রাতের অন্ধকারে বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ল এক পেল্লায় ময়াল! তাকে দেখে আত্মরাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড় হয় সকলের! শেষমেশ বনকর্মী, পরিবেশকর্মী ও পড়ুয়াদের মিলিত প্রয়াসে ধরা পড়ে সাপটি। সেই ভিডিয়ো ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায়।
ঘটনাটি ঘটেছে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলচর ক্যাম্পাসের ভিতর। গত ১৮ ডিসেম্বর (গত বুধবার)। রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা। গার্লস হস্টেল সংলগ্ন ক্য়াম্পাসের ১ নম্বর ফটকের কাছে প্রথম দেখতে পাওয়া যায় সাপটিকে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বনকর্মীদের দাবি অনুসারে, সাপটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ ফুট! ওজন ১০০ কেজির কাছাকাছি! তথ্য বলছে, এর আগে অসমের বরাক উপত্যকার লোকালয়ে এত বিরাট আকারের বার্মিজ পাইথন কখনও দেখতে পাওয়া যায়নি। স্বভাবতই প্রাণিটিকে দেখার পর ক্যাম্পাসে হুলুস্থূল পড়ে যায়।
সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের তরফে বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পাশাপাশি, যেসব সংগঠন বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করে, এবং যে গবেষকরা সাপ নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁদের কাছেও খবর যায়। সকলে মিলে হাজির হন ঘটনাস্থলে।
সাপটিকে পাকড়াও করার কাজে নেতৃত্ব দেন পরিবেশকর্মী বিশাল সোনার। তাঁকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন ত্রিকাল চক্রবর্তী। হাত লাগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। বেশ কিছুটা কসরতের পর সাপটিকে ধরতে সক্ষম হন উদ্ধারকারীরা। পরে সেটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে এই প্রসঙ্গে বিশাল জানান, 'আমাদের এখানে মাঝেমধ্যেই বার্মিজ পাইথন দেখতে পাওয়া যায়। এমনকী, ক্য়াম্পাসের ভিতরেও এই সাপের দেখা মেলে। এরা সাধারণত খাবারের সন্ধানেই লোকালয়ে আসে। ছোট আকারের ছাগল ও অন্য়ান্য প্রাণী শিকার করে।'
বিশাল আরও বলেন, আসলে এই সাপটি আকারে বিরাট হওয়াতেই তাকে পাকড়াও করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। বিশালের কথায়, 'আমাদের কাছে খবর আসে গার্লস হস্টেল লাগোয়া ১ নম্বর গেটের কাছে বিরাট একটা সাপ দেখা গিয়েছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই। সাপটা এতটা লম্বা ও ভারী ছিল যে ধরতে খুব সমস্যা হচ্ছিল। তবে, ত্রিকাল চক্রবর্তী-সহ বেশ কয়েকজন জুনিয়র রেসকিউয়ার, ক্য়াম্পাসের নিরাপত্তাকর্মী এবং পড়ুয়াদের মিলিত চেষ্টায় সাপটিকে শেষমেশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়।'
এই উদ্ধার অভিযানে বন বিভাগের কর্মীরাও অংশ নেন। বরাক উপত্যকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে আসা ১৩-১৪ জন প্রতিনিধি ছিলেন সেই উদ্ধারকারী দলে। পরবর্তীতে সাপটিকে ক্য়াম্পাস থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বরাইলের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিশালের দাবি, সম্ভবত বরাক উপত্যকার বসত অঞ্চলে এর থেকে ওজনদার ময়াল আর কখনও ধরা পড়েনি। বিশালের মতে, এই সাপ দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ, মানুষকে আক্রমণ করা এদের স্বভাব নয়। এবং এই সাপ খুবই শান্ত প্রকৃতির হয়।
অপর উদ্ধারকারী ত্রিকাল চক্রবর্তী বরাক উপত্যকা বন্যপ্রাণ বিভাগের সঙ্গেও যুক্ত। তিনি সেখানকার 'স্নেক রেসকিউয়ার' পদে রয়েছেন। ত্রিকাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'আমি জঙ্গলের ভিতর এর থেকেও বড় সাপ দেখেছি। কিন্তু, আমার মনে হয়, বরাক উপত্যকায় লোকালয় থেকে আজ পর্যন্ত যত বার্মিজ পাইথন উদ্ধার করা হয়েছে, তার মধ্যে এটি সবথেকে বড়।'
ত্রিকাল জানিয়েছেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের যেখানে বড় বড় গাছ রয়েছে, সেখানেই সাপটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।