‘এই ৬০ টা ওভার যেন ওদের নরক মনে হয়’- একবাক্যে যদি বিরাট কোহলির ১৪ বছর টেস্ট কেরিয়ার এবং অধিনায়কত্বের যুগকে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে ওই লাইনটায় সবথেকে ভালো বর্ণনা করতে পারে ভারতের তারকা ক্রিকেটারকে। যিনি টেস্টে 'ইম্পসিবল'-কে ‘আই অ্যাম পসিবল’ করে তোলার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ভারতকে। শুধু তাই নয়, সেই ‘অসম্ভব’ স্বপ্নপূরণ করতে নিজের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন। নিজে করেছিলেন। বাকিদের বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিলেন। ভারতীয় টেস্ট দলে ‘নবজাগরণ’ এনে সেই স্বপ্নপূরণও করিয়েছিলেন বিরাট। আর সেই স্বপ্নপূরণের জন্য ভারতীয় দলকে চাঙ্গা করতে এবং ভারতীয় দলকে এমন কিছু কথা বলেছিলেন বিরাট, যা চিরকালের ক্রিকেটের ইতিহাসে ঠাঁই পেয়ে গিয়েছে।
'৬০ টা ওভার যেন ওদের নরক মনে হয়’
২০২১ সালের লর্ডস টেস্টে যখন পঞ্চম দিনের খেলা শুরু হয়েছিল, তখন ফেভারিট ছিল ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ২৭ রানে পিছিয়ে থাকার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৯ রানে আট উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। সেখান থেকে নবম উইকেটে অপরাজিত ৮৯ রান যুক্ত করেছিলেন মহম্মদ শামি এবং জসপ্রীত বুমরাহ। ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেন শামি। আর অপরাজিত ৩৪ রান করেছিলেন বুমরাহ।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছিল, কারণ ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা বুমরাহকে ঘিরে ধরে স্লেজিং করছিলেন। কারণ প্রথম ইনিংসে জেমস অ্যান্ডারসনকে বাউন্সারের পরে বাউন্সার করেছিলেন বুমরাহ। সেই আবহে ভারত আট উইকেটে ২৯৮ রানে ডিক্লেয়ার করে দিয়েছিল। ২৭২ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল ইংরেজদের। তাঁদের অল-আউট করার জন্য ভারতের হাতে ৬০ ওভার ছিল।
সেই পরিস্থিতিতে ভারতীয় বোলার এবং ফিল্ডাররা যাতে ইংরেজদের টুঁটি চেপে ধরেন, সেজন্য বোলিংয়ে নামার আগে দলের হার্ডলে অধিনায়ক বিরাট বলেছিলেন, ‘কাউকে যদি আমি হাসতে দেখেছি, তাহলে দেখে নেব। এই ৬০ টা ওভার যেন ওদের নরক মনে হয়।’ আর বিরাটের সেই রণমূর্তির মুখে ভারতীয় বোলাররাও আগুন ঝরিয়েছিলেন। ৫১.৫ ওভারেই ১২০ রানে অল-আউট করে দিয়েছিলেন ইংরেজদের। আর ভারত জিতে গিয়েছিল ১৫১ রানে।
আরও পড়ুন: ৫৪ রান থেকে ‘কঠিনতম পিচে’ শতরান- টেস্টে বিরাটের ৬ সেরা ইনিংসের ৪ টিই আসে ২০১৮-তে
'এই দলে নেতিবাচকতাকে স্বাগত জানানো হবে না’
টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে প্রথম ম্যাচ। আর তাতেই নিজের অধিনায়কত্বের ‘স্টাইল’ স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন বিরাট। ২০১৪ সালে অ্যাডিলেড টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্থ ইনিংসে ৩৬৮ রান তাড়া করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঝাঁপিয়েছিলেন। লোয়ার অর্ডারের ভুলে ৪৮ রানে হেরে গিয়েছিল ভারত। আর তারপর বিরাট বলেছিলেন, ‘কোনও সময়ই আমরা একবারও ভাবিনি যে এই রানটা তাড়া করতে পারব না। এই দলের মধ্যে কোনও নেতিবাচকতাকে স্বাগত জানানো হবে না।’
ধোনির 'ক্লাস' নিয়েছিলেন বিরাট
কিন্তু বিরাটের সিদ্ধান্ত নিয়ে দোটানায় ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। নিজের বই 'কোচিং বিয়ন্ড: মাই ডেস উইথ দ্য ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিম'-এ ভারতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর সেই কাহিনী ব্যাখ্যা করে লেখেন, ধোনি বলেছিলেন যে ওই রানটা তাড়া করার ক্ষমতা আছে বিরাটের। কিন্তু 'ওরা (বাকি ব্যাটাররা) এই কাজটা করতে পারবে? অন্য ব্যাটাররাও কি এত ইতিবাচকভাবে খেলতে পারবে এবং টেস্ট ম্যাচের শেষদিনে ৩৬০ রান তাড়া করার চেষ্টা করতে পারবে? কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পুরো দলের শক্তির বিষয়টি আগে বিবেচনা করতে হবে।'
ধোনি যা বলেছিলেন, সেটা বিরাট যে পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছিলেন, তা নয়। কিন্তু বলেছিলেন যে তাঁরা রানটা তাড়া করার চেষ্টা করবেন। শ্রীধরের লেখনী অনুযায়ী, বিরাট বলেছিলেন যে 'যদি আমরা চেষ্টা করি, তবেই তো আমরা জানতে পারব যে আমরা (৩৬৪ রান) তাড়া করতে পারি কিনা। শেষপর্যন্ত রান তাড়া করতে পারা যাক বা না যাক। আমরা আগে কখনও টেস্টের শেষদিনে ৩৬০ রান তাড়া করতে পারিনি, কারণ আগে আমরা কখনও চেষ্টাই করিনি। আমরা একবার চেষ্টা করে দেখি। আমরা যদি চেষ্টাই না করি, তাহলে আমরা কীভাবে জানব যে আমরা কতটা ভালো?'