জয় প্রায় হাতের মুঠোয় চলে আসার পরেও যে ম্যাচ হারা যায়, তা সপ্তাহ খানেক আগেই দেখিয়েছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। সে দিন ঘরের মাঠে ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে দু’গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরেও চার গোল খায় তারা। সেই আতঙ্কের স্মৃতি মনের মধ্যে নিয়েই রবিবার আর এক লড়াইয়ে নামছে লাল-হলুদ শিবির। এ বার বিপক্ষে জামশেদপুর এফসি। খেলাটাও ইস্পাতনগরীতে। ঘরের মাঠে যারা জোড়া গোলে এগিয়ে গিয়েও হারতে পারে, তারা বাইরে গিয়ে কতটা কী করবে, তার আগাম আন্দাজ পাওয়া শুধু কঠিন নয়, অসম্ভবও বটে।
কঠিন চ্যালেঞ্জ লাল-হলুদের
এমন এক হারের পরে যেখানে মাথা তুলে দাঁড়ানোটাই কঠিন, সেখানে ইস্টবেঙ্গল শিবিরকে লড়তে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ সমর্থকদের খুশি ফিরিয়ে আনার জন্য। তাও ভাল যে রবিবার প্রতিপক্ষ এমন এক দল, যারা এ পর্যন্ত ছ’টি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই হেরে লিগ টেবলের নীচের দিকে রয়েছে। এমনকী ইস্টবেঙ্গলেরও নীচে। যারা টানা তিনটি ম্যাচ হেরে রবিবার ঘরের মাঠে লাল-হলুদ বাহিনীর মুখোমুখি হবে জয়ে ফেরার উদ্দেশ্যে। গতবারের লিগশিল্ডজয়ীদের এই অবস্থা দেখে একটাই শিক্ষা পাওয়া যায়, সময় কারও সমান যায় না। ফুটবলে আজ যে রাজা, কাল সে ফকির। তাই ফুটবলে অতীতে কী হয়েছে, তা মনে না রাখাই সবচেয়ে ভাল।
প্রথম ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ৭২ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য রাখার পর ১-৩-এ হারে ইস্টবেঙ্গল। ঘরের মাঠে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে একেবারে শেষে চার মিনিটের স্টপেজ টাইমে এডু বেদিয়ার জয়সূচক গোলে ১-২-এ হারতে হয় তাদের। গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে অন্য রূপে দেখা যায় লাল-হলুদ বাহিনীকে। শুরু থেকেই নর্থইস্ট ইউনাইটেডের ওপর কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের ৩-১-এ হারিয়ে লিগ টেবলে প্রথম পয়েন্ট অর্জন করে তারা।
আরও পড়ুন: শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি পেল না হায়দরাবাদ! ১ গোলে জিতল মোহনবাগান, উঠল ৪ নম্বরে
কিন্তু কলকাতা ডার্বি এবং চেন্নাইয়িন এফসি-র কাছে পরপর দুই ম্যাচে হার তাদের সেই উন্নতিতে রাশ টেনে দেয়। এই দুই ম্যাচের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে মাঠে নেমে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে একেবারে অন্য ইস্টবেঙ্গলকে দেখা যায়। শুরু থেকেই আগ্রাসী ফুটবল খেলে ক্লেটন সিলভা, নওরেম মহেশ, চ্যারিস কিরিয়াকু, সেম্বয় হাওকিপরা।
সে দিন ২৩ বছরের নওরেম মহেশ একক দক্ষতায় যে ভাবে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে ক্লেটন সিলভাকে প্রায় গোল সাজিয়ে দেন, তা অনেক দিন মনে রাখার মতো। সেই গোলেই জিতেই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিল গোটা শিবির। কিন্তু তার পরেই ওড়িশার কাছে অভাবনীয় হারে যে তিমিরে ছিল তারা, সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। সেই খাদ থেকে উঠে আসতে রবিবার জিততেই হবে ইস্টবেঙ্গলকে।
কিন্তু মাঝমাঠে যিনি খেলাটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন এবং আক্রমণ বিভাগকে যিনি নিয়মিত বল সাপ্লাই দিয়ে থাকেন, সেই চ্যারিস কিরিয়াকু এই ম্যাচে সম্ভবত খেলতে পারছেন না। গত ম্যাচে ৫৩ মিনিটের মাথায় কিরিয়াকু বল দখলের লড়াই করতে গিয়ে মাথায় চোট পেয়ে বেরিয়ে যান। তাঁকে স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার পরে অ্যালেক্স লিমা মাঠে নামেন। এই ম্যাচেও হয়তো শুরু থেকে তাঁকেই দেখা যাবে। চোট সারিয়ে মাঠে ফিরতে পারেন ডিফেন্ডার জেরি লালরিনজুয়ালা। গত ম্যাচে তাঁর জায়গায় খেলেছিলেন প্রীতম সিং। এ ছাড়া প্রথম দলে আর কোনও পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
আরও পড়ুন: চোট গুরুতর, ATK MB-কে চাপে ফেলে ISL 2022-23 মরশুম থেকেই ছিটকে যেতে পারেন কাউকো
সেট পিসে কনস্টান্টাইনের দলকে এখনও অনেক উন্নতি করতে হবে। এমনিতে এ পর্যন্ত ১৩ গোল খেয়েছে লাল-হলুদ বাহিনী, যা গোল খাওয়ার দিক থেকে দু’নম্বরে। এর মধ্যে হাফ ডজন গোল তারা খেয়েছে সেট পিস থেকে। আরও কোনও দল সেট পিস থেকে এত গোল খায়নি। এ দিক থেকে তাদের প্রতিপক্ষ জামশেদপুর অনেক সতর্ক। সেটপিসে তারা মাত্র দু’টি গোল খেয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে, বিশেষ করে শেষ ৩০ মিনিটে বেশির ভাগ গোল খেয়েছে ইস্টবেঙ্গল, যার সংখ্যা ন’টি। যদিও গত ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম তিন মিনিটের মধ্যেই দু’গোল হজম করে তারা। বাকি দুটি শেষ ৩০ মিনিটেই।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।