আইপিএলে গত দুবারের অন্যতম সফল দল, কিন্তু এবার শুরু থেকেই ছিল ব্যাকফুটে। আইপিএল অভিযান শেষ করে ৮ নম্বরে, কেন খারাপ পারফরমেন্স গুজরাট টাইটান্সের? একঝলকে কয়েকটি কারণ
আশিস নেহরার সঙ্গে শুভমন গিল। ছবি- এএফপি
২০২৪ আইপিএল অভিযান একদমই ভালো যায়নি গুজরাট টাইটান্সের। গত দুবারের সফলতম দল। ২০২২ সালে আবির্ভাবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল হার্দিক পান্ডিয়ার গুজরাট টাইটান্স। গতবারেরও ফাইনালিস্ট তাঁরা। কিন্তু এবছরের শুরু থেকেই দলের অবস্থা ছিল টালমাটাল। সেই চেনা আগ্রাসী ব্যাপারটাই উধাও ছিল ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকে। ব্যাটারদের মধ্যেও একটা ছন্নছাড়া ভাব, বোলিংও নিয়ন্ত্রণহীন। ফলও যা হওয়ার তাই হয়েছে। শেষ দিকে বৃষ্টির জন্য দুটি ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় তাঁরা ২ পয়েন্ট পেয়েছিল, শেষ পর্যন্ত ১২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকায় অষ্টম স্থানে শেষ করে শুভমন গিলের দল। সেই দুই ম্যাচ খেলা হলে কি হত তা বলাই যাবে না, কারণ যাদের বিরুদ্ধে বৃষ্টির জন্য ম্যাচ ভেস্তে গিয়ে ১ পয়েন্ট করে পেয়েছিল টাইটান্সরা, সেই দুই দলই আইপিএলের ফাইনালে ওঠে। এরই মধ্যে একঝলকে গুজরাটের এবারের ব্যর্থতার কিছু কারণ।
গুজরাট টাইটান্স দলের ম্যানেজমেন্ট এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও দায়ী মন করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ একটা সেট টিম থেকে অধিনায়ককে তাঁরা ছেড়ে দেন। যেখানে ধোনি এবং রোহিতকে ধরে রেখে সিএসকে এবং মুম্বই সাফল্য পেয়েছে, সেখানে নিজেদের ব্যবসা দেখতে দিয়ে বরং কাজটা কঠিন করে ফেলেন তাঁদের ম্যানেজমেন্ট। হার্দিক থাকায় গুজরাট দলে একটা বাঁধন ছিল, যেটা এবারের আইপিএলে একদমই দলে দেখা যায়নি।
দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই ওপেনিং জুটির খারাপ পারফরমেন্স। ঋদ্ধিমান সাহা এবারের আইপিএলে ডাহা ফেল করেন। সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি। শুভমন গিল সেই ফাঁক ঢাকতে গিয়ে নিজে রান করেন কিছুটা ধীর গতিতে। পরিসংখ্যান বলছে প্রথম ৬ ইনিংসে শুভমনের ব্যাট থেকে আসে ২৫৫ রান, আর পরের পাঁচ ম্যাচে আসে ৬৭ রান। এরপর তিনি শতরান করে ফের ফর্মে ফিরলেও, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত গিল করেন ৪২৬ রান।
ওপেনিংয়ে সাই সুদর্শন আসার পর জুটি কিছুটা ক্লিক করলেও পাওয়ার প্লেতে সুদর্শনের স্ট্রাইক রেট অত্যন্ত কম। যদিও এরপর তিনি পরের ১৪ ওভারে তা পুষিয়েও দেন। ১২ ম্যাচে সাই করেছেন ১৪০ স্ট্রাইক রেটে ৫২৭ রান। রানের তালিকায় ওপরের দিকে থাকলেও, স্ট্রাইক রেট তাঁর ছিল মধ্যমানের, বিশেষ করে পাওয়ার প্লেতে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েও।
গুজরাটের এবারে খারাপ পারফরমেন্সের আরও একটা কারণ মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা। ২০২২ সালে ৪৮৭ এবং ২০২৩ সালে হার্দিক পান্ডিয়া করেছিলেন ৩৪৬ রান। নিজে কঠিন সময় ব্যাট করতে নেমে দলকে নেতৃত্ব দিতেন, সেক্ষেত্রে ফিনিশ করার সুযোগ থাকত ডেভিড মিলার, রাহুল তেওয়াতিয়া এবং রশিদ খানের কাছে। এক্ষেত্রে হার্দিকের অভাব মিডল অর্ডারে টের পেয়েছে নেরহার দল। শাহরুখ খান এবং আজমাতুল্লাহ ওমারজাইকে অনেক আশা করে নিলেও তাঁরা সেই মতো খেলতে পারেননি।
এ তো গেল ব্যাটিংয়ের কথা। বোলিংয়ের ক্ষেত্রে গতদুবারের ফাইনালিস্টদের ডুবিয়েছে মহম্মদ শামির চোটের জন্য ছিটকে যাওয়া। গুজরাট দলের হয়ে বিগত কয়েক বছরে অনবদ্য পারফরমেন্স করে আসছিলেন শামি। গতবার শুধু পাওয়ার প্লেতেই নিয়েছিলে ১৭ উইকেট। তাঁর অনুপস্থিতিতে বর্ষিয়াণ মোহিত শর্মা কিছুটা নির্ভরতা দিলেও একার পক্ষে তাঁর কিছুই করা সম্ভব ছিল না। আরেক স্পিনার রশিদ খানও এবারে ছিলেন নিষ্প্রভ। ১২ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন মাত্র ১০ উইকেট। আফগান স্পিনারের এই পারফরমেন্সও যথেষ্ট চাপে ফেলে দেয় গুজরাটকে। ২০১৭ সাল থেকে এত বছর আইপিএলে খেললেও এত কম উইকেট কখনই পাননি রশিদ।
সবার শেষে শুভমন গিলের অধিনায়কত্বেও কিছু খামতি থেকে গেছিল, তা বলাই বাহুল্য। হঠাৎ করে অধিনায়কত্বের চাপ যেমন তাঁর ব্যাটে প্রভাব ফেলেছে, তেমন দলের পারফরমেন্সেও। ফলে আগামী আইপিএলে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে হার্দিককে আরও একবার ফিরিয়ে আনার কথা ভাবতেই পারে টাইটান্সরা, অবশ্য মুম্বই ইন্ডিয়ান্স যদি তাঁকে নিলামে ছাড়তে রাজি হয়।