ছাব্বিশের নির্বাচনকে 'পাখির চোখ' করে আগামী ২৭ তারিখের মেগা বৈঠকে যাওয়ার আগেই দলের 'সেকেন্ড ইন কম্যান্ড'-এর সঙ্গে একান্ত বৈঠক সারলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
টিভি নাইন বাংলা-র অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, রবিবার বিকেলে কালীঘাটের বাড়িতেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সারেন নেত্রী মমতা।
কিন্তু, দুই শীর্ষ নেতা-নেত্রীর এই আলোচনায় কী নিয়ে কথা হল? তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যেমন আগ্রহ রয়েছে, তেমনই আগ্রহ রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরেও। দলীয় সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে কিছু সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, সেই বিষয়গুলি নিয়েই অভিষেকের সঙ্গে এদিনের বৈঠকে আলোচনা করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
ছাব্বিশের লক্ষ্যমাত্রা:
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিল্লি থেকে উড়ে আসা তাবড় বিজেপি নেতারা বাংলায় 'ইস বার দোশো পার'-এর স্লোগান তুললেও বাস্তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। রেকর্ড জনসমর্থন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছিল মমতা ব্রিগেড।
আর, এবার শাসকদলের লক্ষ্য হল - অন্তত ২৫০ আসনে জিতে চতুর্থবারের জন্য বাংলার ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ফের একবার মমতার নেতৃত্বে সরকার গড়া। সেই কাজ যে খুব সহজ নয়, সেটা তৃণমূলের সমস্ত নেতা-কর্মীই জানেন। তার নেপথ্যে আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের মতো ঘটনা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিজেপির হয়ে আরএসএস-এর আগ্রাসী ও একেবারে তৃণমূলস্তরে গিয়ে নিপুণ প্রচার কৌশল।
এই প্রেক্ষাপটে দলে সংগঠন আরও মজবুত না করলে ছাব্বিশের আগে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে তৃণমূল কংগ্রেসকে। অনুমান করা হচ্ছে, এই বিড়ম্বনার পরিস্থিতি যাতে কোনওভাবেই সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে অভিষেকের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা সেরে নিতে পারেন মমতা।
আরজি কর ধর্ষণ ও খুন এবং চিকিৎসক সংগঠন:
আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সামনে আসার পর বাংলা যে গণ-আন্দোলন দেখেছে, তার নজির ইদানীংকালে শুধু বাংলা কেন, সারা ভারতবর্ষেও তেমন নেই! ওয়াকিবহাল মহলই এমন দাবি বারবার করেছে। তবে, প্রবল সরকার-বিরোধিতা সত্ত্বেও সেই আবহে মমতার দল একের পর এক নির্বাচন জিতে দেখিয়েছে।
কিন্তু, যদি কোথাও 'ছাই চাপা আগুন' থেকে যায়? সেই আশঙ্কা তো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বস্তুত, ছাব্বিশের ভোটের আগে আরজি কর কাণ্ডের মতো আর কোনও ঘটনা ঘটুক, তা চাইবে না তৃণমূল নেতৃত্ব। তারা চাইবে না সরকারের সমালোচনায় সরব চিকিৎসক সংগঠনগুলি আরও পোক্ত হোক।
তাই, ইতিমধ্যেই তার 'কাউন্টার' করা তথা সরকারপন্থী সংগঠন গঠনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সরকারি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সরকারি কোনও চিকিৎসকের জন্য কোথাও কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে প্রশাসন কঠোরভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে (শান্তিপুর হাসপাতালের বমি কাণ্ড এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে)।
সংশ্লিষ্ট মহলের অনুমান, রবিবাসরীয় বৈঠকে মমতা-অভিষেকের আলোচনায় এই বিষয়গুলিও উঠতে পারে।
বিজেপি ও আরএসএস-এর মোকাবিলা:
লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে টিম INDIA-এর হতশ্রী দশার সুফল ভরপুর নিচ্ছে বিজেপি তথা গেরুয়া শিবির। মহারাষ্ট্র থেকে দিল্লি - তাদের পারফরম্যান্সে বিরোধী শিবির কার্যত উড়ে গিয়েছে। এমনকী, মণিপুরেও শেষমেশ বিজেপির সরকার বেকায়দায় পড়লেও তার থেকে বিরোধীরা বিশেষ কোনও লাভ করতে পারেনি।
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের দাবি, ভোটের ক্ষেত্রে বিজেপিকে তলায় তলায় 'ফুল সাপোর্ট' দিচ্ছেন আরএসএস-এর ক্যাডাররা। আর, তাই চারিদিকে পদ্ম ফোটার ধুম পড়ে গিয়েছে। এই ধরনের ঘটনা যে বাংলার তৃণমূলকেও বিপাকে ফেলতে পারে, মমতা তা বিলক্ষণ জানেন। আর জানেন বলেই গ্রাম পঞ্চায়েত ধরে ধরে ভুয়ো ভোটার খোঁজার পালা শুরু হয়েছে।
সূত্রের দাবি, রবিবারের বৈঠকে মমতা-অভিষেক এই চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা করে থাকতে পারেন। এছাড়াও, ভোটের আগে দলে যাতে ফের নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া না দেয়, তা নিয়েও তাঁদের মধ্যে কথা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।