্রিটিশ আমলে একের পর এক জেলে বন্দি থেকেও তাঁর কলম থেকে ঝড়েছে বিদ্রোহের আগুন। শেষ বয়সে দীর্ঘ অসুস্থতা তাঁকে দুর্বল করে তোলে। তাঁর প্রয়াণের বহু দশক পর এবার বাংলাদেশ সরকার তাঁকে অবশেষে জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিল।