রাজ্য–রাজনীতিতে তোলপাড় করা একটা ঘটনা ঘটেছিল বেশ কিছুদিন আগে। একটি ভিডিয়ো টুইট করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সেখানে দেখা গিয়েছিল, তিনজন আদিবাসী মহিলা দণ্ডি কাটছেন। কারণ তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। আবার তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরছেন। তাই এই দণ্ডি কেটে তাঁরা প্রায়শ্চিত্ত করছেন বলে দাবি করেছিলেন সুকান্ত মজুমদার। আর তাতেই ঢি ঢি পড়ে যায় বালুরঘাটে। কিন্তু চমক দেখা গেল এবার। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন দণ্ডি কাণ্ডে শিরোনামে আসা আদিবাসী গৃহবধূ শিউলি মার্ডি। তিনিই এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তপন পঞ্চায়েত সমিতির আসনে।
এদিকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন গোফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিউলি মার্ডি, মার্টিনা কিস্কু–সহ কয়েকজন মহিলা। ঠিক তার পরেরদিন তাঁরা আবার তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসেন। তখন মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতির চাপে এই তিন মহিলাকে রাস্তায় দণ্ডি কাটতে হয় প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে বলে অভিযোগ। তারপর দেখা যায়, এই তিন আদিবাসী মহিলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই মনোনয়ন পর্ব শেষ হতে দেখা গেল, তপন পঞ্চায়েত সমিতির আসনে এবার চণ্ডীপুর এলাকা থেকে প্রার্থী হয়েছেন শিউলি মার্ডি।
অন্যদিকে এই দক্ষিণ দিনাজপুরের অন্তর্গত বালুরঘাট, তপন, হিলি, কুমারগঞ্জ, গঙ্গারামপুর, বংশীহারী, হরিরামপুর এবং কুশমণ্ডি মিলিয়ে মোট ৮টি পঞ্চায়েত সমিতি আছে। এখানে মোট আসন সংখ্যা ১৮৯টি। তপন পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রার্থী হয়েছেন শিউলি। তবে এই আসনটি তফসিলি উপজাতিভুক্ত মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত বলেই খবর। এই কাজটি করে বিজেপির আদিবাসী তাস খেলাটা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। একদিকে অভিযুক্ত মহিলা নেত্রীকে বালুরঘাট পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার টিকিট দিলেন সেই দণ্ডি কাটা মহিলাকে।
ঠিক কী বলছেন শিউলি? শিউলি মার্ডির বিপরীতে বিজেপির প্রার্থী করেছে সোনামণি মুর্মুকে। আর বামফ্রন্ট শরিক আরএসপি থেকে প্রার্থী করেছে সালনি হেমব্রমকে। তবে এথানে জয় নিয়ে একশো শতাংশ নিশ্চিত শিউলি মার্ডি। তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘দণ্ডি কাটার ঘটনা পুরনো। এখন সেসব ভুলে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। গ্রামীণ এলাকায় আরও উন্নয়ন করাটাই আমার লক্ষ্য। ২০১৩ সালে আমার স্বামী এই ব্লকের গোফানগর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রধান হয়েছিলেন। অনেক উন্নয়ন করেছিলেন। তাঁর দেখানো পথেই এবার আমি এগোতে চাই।’ আগামী ৮ জুলাই রাজ্যজুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ইতিমধ্যেই মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে।