তারাতলা রোড ধরে গেলে ব্রেসব্রীজ এবং তারাতলার মাঝখানে একটি সুস্বাদু মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসত নাকে। শহরে আসা নতুনদের কাছে এই গন্ধের উৎস অজানা হলেও দীর্ঘদিন এই রাস্তা হয়ে যারা যাতায়াত করেন, তারা ভালোভাবেই জানা ছিল কোথা থেকে আসত এই সুগন্ধ। আসলে তারাতলায় রয়েছে দেশের অন্যতম বড় খাবার প্রস্তুতকারী সংস্থা ব্রিটানিয়ার ইউনিট। তবে এবার থেকে তারাতলা রোড হয়ে গেলে আর পাওয়া যাবে না সেই সুগন্ধ। কারণ তারাতলা ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ করে দিল ব্রিটানিয়া।
আরও পড়ুন: কলকাতায় এবার হতে চলেছে শপিং ফেস্টিভ্যাল, বিদেশের ধাঁচে উদ্যোগ নিলেন মমতা
উল্লেখ্য, তারাতলায় আগে অনেক কোম্পানি ছিল। একে একে সেগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর এবার বন্ধ হয়ে গেল ব্রিটানিয়ার উৎপাদন। এরফলে কাজ হারালেন বহু মানুষ। অনেক আগেই এই ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ব্রিটানিয়া কর্তৃপক্ষ। এই কারখানায় স্থায়ী কর্মী ছিলেন ১২২ জন এবং অস্থায়ী কর্মী ছিলেন প্রায় ২৫০ জন। ইতিমধ্যেই স্থায়ী কর্মীদের এককালীন ক্ষতিপূরণ দিয়েছে কোম্পানি। তবে অস্থায়ী কর্মীরা সেই ক্ষতিপূরণ পাননি। এই অবস্থায় আগামীকাল অস্থায়ী কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন মালিকপক্ষের সদস্যরা।
তবে তারাতালায় ব্রিটানিয়া উৎপাদন বন্ধ হওয়ার ফলে যেমন বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন তেমনি মন খারাপ প্রতিদিন এই রাস্তা হয়ে যাতায়াতকারী বহু আম জনতার। মইদুল ইসলাম নামে একজন জানান, তিনি প্রতিদিন এই রাস্তা হয়ে যাতায়াত করেন। ব্রিটানিয়ার এই ইউনিটের এই সুগন্ধের সঙ্গে শৈশবকাল থেকেই তিনি পরিচিতি। তিনি বলেন, ’এখন প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সকালবেলাটা ব্রিটানিয়ার এই সুগন্ধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। তবে এত পুরনো একটি কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। আমি শুনে একেবারে হতবাক হয়ে গেছি।’
উল্লেখ্য, দেশের বড় বড় খাদ্য প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম হল ব্রিটানিয়া। বিস্কুট ছাড়াও একাধিক খাদ্যজাত প্রোডাক্ট রয়েছে এই সংস্থার। আর দেশের মধ্যে ব্রিটানিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম মার্কেট অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গে। বছরে এই কোম্পানির লাভ ৯০০ কোটি টাকারও বেশি।
জানা যাচ্ছে, তারাতলায় ব্রিটানিয়ার ইউনিটটি রয়েছে কলকাতা বন্দরের ১১ একর জমির ওপর। ২০১৮ সালেই জমির লিজ আরও ৩০ বছর পর্যন্ত পুনর্নবীকরণ করেছিল কর্তৃপক্ষ। সে সময় বাংলায় আরও ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথাও চিন্তা ভাবনা করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, তার ৬ বছরের মধ্যেই কেন এই ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল তার কারণ স্পষ্ট নয়। যদিও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এর ফলে উৎপাদনে কোনও সমস্যা হবে না।