আর হাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। রাত পোহালেই সারা রাজ্যে পালিত হবে বড়দিন। তবে ইতিমধ্যেই বড়দিনকে সামনে রেখে উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে কল্লোলিনী কলকাতা শহরে। আর তাতে গা ভাসিয়েছে আট থেকে আশি। বাহারি আলোকসজ্জায় সেজে পার্ক স্ট্রিট, অ্যালেন পার্ক এবং বো–ব্যারাক আলোর রোশনাইয়ে ছেয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে আগুনে পুড়িয়ে বা কোন বৈদ্যুতিক কোন যন্ত্র ব্যবহার না করে ফুটন্ত জলেই নদিয়ার নবদ্বীপে তৈরি হচ্ছে ২৫ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে সুস্বাদু ছানার কেক। ২৫ ডিসেম্বর সকল হাটে বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের, নানা কোম্পানির এবং বেকারির তৈরি কেক। আর সেগুলি সাধারণত তৈরি হয় আগুন পুরিয়ে বা কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মাধ্যমে।
কিন্তু কখনও দেখেছেন ফুটন্ত জলে কেক তৈরি হতে? এবার ২৫ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে নবদ্বীপের এক ব্যবসায়ী আগুনে না পুড়িয়ে ফুটন্ত জলেই ছানা–সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সম্পূর্ণ নিরামিষ কেক তৈরি করে তাক লাগালেন। প্রভু যিশুর জন্মদিনে কেক কেটে দিনটি উদযাপন করার ঐতিহ্য চলে আসছে বহুদিন ধরে। এই উৎসবে বাদ পড়েন না রাধাকৃষ্ণ, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু, গোপাল, বলদেব বা জগন্নাথদেব। ভক্তরা তাঁদের ইষ্টদেবতাকে ছানার বা ক্ষীরের কেক নিবেদন করেন। তাই এই ছানার কেক তৈরি করছেন ব্যবসায়ী তথা প্রস্তুতকারক সৌমেন ঘোষ।
আরও পড়ুন: বড়দিন উপলক্ষ্যে পার্ক স্ট্রিট চত্বরে কড়া নিরাপত্তা, যান নিয়ন্ত্রণ একাধিক রাস্তায়, বিকল্প কী?
কেমন করে তৈরি হয়? প্রস্তুতকারক–ব্যবসায়ী সৌমেন ঘোষ তাঁর ছানার কেকের রেসিপি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই কেক তৈরি করতে বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে বাজার থেকে ফ্রেশ দুধ কিনে এনে সেটিকে আগুনে জ্বাল দিতে হবে। তারপর তা দিয়ে ছানা তৈরি করা হয়। আর সেই ছানাতে পরিমান মতো কাজু, কিসমিস–সহ সামান্য মিষ্টি মিশিয়ে সেটিকে কিছু সময় মেখে রেখে দিতে হবে। সেগুলি নিয়ে প্লাস্টিকের কন্টেইনারে ঘি মাখিয়ে তাতে ছানার মিশ্রন রেখে দিতে হবে। এরপর একটি বড় পাত্রে জল ফুটিয়ে ছানা ভর্তি কন্টেইনার রেখে ৪০–৪৫ মিনিট ভাপে রাখতে হবে। তারপর তৈরি হয়ে যাবে এই ব্যতিক্রমি সুস্বাদু ছানার কেক।’
আর কী জানা যাচ্ছে? নবদ্বীপের মিষ্টির দোকানগুলিতে বা মঠ মন্দিরের দেবতার জন্য নিরামিষ ছানার এবং সম্পূর্ণ ক্ষীরের কেক তৈরি হচ্ছে। নবদ্বীপের অধিকাংশ মন্দিরে নিরামিষ কেক নিয়ে যান ভক্তরা। মন্দিরে ক্ষীরের বা ছানার কেক তৈরি করা হয়। তবে তার সঙ্গে পার্থক্য আছে ব্যবসায়ী সৌমেন ঘোষের ছানার কেক। কারণ বাকিরা সেই ছানার কেক মেশিনে বানান। আর সুমন ঘোষ জল ফুটিয়ে সেই ভাপে ছানার কেক তৈরি করেন। ওই ছানার কেকে চিনি, কাজু, কিসমিস, পেস্তা, বাদাম, মোরব্বা দেওয়া থাকছে। বড়দিনে নিরামিষ ছানার কেকের ভীষণ চাহিদা থাকে। সৌমেন ঘোষের কথায়, ‘এই কেকে কোনও রং, কেমিক্যাল কিছুই ব্যবহার করা হয়নি। চিনিও খুব সামান্য ব্যবহার করা হয়েছে।’