রামনবমীতে এবার বাংলার পাশাপাশি মেতে উঠল ওপার বাংলাও। রিপোর্ট অনুযায়ী, রামনবমী উপলক্ষে বাংলাদেশের ঢাকায় শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। শান্তিপূর্ণ ভাবেই সেই শোভাযাত্রা সম্পন্ন হয়। ঢাকার রামসীতা মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। দয়াগঞ্জ মোড় ঘুরে জয়কালী মন্দির মোড়ে এসে শেষ হয় রামভক্তদের সেই মিছিল। সেই মিছিলে পা মেলান মহিলারাও। উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা দেখা গিয়েছে। তবে সম্প্রতি ব্যাঙ্ককে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনুসের। সেখানেই হিন্দুদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মোদী। এরপর চৈত্র অষ্টমীতে লাঙ্গলবন্দের পূণ্যস্নানে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী। সেখানে তিনি দিয়েছিলেন সম্প্রীতির বার্তা। আর এবার ঢাকায় হল রামনবমীর শোভাযাত্রা। (আরও পড়ুন: কলকাতায় রামভক্তদের গাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার দাবি বিজেপির)
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হিন্দু মহিলার দেহ টুকরো-টুকরো করে কার্টনে ভরে ফেলে আসা হল রাস্তার পাশে
উল্লেখ্য, এর আগে ব্যাঙ্ককে ইউনুসের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মোদী। বৈঠকের পরে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এই নিয়ে মোদী লিখেছিলেন, 'বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের সাথে সাক্ষাৎ করেছি। ভারত বাংলাদেশের সাথে একটি গঠনমূলক ও জনকেন্দ্রিক সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা রোধের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য আমাদের গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।' আর মোদীর সেই বার্তার পরই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজে লাঙ্গলবন্দে গিয়ে হিন্দুদের উদ্দেশে সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছিলেন। এরপর রামনবমীর দিনে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হল ঢাকায়। (আরও পড়ুন: কানপুরে রামনবমীর মিছিলে DJ আটকে 'জুতো খেল' পুলিশ, শোভাযাত্রা 'বয়কট' বহু আয়োজকের)
আরও পড়ুন: বিনা অনুমতিতে পড়শি দেশে রাজ্য পুলিশ, তৈরি হয় কূটনৈতিক টানাপোড়েন
এর আগে ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে ইসলামি সন্ত্রাস এবং বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের জন্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন আমেরিকার তুলসি গ্যাবার্ড। এর জেরে ঘুম উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। বিগত দিনে বাংলাদেশে ক্রমেই বেড়েছে মৌলবাদ। এই নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান বলেছিলেন, 'হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর দীর্ঘকাল ধরে চলা দুর্ভাগ্যজনক নির্যাতন, হত্যা এবং অত্যাচার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুবই উদ্বিগ্ন। ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদীদের হুমকি এবং বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর বিশ্বব্যাপী কার্যকলাপ একটিই আদর্শ এবং লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত। তা হল ইসলামিক খিলাফত।' পরে তুলসির মন্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে পালটা তোপ দেগেছিল ঢাকা।
উল্লেখ্য, হাসিনা বাংলাদেশ ত্যাগ করার পর থেকেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। ২০২৪ সালের অগস্ট থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পরও সেই দেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার থামেনি। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছিল। 'জুলাই বিল্পবের' ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সারজিস আলম চট্টগ্রামে ইসকন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন সম্প্রতি। এই আবহে ভারতের রাস্তাতেও লোক নেমেছিল। বাংলাদেশি মৌলবাদে বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে এখানে। ভারত সরকারও সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বিবৃতি প্রকাশ করে ওপারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।