নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন মাওবাদীর মৃত্যু হল। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটে ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর জেলায়। এদিন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের তরফে এই তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়।
শুক্রবারের এই সংঘাত নিয়ে বাস্তার পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এদিন দুপুর ১টা নাগাদ নারায়ণপুর ও দান্তেওয়াড়া জেলার সীমানাবর্তী অংশে বিস্তৃত অবুঝমাড় জঙ্গলে দুই পক্ষের মধ্য়ে গুলির লড়াই শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মাওবাদী দমনের উদ্দেশ্যে এই এলাকায় একটি যৌথ অভিযান শুরু করা হয়। সেই অভিযান চলাকালীনই সংঘাত ঘটে। তথ্য বলছে, গত এপ্রিল মাসের পর থেকে মাওবাদী দমন অভিযানে এটাই নিরাপত্তাবাহিনীর সবথেকে বড় সাফল্য।
গত ১৬ এপ্রিল কাঙ্কের জেলায় চালানো সেই অভিযানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল ২৯ জন মাওবাদীর।
অবুঝমাড়ের এই জঙ্গল ছত্তিশগড় এবং মহারাষ্ট্রের মধ্যে বিস্তৃত। এই এলাকাকে অনেকেই 'অপরিচিত পাহাড়' বলে অবিহিত করেন। কারণ, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানকার প্রায় ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা কেউ কখনও জরিপ করেনি।
যার জেরে এই ঘন জঙ্গল মাওবাদীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সূত্রের দাবি, এখনও এই জঙ্গলের অন্দরের বহু মাওবাদী নেতা গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। সেখানে তাঁদের শিবির রয়েছে।
দান্তেওয়াড়ার পুলিশ সুপার গৌরব রাই জানিয়েছেন, 'গুলির লড়াই এখনও চলছে। এখনও পর্যন্ত ৩০ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। রাত বাড়লে সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। কারণ, এনকাউন্টার এখনও চলছে।'
তিনি আরও জানিয়েছেন, দক্ষিণ অবুঝমাড়ের থুলথুলি ও গেভড়ি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে মাওবাদীদের ঘিরে ফেলা হয়েছে। পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন, জঙ্গলের ভিতরের পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে সেখানেও বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে পুলিশের তরফে জারি করা বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল এবং একটি এসএলআর (সেলফ-লোডিং রাইফেল)-সহ প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, 'ঠিক কত পরিমাণে অস্ত্র ও গোলা, বারুদ উদ্ধার করা হয়েছে, সেটা এখনই বিস্তারিতভাবে বলা সম্ভব নয়। শনিবার নিহত মাওবাদীদের পরিচয় জানার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।'
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গোপন সূত্রে তাঁদের কাছে খবর আসে, চলতি সপ্তাহেই থুলথুলি গ্রামের জঙ্গলে মাওবাদীদের পূর্ব বাস্তার শাখার তরফে একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। তার জেরে সংগঠনের বহু নেতা ও সাধারণ সদস্য সেখানে এসে জড়ো হবেন। এবং ইতিমধ্যেই তাঁরা জঙ্গলে ঢুকতে শুরু করে দিয়েছেন।
পুলিশের অন্য এক আধিকারিক বলেন, 'এই খবর হাতে আসা মাত্র পদক্ষেপ করে পুলিশ প্রশাসন। দান্তেওয়াড়া এবং নারায়ণপুর জেলা থেকে ডিআরজি (ডিসট্রিক্ট রিজার্ভ ফোর্স)-এর দু'টি দল জঙ্গলে পাঠানো হয়। মাওবাদী দমনের উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের জঙ্গলের ভিতর পাঠিয়ে দেওয়া হয়।'
সূত্রের খবর, দুই জেলার তরফে শুরু করা এই যৌথ অভিযানে অন্তত ১ হাজার নিরাপত্তাকর্মী অংশগ্রহণ করছেন। এদিনের ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত এবছর (২০২৪ সালে) শুধুমাত্র বাস্তার অঞ্চলেই নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে ১৯৪ জন মাওবাদীর মৃত্যু হল।