মে মাসে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সংগঠনে রদবদল হয়। তবে একমাত্র বাদ রাখা হয় বারাসত সাংগঠনিক জেলা। ওই সাংগঠনিক জেলায় তখন সভাপতি বা চেয়ারম্যানের নাম চূড়ান্ত করা হয়নি। আসলে তখন থেকেই ঘুঁটি সাজানোর কাজ শুরু হয়েছিল। যে বিষয়টি অনেকেরই অজানা ছিল। রাজ্যজুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে সাংগঠনিক রদবদল শুরু হয় ১৬ মে। সেটাই জুন মাস পর্যন্ত চলছে। বিজেপি থেকে ফেরা সব্যসাচী দত্তকে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার রানাঘাটে উপনির্বাচনে দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। এবার সব্যসাচী দত্তকে বারাসত সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তবে তার পিছনে একাধিক কারণ আছে। যা সামনে আসছে।
বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ছিলেন সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। এবারও তাঁকে ওই পদে বহাল রাখা হয়েছে। আর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে এসেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সব্যসাচী দত্ত। এটার প্রথম কারণ হল, সব্যসাচী দত্ত গুডবুকে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু সুজিত বসুর সঙ্গে সব্যসাচীর আদায়–কাঁচকলায় সম্পর্ক। দু’জনকে মেলানোর চেষ্টা বারবার করা হয়েছিল। একসঙ্গে দু’জনকে অনুষ্ঠানেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ফাটল মেরামত হয়নি। এই পরিস্থিতি নিয়ে যদি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নামা হয় তাহলে সল্টলেক–বিধাননগর–রাজারহাট এলাকার ভোটবাক্সে প্রভাব পড়তে পারে। তাই সব্যসাচীকে বারাসতে পাঠানো হল বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ঘোরাঘুরি বন্ধ তিন মাস! কেন এমন সিদ্ধান্ত? বিস্তারিত তথ্য জানাল বন দফতর
বারাসতে সব্যসাচীকে নিয়ে আসার আরও কারণ আছে। সব্যসাচী দত্ত যে দক্ষ সংগঠক সেটা বারবার প্রমাণ করেছেন। ভাঙড়ে পা রেখে সেখানকার পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করে দিয়ে এসেছেন সম্প্রতি। তার উপর সল্টলেক–রাজারহাট–নিউটাউন–বিধাননগরে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সংগঠন মজবুত রেখেছেন। বিজেপিকে দাঁত ফোটাতে দেননি। তার উপর বারাসত বিধানসভায় গত তিনবারের বিধায়ক অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। যাঁর বয়স এখন ৬৯ বছর। আর নভেম্বর মাসেই ৭০ হবে। কদিন আগেই রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা বলেছেন চিরঞ্জিৎ। এই পরিস্থিতিতে বারাসত থেকে বিধানসভায় নতুন কাউকে প্রার্থী করলে তাঁকে জেতাতে দক্ষ সংগঠকের প্রয়োজন। তাই সব্যসাচী দত্তকে নিয়ে আসা হল। আবার অনেকে বলছেন, প্রার্থী হতে পারেন সব্যসাচীই।
আর তিন নম্বর কারণ অবশ্যই সংগঠন। বারাসত জুড়ে সংগঠন দেখতেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এখন তিনি জেল থেকে বেরিয়ে এলেও জেলা চষে বেড়াবার মতো ক্ষমতায় নেই। সুতরাং সংগঠন এখানে দুর্বল হতে পারে। সেটা যাতে না ঘটে তাই নিয়ে আসা হয়েছে সব্যসাচীকে। এখান থেকে প্রার্থী হবেন সব্যসাচী সেটা নাও ঘটতে পারে। বরং রাজারহাট–নিউটাউন থেকে সব্যসাচী দত্তকে প্রার্থী করা অনেক নিরাপদ পদক্ষেপ। কিন্তু যাঁকে প্রার্থী করা হবে তাঁকে সাধারণ মানুষের সামনে নিয়ে এসে গ্রহণযোগ্য করে তোলা এবং সংগঠন মজবুত করে প্রার্থীকে জেতানোর কাজটা করবেন সব্যসাচী। আর তাই বারাসত সাংগঠনিক জেলায় চেয়ারম্যান পদ পেলেন সব্যসাচী। জেলার সভাপতি কাকলি ঘোষদস্তিদার। যাঁর সঙ্গে সব্যসাচীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর।