পূর্ব বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর কেটে গিয়েছে ১০ বছর ৭ মাসেরও বেশি সময়। সেই ঘটনা নিয়ে আবারও একবার সক্রিয় হয়ে উঠল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। জানা গিয়েছে, সেই ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে মুর্শিদাবাদের দুই বাসিন্দাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের একজন পেশায় শিক্ষক তথা কংগ্রেস নেতা এবং অন্যজন টোটোচালক। এহেন তলবে তাঁরা দু'জনই বেশ অবাক হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্য়ে তাঁদের কলকাতায় এনআইএ কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
গোয়েন্দাদের তলব পাওয়া সেই শিক্ষক হলেন আবদুল জব্বার। তিনি মুর্শিদাবাদের সাগরপাড়া থানা এলাকার একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তবে, তাঁর একটি রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে। এলাকার সকলেই তাঁকে কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা হিসাবে চেনেন। এনআইএ তলব নিয়ে তাঁর বক্তব্য হল, 'যে ঘটনার প্রেক্ষিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে, সেই সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে ডাকা হয়েছে যখন, নিশ্চয়ই হাজিরা দেব।'
অন্যদিকে, একই ডাক পেয়েছেন বেলডাঙার বটতলা এলাকায় বাসিন্দা আজিজ। তিনি টোটো চালান। তাঁর একার রোজগারেই পাঁচজনের সংসার চলে। তাঁকে কেন এভাবে তলব করা হল, বুঝতে পারছেন না আজিজ। কলকাতায় আসা-যাওয়ার খরচ কোথা দিয়ে আসবে, সেটাও মাথায় ঢুকছে না তাঁর। তবে, তিনি যে হাজিরা দিতে প্রস্তুত, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
ওই টোটোচালকের কথায়, 'আমাদের অভাবের সংসার। আমার টোটোর উপর নির্ভর করে পাঁচ জনের পেট চলে। কেন আমায় ডাকা হয়েছে, কিছুই জানি না। কলকাতায় যাতায়াতের পয়সাও নেই আমার কাছে। দেখি কী করে যাওয়া যায়।'
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর - দুর্গাপুজোর সময় বর্ধমান শহর লাগোয়া খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। তাতে দুই জঙ্গি নিকেশ হয় এবং একজন গুরুতর জখম হয়। তদন্তে জানা যায়, ওই জঙ্গিরা বাড়িতে বসেই বোমা বাঁধছিল। তখনই বিস্ফোরণ ঘটে যায়। পরবর্তীতে এই ঘটনার সঙ্গে নাম জড়ায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি-র। ঘটনার তদন্তভার যায় এনআইএ-র উপর।
এদিকে, কিছু সময় আগেই অসম এসটিএফ-এর জালে ধরা পড়ে বেশ কয়েকজন। ধৃতদের জেরা করে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের অন্যতম চক্রী, জেএমবি-র সদস্য সাদিক ওরফে তারিকুল ইসলামের নাম সামনে আসে। জানা যায়, জেলে বসেই তারিকুলের কাছ থেকে নাশকতার পাঠ নিয়েছিল মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার বাসিন্দা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য আব্বাস আলি।
এসবের মধ্যেই গত সপ্তাহে দেশবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে হাবিবুর রহমান ও গোলাম কিবরিয়া নামে মুর্শিদাবাদের দুই বাসিন্দাকে ডেকে পাঠায় এনআইএ। আর, এবার ডেকে পাঠানো হল সেই জেলারই আরও দুই বাসিন্দাকে।