গ্রাম বাংলার মহিলারা আজও অশোক ষষ্ঠী পালন করেন। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের (মেঘের ষষ্ঠী) তিথিতে উপোস করেন তাঁরা। সন্তানদের দীর্ঘায়ু এবং মঙ্গল কামনা করেন অশোক ষষ্ঠীর মাধ্যমে। মায়েদের বিশ্বাস, এই আচার অনুসরণ করে তাঁরা নিজ নিজ সন্তানদের যে কোনও বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবেন, সর্বদা তাঁদের মঙ্গল নিশ্চিত করতে পারবেন।
অশোক ষষ্ঠী পালনের নেপথ্যে কোন গল্প
পুরাণ অনুসারে, অশোক গাছে ভরা বনে এক ঋষি বাস করতেন। একদিন, ফুল তোলার সময়, ঋষি একটি অশোক গাছের নীচে একটি নবজাতক কন্যাকে কাঁদতে দেখেন। তিনি শিশুকন্যাকে আশ্রমে নিয়ে যান এবং পরে ধ্যানের মাধ্যমে জানতে পারেন যে ওই কন্যার জন্ম অভিশাপের ফলে হয়েছে। শাপের ফলে হরিণরূপিণী এক স্ত্রীলোক এই কন্যার মা। এরপর ওই কন্যাকে বড় করতে থাকেন। হরিণীও এসে মেয়েকে দেখে যেতেন মাঝে মাঝে। আর অশোক গাছের নীচে পাওয়া যাওয়ায় মেয়েটির নাম রাখা হয়েছিল অশোকা।
অশোকা এরপর বড় হতে থাকে, তার জন্য স্বামী খুঁজে বের করার সময় আসে। তখন ঋষি সিদ্ধান্ত নেন যে পরের দিন যার সঙ্গে তিনি প্রথম দেখা করবেন তিনিই অশোককে বিয়ে করবেন। পরের দিন সকালে, এক রাজপুত্র ঝড় থেকে রক্ষা পেতে ঋষির কুঁড়েঘরে এসে পৌঁছান। ঋষিনিজের চিন্তা মতো রাজপুত্রকে অশোকাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। রাজপুত্র রাজি হন এবং ঋষি অশোকাকে তাঁর হাতে তুলে দিয়ে বলেন, 'আমি জানি না তুমি কে, আর তুমিও জানো না সে কে, কিন্তু যদি তুমি আমার কথায় তাকে বিয়ে করো, তাহলে তুমি এবং তোমার বাবা উভয়েই খুশি হবে।'
এরপর অশোকাকে নিয়ে রাজপুত্র চলে যাওয়ার আগে, ঋষি অশোকাকে কিছু অশোক ফুলের বীজ দিয়েছিলেন। তিনি তাকে বলেছিলেন যে সে যখন যাবে তখন রাস্তায় এই বীজগুলো যে ছড়িয়ে দিতে দিতে যায়। বীজগুলো রাজবাড়ি অবধি গজিয়ে উঠবে, যা তাকে প্রয়োজনে ঋষির কাছে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এরপর ঋষি অশোকাকে প্রতি বছর চৈত্র মাসে অশোক ষষ্ঠীতে অশোক ফুলগুলো শুকিয়ে খেতে বলেন। এর ফলে, সে জীবনে আর কখনও দুঃখের সম্মুখীন হবে না বলেই আশ্বাস দেন ঋষি। ঋষির সেই অভয়দান, আশ্বাস আজও মায়েদের কানে গমগম করে। সন্তানের মঙ্গলের চিন্তায় গ্রাম বাংলার মায়েরা আজও পালন করেন অশোক ষষ্ঠী।
অশোক ষষ্ঠী কীভাবে পালন করা হয়
অশোক ষষ্ঠী উপোস শুরু করার জন্য, মহিলাদের ছয়টি অশোক ফুলের কুঁড়ি, মুগকলাই (এক ধরণের ডাল) এবং দই (বা কাঁঠালি কলা) প্রয়োজন।এগুলো সংগ্রহ করার পর মহিলারা পুজোয় বসেন।
ষষ্ঠী তিথিতে ফুল এবং খাবার উৎসর্গ করে ব্রত পালন করেন মায়েরা। অশোক ফুলের কুঁড়ি দই বা কাঁঠালি কলার মধ্যে মাখিয়ে খেয়ে থাকেন নিয়ম মতো। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিশ্বাস হল, এই বিশেষ খাবার চিবিয়ে খাওয়া যায় না, দাঁতে ঠেকলেই বিপদ, তাই সরাসরি গিলে ফেলা হয়।
পুজোর পর মুগকালাই খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করা হয়। তারপর এই দিনে ভাত খাওয়া যায় না। তবে লুচি, পরোটা, ফল এবং সবজি খেতে পারেন মহিলারা।