১১ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের কান্দি এলাকায় এক বিএসএফ জওয়ানের ওপর হামলা চালানো হয়। অভিযোগ পাওয়ার পরও কয়েকদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর অবশেষে সোমবার রাতে দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। কিন্তু জানা গিয়েছে, জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরেই তাদের জামিন মঞ্জুর করেন কান্দি আদালতের বিচারক।গণপিটুনিতে জখম ৩২ বছর বয়সী জওয়ান বিশ্বজিৎ সাহানি বিএসএফের ১৬৯ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের সঙ্গে যুক্ত। বাড়িতে আসার আগে তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারায় মোতায়ন ছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই জওয়ানের পরিবার থাকেন কান্দির কলাবাগান এলাকায়।বিশ্বজিতের ওপর হামলার ঘটনায় সোমবার রাতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সাদ্দাম হোসেন ও হিরণ মিঞাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা গিয়েছে, ধৃত সাদ্দাম হোসেন তৃণমূল পরিচালিত মহালান্দি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য আর কান্দি শহর তৃণমূলের নেতা হিরণ মিঞা।গত শুক্রবার তৃণমূলের কর্মসূচি ‘বঙ্গধ্বনী’–র একটি মিছিল চলার সময় স্থানীয় বাজার থেকে বাইকে করে বাড়ি ফিরছিলেন বিশ্বজিৎ সাহানি। সে সময় মিছিলকে পথ দিতে তাঁর বাইককে থামান তৃণমূল কর্মী–সমর্থকরা। কিন্তু বিশ্বজিৎ অনুরোধ করেন, যাতে তাঁকে যেতে দেওয়া হয়। আর সে সময় বচসা শুরু হয়। পুলিশের কাছে অভিযোগে বিশ্বজিতের পরিবার জানিয়েছে, তাঁকে মারধরের পাশপাশি বাইকেও ভাঙচুর চালায় তৃণমূল কর্মী–সমর্থকরা।ঘটনার পরপই বিশ্বজিৎ সাহানিকে কান্দির সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁেক মুর্শিদাবাদ মেজিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, বিশ্বজিতের বাবা বিশ্বনাথ সাহানি লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলেও তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে কান্দি থানার পুলিশ।এ ঘটনার নিন্দা জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং বিজেপি–র জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ। তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে ওই জওয়ানের সঙ্গে দেখাও করেন। ওই জওয়ানের দাদা রাজেশ সাহানি বলেন, ‘এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে অভিযোগ পাওয়ার পরও তিনদিন চুপচাপ বসেছিল পুলিশ। আমার ভাই এখনও চিকিৎসাধীন। ভাইয়ের নিজেরই হেলমেট দিয়ে ওর মাথায় আঘাত করেছে এক তৃণমূলকর্মী। পাশাপাশি বিশ্বজিৎকে নির্মমভাবে মারধর করেছে ওরা।’ রাজেশ সাহানি আরও জানিয়েছেন যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বাড়িতে ছুটিতে রয়েছেন তাঁর ভাই বিশ্বজিৎ। তাঁর কিছু শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার চিকিৎসাও চলছে।’কান্দি থানার আইসি সুভাষ ঘোষ সোমবার বলেন, ‘সাদ্দাম হোসেন ও হিরণ মিঞার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের স্থানীয় আদালতে হাজির করা হবে। আমরা দুই সপ্তাহের জন্য তাদের হেফাজত চেয়ে বিচারকের কাছে আবেদন জানাব।’ যদিও এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এদিন আদালতে তোলা হলে অভিযুক্ত দু’জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন বিচারক। শুক্রবার ‘বঙ্গধ্বনি’ মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র অপূর্ব সরকার। তিনি এ ব্যাপারে বলেন, ‘প্রশাসন তার দায়িত্ব পালন করছে। এই বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’