বুধবার মুম্বইয়ের গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া সংলগ্ন ফেরিঘাট থেকে এলিফ্যান্টা গুহা যাওয়ার সময়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্পিডবোটের ধাক্কায় মাঝ সমুদ্রে ‘নীলকমল’ নামে লঞ্চ ডুবে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। উদ্ধার করা হয়েছে ১০১ জনকে। এই ঘটনায় স্পিডবোট চালকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে এফআইআর রুজু করেছে পুলিশ। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, লঞ্চে কাউকে লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয়নি। পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট থাকলে হয়ত যাত্রীদের বাঁচানো সম্ভব হতো। পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য কোনও নির্দেশও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
তারইমধ্যে এক যাত্রী দাবি করেছেন যে 'শো-অফ' করছিলেন স্পিডবোটের চালক। 'ইঞ্জিনে গোলযোগের' কারণে স্পিডবোটটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে বলে ভারতীয় নৌসেনার তরফে দাবি করা হলেও সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গৌরব গুপ্তা নামে ওই ব্যক্তি দাবি করেছেন যে 'শো-অফ' করছিলেন চালক। যে দৃশ্যের ভিডিয়োও করছিলেন অনেকে। তিনিও ভিডিয়ো করছিলেন। তাঁর কথায়, ‘মনে হচ্ছিল যে তিনি কিছু দেখাচ্ছেন।’ যদিও সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে নৌসেনার তরফে আপাতত কিছু জানানো হয়নি। সেইসঙ্গে কে বোট চালাচ্ছিলেন, সেই পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: সাবমেরিনের ধাক্কায় ডুবে যায় মাছ ধরার নৌকা, সাতদিন পর মিলল ২ মৎস্যজীবীর দেহ
বুধবার দুর্ঘটনার একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, তীব্র গতিতে নৌবাহিনীর একটি স্পিডবোট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে লঞ্চে। এরপর সেটি জলে ডুবে যায়। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজ শুরু হয়। জওহরলাল নেহরু বন্দর থেকে একটি ট্রলার এবং পাইলট বোট প্রথমে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে।
নৌবাহিনী, উপকূলরক্ষী এবং পুলিশ পরে উদ্ধারকাজে যোগ দেয়। চারটি হেলিকপ্টার সহ ১১টি নৌকা, তিনটি কোস্ট গার্ডের জাহাজ এবং তিনটি মেরিন পুলিশ ক্রাফট উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসে। উদ্ধারের পর যাত্রীদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে নৌবাহিনী। পুলিশ স্পিডবোট অপারেটর এবং অন্যদের বিরুদ্ধে গাফিলতির জন্য এফআইআর দায়ের করেছে।
লঞ্চে থাকা যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন মুম্বই, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল এবং রাজস্থান সহ ভারতের বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দা। পাশাপাশি কয়েকজন বিদেশি নাগরিকও ছিলেন। অশোক নামে এক যাত্রী জানিয়েছেন দুর্ঘটনার পর তিনি ১৫ মিনিট ধরে সাঁতরে বেঁচেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, উদ্ধারকারী দল অনেক দেরিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এদিকে, এই ঘটনার পড়ে নৌবাহিনী বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বোট অপারেটরদের একাংশ।
তাদের অভিযোগ, নৌবাহিনীর নৌকাগুলি প্রায়শই লঞ্চের কাছাকাছি বিপজ্জনকভাবে চলাচল করে। তাদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ জানালেও তা করা হয় না। এর পাশাপাশি এই ঘটনার পরেই পুলিশ গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়াতে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ করে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
এদিকে, লঞ্চে লাইফ জ্যাকেট রাখা বাধ্যতামূলক হলেও সেই নির্দেশ পালন করা হয়নি বলে অভিযোগ। এই দুর্ঘটনার পরেই নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশগুলিকে কঠোরভাবে প্রয়োগের উপর জোর দিয়েছে প্রশাসন।