পর্বতারোহণ করতে গিয়ে আবারও মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হতে হল পর্বতারোহীদের। নেপালে এসে প্রাণ হারাতে হল রাশিয়ার পাঁচ পর্বতারোহীকে। মঙ্গলবার নেপাল সরকারের পর্যটন বিভাগের আধিকারিকরা এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন।
সরকারি সূত্রে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা হল - ওই পাঁচজন রুশ পর্বতারোহী নেপালে এসেছিলেন ধৌলাগিরি শৃঙ্গ জয় করতে। উল্লেখ্য, ধৌলাগিরি হল বিশ্বের সপ্তম উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ।
পর্বতারোহণের সময় দু'দিন আগেই ওই রুশ অভিযাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছে নেপালের পর্যটন বিভাগ। অবশেষে এদিন ওই পাঁচজনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হল।
নেপালের পর্যটন বিভাগের তরফে রাকেশ গুরুং এই প্রসঙ্গে জানান, গত ৬ অক্টোবর সন্ধে থেকে ওই দলটির কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁরা সেই সময় হিমালয় পর্বতের উচ্চ অংশে ছিলেন। তাঁরা ৮,১৬৭ মিটার (২৬,৭৯৫ ফুট) উচ্চতা সম্পন্ন ধৌলাগিরি শৃঙ্গ জয় করতে অভিযান শুরু করেছিলেন।
ইতিমধ্যেই ওই পাঁচজন রুশ পর্বতারোহীর দেহের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাকেশ গুরুং।
সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে তিনি জানিয়েছেন, 'হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারী দল নিখোঁজ অভিযাত্রীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিল। তারাই ওই পাঁচজনের দেহ আবিষ্কার করেছে। ওঁরা ৭,৭০০ মিটার উচ্চতা থেকে পড়ে যান।'
রাকেশ গুরুং আরও জানিয়েছেন, ওই রুশ অভিযাত্রীদের দলে আরও একজন সদস্য ছিলেন। তিনি স্থির করেছিলেন, আর শৃঙ্গের দিকে এগোবেন না। তাঁকে ইতিমধ্যেই ওই পার্বত্য এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া ওই অভিযাত্রীকে কাঠমাণ্ডুর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন রাকেশ।
উল্লেখ্য, পর্বতপ্রেমী ও পর্বতারোহীদের বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রে থেকেছে হিমালয়। হিমালয়ের বিভিন্ন শৃঙ্গ জয় করার জন্য প্রতি বছর সারা পৃথিবী থেকে অসংখ্য অভিযাত্রী নেপালে আসেন।
সারা পৃথিবীতে মোট যে ১৪টি সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ রয়েছে, তার মধ্যে আটটিই রয়েছে আমাদের পড়শি দেশ নেপালের ভৌগোলিক সীমার মধ্য়ে। প্রতি বছর ভারত-সহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অভিযাত্রীরা সেই শৃঙ্গগুলি জয় করতে আসেন।
এই ধরনের অভিযানগুলির মাধ্যমে নেপাল সরকারের রোজগারও মন্দ হয় না। তবে, মাঝেমধ্যেই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
তথ্য বলছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন অনেক সংস্থা রয়েছে, যারা পর্বতারোহণ এবং শৃঙ্গ জয়ের উদ্দেশে করা অভিযানগুলি নিয়ে রীতিমতো ব্যবসা করে। এর ফলে বর্তমানে এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে।
অভিযাত্রীরা এখন আগের থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় শৃঙ্গ জয়ের অভিযানে নামলেও সবসময় তাঁদের নিরাপত্তার দিকে সেভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। তার জেরেই একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে পর্বতারোহী ও অভিযাত্রীদের।
প্রসঙ্গত, সর্বপ্রথম ১৯৬০ সালে ধৌলাগিরি পর্বত শৃঙ্গে পৌঁছেছিল সুইৎজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার একটি যৌথ অভিযাত্রী দল। তারপর থেকে গত ৬৪ বছরে অসংখ্য অভিযাত্রী সেখানে পৌঁছেছেন এবং শৃঙ্গ জয়ের স্বাদ নিয়েছেন।