জোড়াসাঁকোয় ২৫ বৈশাখ জন্ম হয় রবীন্দ্রনাথের। কিন্তু শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেখানে বহু বছর তাঁর জন্মদিন পালন হয়েছে। ৮১ বছরের জীবদ্দশায় কলকাতার পাশাপাশি শান্তিনিকেতনও তাঁর জন্মোৎসব ঘিরে মেতে উঠত। কিন্তু ২৫ বৈশাখ নয়। শান্তিনিকেতনে একটা সময় কবির জন্মদিবস পালিত হত পয়লা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ শুরুর দিনেই কবির জন্মদিবস পালনের বিশেষ রীতি ছিল শান্তিনিকেতনে। কীভাবে সেই রীতির শুরু হল? নেপথ্যকাহিনিটি অবাক করার মতোই।
কেন পয়লা বৈশাখ
১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রহ্ম বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন শুরু হয়। তারপর থেকেই শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ থাকতেন বছরের নানা সময়। তখন থেকেই ২৫ বৈশাখে কবির জন্মোৎসব পালন করা হত শান্তিনিকেতনে। কিন্তু শান্তিনিকেতন মানেই লাল মাটির দেশ। ফেব্রুয়ারি শেষ হলেই মার্চের শুরু থেকে সেখানে গরম পড়তে শুরু করে। গোটা চৈত্র মাস জুড়ে কাঠফাটা গরম থাকে। স্বাভাবিকভাবে কবির জন্মমাস অর্থাৎ বৈশাখ বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে মে মাসে অসহ্য গরম পড়ত শান্তিনিকেতনে। ওই গরমের মধ্যে জন্মোৎসব পালন করা রীতিমতো কষ্টকর ছিল আশ্রমিকদের কাছে। এই সময় বিকল্প হিসেবেই কবির জন্মদিবস বর্ষবরণের দিন পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, এই ব্যাপারে পূর্ণ সম্মতি ছিল কবিগুরুর।
৮০ তম জন্মদিনও ওই রীতিতে
পয়লা বৈশাখে জন্মদিবস পালন অবশ্য শুরু হয়েছিল কবির শেষ বয়সে। ১৯৩৬ সাল। বাংলা সন ১৩৪২। কবির বয়স তখন ৭৬ বছর। সেই বছর প্রথম পয়লা বৈশাখে শান্তিনিকেতনে পালিত হল রবীন্দ্র জন্মোৎসব। তার পর থেকে প্রতি বছর কবির মৃত্যু পর্যন্ত পয়লা বৈশাখেই পালিত হয়েছিল তাঁর জন্মোৎসব। কবির শেষ জন্মদিন অর্থাৎ ৮০ তম জন্মদিনও ওই রীতি মেনেই পালিত হয়েছিল শান্তিনিকেতনে।
বাঙালির মহামানব!
কবির শেষ জন্মদিন পালিত হয়েছিল ১৯৪১ সালে। তখন বিশ্বভারতীর উপাচার্য ক্ষিতিমোহন সেন। নাতি সৌমেন্দ্রনাথের দাবি রক্ষা করে কবি সেই বছর লিখেছিলেন মানবতার জয়গান, ‘ঐ মহামানব আসে’। সদ্য রচিত ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধও পাঠ করা হয়েছিল জন্মদিবসের অনুষ্ঠানে। পাশে হুইল চেয়ারে বসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাঙালির মহামানব!