গত ১৮ মাস ধরে তাঁর একটাই ধ্যানজ্ঞান ছিল। মধ্যরাতে তাঁর বাড়ি ঘেঁষে চলে যাওয়া উল্কাটির অবশেষ খুঁজে বের করা। শেষপর্যন্ত মিলল সাফল্য। বেশ বড়সড় পাথরের টুকরোটি খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, এর দাম ৭৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা হতে পারে।
ঘটনাটি ব্রিটেনের নর্থ ওয়েলসের রেক্সহ্যামের। ওই ব্যক্তির নাম টনি হুইল্ডিং। ৩৮ বছরের টনি জানিয়েছেন, বছর দেড়েক আগে একদিন মাঝরাতে তাঁর ঘুম আসছিল না। তাই বাড়ির উঠোনে বেড়িয়ে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছিলেন তিনি। এমন সময়ে হঠাত্ চারপাশ যেন আলো হয়ে গেল। তাঁর বাড়ির খুব কাছ দিয়েই আকাশ দিয়ে একটি আগুনের গোলা ছিটকে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় সেটি কোনদিকে গেল, কোথায় পড়ছে- কিছুই ঠাওর করতে পারেননি।টনি বলেন, 'আমার বাড়ির ছাদ থেকে ১৫-২০ ফুট উপর দিয়ে উল্কাটা বেড়িয়ে যায়। কোনও তেমন আওয়াজও হয়নি। খালি এক রাশ ধোঁয়া।'
কিন্তু এরপরেও তিনি সেটা নিয়েই ভাবতে থাকেন। একটু পড়াশোনা করেই বুঝতে পারেন, সেটি মহাজাগতিক স্পেসিমেন হিসাবে অমূল্য। সেই আগ্রহ থেকেই উল্কাটি বাড়ির আসেপাশে খুঁজতে শুরু করেন।
কিন্তু এলাকা চষে ফেললেও কোনও লাভ হয়নি। কেটে যায় প্রায় দেড় বছর। তখনও হাল ছাড়েননি টনি। তখনই তাঁর মনে হয়, সবই তো দেখলাম, কিন্তু ভুট্টার ক্ষেতগুলো তো খতিয়ে দেখিনি!
আসলে টনির বাড়ির কাছেই কৃষিজমি। ঘটনার সময়ে সেখানে ভুট্টা ভর্তি। ফলে ঢুকে দেখতে পারেননি। কিন্তু এখন ভুট্টার ক্ষেত ফাঁকা। মাটি কুপিয়ে নতুন মরসুমের প্রস্তুতি চলছে। সেখানেই খুঁজতে শুরু করেন টনি।
আর তারপরেই ভুট্টার ক্ষেত থেকে বেশ বড়সড় উল্কার টুকরোটি খুঁজে পান টনি। তিনি জানান, উল্কাটি দেখে বোঝার উপায় ছিল না। সম্পূর্ণ মাটিতে ঢাকা ছিল।
বাড়ি এনে সেটটি সাফ করেন তিনি। দেখেন ১ কিলোরও বেশি ওজন এটির।
এবার? টনি জানালেন, আপাতত তাঁর কাছেই সেটি আছে। তবে বিশেষজ্ঞদের সার্টিফিকেশন করিয়ে নিতে চান তিনি। তার ফলে এটির প্রকৃত বাজার মূল্য জানতে পারবেন।
উল্কা কী এবং কোথা থেকে আসে?
যখন মহাকাশ থেকে কোনও শিলা উচ্চ গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণে তারা জ্বলে ওঠে। এই কারণেই এদের সাধারণত ‘শুটিং স্টার’ বলা হয়।
কখনও কখনও উল্কাগুলি এত উজ্জ্বল হয় যে তারা ‘ফায়ারবল’-এর মতো দেখায়।
বেশিরভাগ উল্কাই ভূপৃষ্ঠ পৌঁছনো পর্যন্ত আস্ত থাকে না। সাধারণত, মূল শিলার ৯৫%-এরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তবে বিরল ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পুড়ে যায় না। আর তখনই তা ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। টনির পাওয়া পাথরটিও তাই।
তবে খুব বিরল বললেও ভুল হবে। প্রতি বছর প্রায় ৪৮.৫ টন উল্কা উপাদান পৃথিবীতে পড়ে।
পৃথিবীতে পাওয়া প্রায় সব উল্কাই বিচ্ছিন্ন গ্রহাণু থেকে আসে।