ভারতের 'অপারেশন সিন্ধু' অভিযানের প্রথম ধাপ হিসেবে শুক্রবার রাতে ২৯০ জন ভারতীয় শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি বিশেষ বিমান নিরাপদে দিল্লিতে অবতরণ করেছে। শনিবার রাতে, ইরান থেকে ভারতীয়দের উদ্ধার করে আরও দুটি চার্টার্ড বিমান অবতরণ করবে বলে জানা যাচ্ছে। যার মধ্যে একটি তুর্কমেনিস্তানের আশগাবাত থেকে আসছে।
ভারতীয়দের যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরান থেকে উদ্ধারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, চলমান আঞ্চলিক শত্রুতা সত্ত্বেও ইরান তার আকাশসীমা খুলে দিয়েছে। দিল্লিতে ইরানি দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অফ মিশন মোহাম্মদ জাভেদ হোসেইনি বলেছেন,'ইরানের আকাশসীমা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে, তবে আমরা ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদে উদ্ধারের জন্য সীমিত প্রবেশাধিকার প্রদান করছি।' তিনি আরও বলেন যে আগামী দিনে অতিরিক্ত উড়ানের পরিকল্পনা করা হতে পারে এবং এরই সঙ্গে তিনি, ইরানের তরফে ভারত সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, একটি বিশেষ উদ্ধারকারী বিমান ভারতীয় ভূখণ্ডে অবতরণের সাথে সাথে দিল্লি বিমানবন্দরে 'ভারত মাতা কি জয়' এবং 'হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ' ধ্বনিত হয়। দিল্লিতে আগত শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার ভয়াবহ দিনগুলির কথা বর্ণনা করেন, এবং দ্রুত পদক্ষেপের জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেন। তাঁরা বলছেন, ‘ভারত সরকার আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে’। মাশহাদ থেকে আসা একজন উদ্বাস্তুকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ‘নিজের দেশে পৌঁছালে আপনি কতটা শান্তি বোধ করেন তা আমি প্রকাশ করতে পারব না।’ ইরান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের এমবিবিএস ছাত্রী সেহরিশ রফিক এএনআইকে বলেন, ‘ইরানের পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ ছিল। প্রথমে আমরা আশা করিনি যে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে। সমস্ত কাশ্মীরিরা ভারত সরকারের প্রতি সত্যিই কৃতজ্ঞ।’ বিদেশ মন্ত্রকের মতে, ‘আজ অবতরণকারী ২৯০ জন ভারতীয়ের মধ্যে ১৯০ জন জম্মু ও কাশ্মীরের।’ এই অভিযানের সুবিধার্থে ইরান তার আকাশসীমা খুলে দেওয়ায় MEA (বিদেশ মন্ত্রকের) আরও স্বস্তি প্রকাশ করেছে। MEA-এর সচিব (কনস্যুলার, পাসপোর্ট এবং ভিসা) অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন‘এটি ভারত ও ইরানের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ককে প্রতিফলিত করে,’ । ইরানে বসবাসকারী প্রায় ১০,০০০ ভারতীয় ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করার সাথে সাথে, ভারত এই অঞ্চল থেকে তার নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।
ইরান কী চাইছে ভারতের থেকে?
এদিকে, এই পরিস্থিতিতে ইরান ভারতের থেকে কী চাইছে, তা শুক্রবারই দিল্লিতে স্পষ্ট করেছেন, ইরানের দূতাবাস সংক্রান্ত মিশনের ডেপুটি চিফ মহম্মদ জাভেদ হুসেনি। তিনি বলেন, ইরানের আশা ইজরায়েলের এই হানার নিন্দা করবে ভারত। এদিকে, সদ্য, ইরানের প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তানের সেনা প্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠক হয়। যে ট্রাম্প শিবির থেকে ইরান বেশ কিছু বিরোধিতার বার্তা পেয়েছে সদ্য চলা যুদ্ধ নিয়ে। বেশ কিছু রিপোর্টের দাবি, ইরান সংলগ্ন পাকিস্তানের সেনা ঘাঁটি ব্যবহারের কথা ওয়াশিংটন ভাবছে কি না, তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা। সেই পরিস্থিতিতে ইরানের দূতাবাস সংক্রান্ত মিশনের ডেপুটি চিফ মহম্মদ জাভেদ হুসেনি আশা প্রকাশ করেছেন, কোনও তৃতীয় দেশ ইরানের স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করবে না।