শীঘ্রই নিজের আত্মজীবনী প্রকাশ্যে আনতে চলেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা কবীর বেদী। ‘স্টোরিস আই মাস্ট টেল’-এ উঠে আসবে কবীরের পেশাদার ও ব্যক্তিগত জীবনের নানান অধ্যায়। অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবন হামেশাই থেকেছে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে, বিবাহিত কবীর বেদী প্রেমে পড়েছিলেন পারভিন ববির। প্রখ্যাত ওডিসি নৃত্শিল্পী প্রতিমা গুপ্তার সঙ্গে নিজের ভাঙা দাম্পত্য সম্পর্ক, পারভিনের সঙ্গে প্রেম নিয়ে বহু কথা উঠে এসেছে এখানে।
কবীর জানিয়েছেন, ‘আমাদের ওপেন ম্যারেজটা প্রথমে মনে হয়েছিল একটা ভালো ভাবনা। কিন্তু সেটা পরবর্তীকালে আমার অ্যানসাইটির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর জেরে আমাদের সম্পর্কের অন্তরঙ্গতা হারিয়েছিল। আমি সেই ভালোবাসার অনুভূতিটা হারিয়েছিলাম, যে পরিমাণ আদর-যত্ন ভাগ করে নেওয়ার ছিল সেটা হয়ে উঠেনি কোনওদিন। তবে এই সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে আসতেও পারছিলাম না। আমি একাকীত্বে ভুগছিলাম, আমার মনে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল… সেই শূন্যতা পূরণ করেছিল পারভিন। অসম্ভব সুন্দরী এক অভিনেত্রী, যাঁর ধপধপে সাদা রঙ, লম্বা কালো চুল, মোহময়ী চোখ আমায় মুগ্ধ করেছিল। তার আগে পর্যন্ত আমি সবসময় পারভিনকে ড্যানি ডেনজংপার গার্লফ্রেন্ড হিসাবে দেখতাম। পরবর্তীতে ড্যানি বলিউডের সফল ভিলেন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পারভিন, ড্যানির সঙ্গে সম্পর্কে থাকালীন তরতর করে স্টারডমের শিখরে উঠেছিল। ড্যানির সঙ্গে প্রকাশ্যে লিভ ইন,জিনস পরা, জনসম্মখে সিগারেট খাওয়ার জেরে জনতার মনে ওর একটা বোহেমিয়ান ইমেজ তৈরি হয়েছিল’।
কীভাবে পারভিনের প্রেমে পড়লেন কবীর বেদী? সেকথাও আত্মজীবনীতে কলমবন্দি করেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। তিনি লেখেন, ‘ভিতর থেকে একজন রক্ষণশীল গুজরাতি মেয়ে ছিল পারভিন। জুহু গ্যাং-এর বাকি সকলে যখন ‘ফ্রি সেক্স’ নিয়ে কথা বলত, পারভিন কিন্তু সেক্সুয়াল ফিডেলিটি বা যৌনবিশ্বস্ততার আদর্শ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করত। সেই কারণেই আমি ওর প্রেমে পড়ি'।

যদিও পারভিন ববির সঙ্গেও কবীরের সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অভিনেত্রীর মানসিক স্বাস্থ্যর জেরে দুজনের সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। কেরিয়ারের শীর্ষে থাকালীনই পারভিন মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, বলা হয় স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন পারভিন। কবীর লিখেছেন, ‘লোকে ভাবে আমি খুব সৌভাগ্যবান ছিলাম যে এক সুন্দরীর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে আরেক সুন্দরীর সঙ্গে প্রেম করছিলাম। তবে আমিই জানি এর জন্য আমি চরমমূল্য চুকিয়েছি… আমি ভীষণরকমভাবে একজন আবেগপ্রবণ পুরুষ ছিলাম’। যদিও পারভিনের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার জন্য খানিকটা নিজেকেও দায়ী করেছেন কবীর। অভিনেতা লেখেন, ‘পরবর্তী সময়ে,এমনকি আজও যখন একা থাকি আমি ভেবেছি.. পারভিনের অসুস্থ মনের যন্ত্রণা আমাকেও কষ্ট দেয়। তবে সেই সময় আমার দীর্ঘদিনের চাপা বিরক্তি আমাকেও ভেঙে দিয়েছিল। সব দোষ ওর একার নয়, আমিও সমানভাবে দায়ী’।
১৯৭৭ সালে প্রতিমা গুপ্তার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিল কবীর বেদীর। তাঁদের একমাত্র সন্তান পূজা বেদী। অন্যদিকে ২০০৫ সালে মাল্টি অর্গ্যান ফেলিউরের কারণে মৃত্যু হয় পারভিন ববির। মৃত্যুর প্রায় চারদিন পর জুহুর ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় অভিনেত্রীর দেহ। এক সময় যে স্বপ্নসুন্দরী ঢেউ তুলতেন লক্ষ পুরুষ হৃদয়ে তাঁর এই করুণ পরিণতি আজও মেনে নিতে কষ্ট হয়!