দিনহাটা শহর থেকে বেশ খানিকটা যেতে হয়। প্রথমখন্ড ভাগনি গ্রাম। সন্ধ্যে নামতে শুরু করেছে। পাকা রাস্তা থেকে সরু গলিটা গ্রামের ভেতরের দিকে চলে গিয়েছে। মোড়ের মাথায় ছোট্ট মন্দিরে গ্রামের বধূরা পুজো দিচ্ছেন। গত পঞ্চায়েত ভোটে দিনহাটার এই গ্রামই অশান্ত হয়ে উঠেছিল। প্রথমখন্ড ভাগনি এলাকায় ভোটকেন্দ্রে কাছেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন যুবক চিরঞ্জিত কার্জি। ভোটকেন্দ্রে গন্ডগোল হচ্ছে শুনে মাকে আনতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন ওই যুবক। ফের আসছে লোকসভা ভোট। ইতিমধ্য়েই বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে বাংলার বিভিন্ন এলাকায়। দিনহাটার সেই প্রত্যন্ত গ্রামে চিরঞ্জীতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলল HT Bangla।
এবারও ভোট আসছে, তার মা আতঙ্কের প্রহর গুনছেন। HT বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তিনি বলেন বাংলায় ভোটের নামে সন্ত্রাস বন্ধ হোক। তার আক্ষেপ, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে, ছেলেকে এভাবে হারাতে হতো না। শুধু সিভিক দিয়ে ভোট চান না তিনি।
সন্তানহারা মা। বুকের মধ্য়ে জমে থাকা কান্নাটা কিছুতেই যায় না তাঁর। ফের ভোট আসছে। তিনি বলেন, সেদিন ভোট দিতে গিয়েছিলাম। পঞ্চায়েত ভোট ছিল। আচমকাই মুখ ঢাকা কয়েকজন বুথে চলে আসে। এরপর গন্ডগোল শুরু হয়ে গেল। আর সেই সময় আমাকে নিয়ে আসতে গিয়েছিল ছেলে। কিন্তু সেখানেই সব শেষ।
তিনি বলেন, ছেলে কাছেই ছিল। আমি কয়েকজনের সঙ্গে গল্প করছিলাম। দুষ্কৃতীগুলো মুখ বাঁধা অবস্থায় ছিল। আসেই লাঠি নিয়ে বুথের ঘরে ঢুকল। সবাই বলছে এটা কী হল! এটা কী হল! তখন ঘরের ভেতর থেকে সবাইকে বের করে দিল বলল ভোট দিতে হবে না। ছেলে আমাকে একটা বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল। বলল মা এখানে থাকো। আমি আসছি। তখন বোমের শব্দ শোনা যাচ্ছে। খানিক পরে সবাই বলে চিরঞ্জিত কই! কিন্তু কী হয়েছে কেউ কিছু বলছে না।
চিরঞ্জিতের মা বলেন, সেদিন পুলিশ ছিল না। কেন্দ্রীয় বাহিনী সেদিন ছিল না। কেন্দ্রের বাহিনী থাকলে এটা হত না। প্রতিবার ভোট হয়। বাহিনী থাকলে এসব হয় না। ওদের বন্দুক থাকে। সিভিক ছিল সেদিন দুজন। বাহিনী দিলে এমন হত না। আমরা কতদিন ভোট দিয়েছি ওই বুথে। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে আমার ছেলেকে হারাতে হত না।
তিনি বলেন, ভোটের দিনই ছেলেকে হারাতে হয়েছিল। আর কোনওদিন ভোট দিতে যাব না। হাউ হাউ করে কান্না মায়ের। আসলে ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন তিনি এমনটা নয়। কিন্তু তিনি চান ভোটে শান্তি থাকুক। মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিন…