২০০৮ সালে মহারাষ্ট্রের মালেগাঁওতে বিস্ফোরণের ঘটনায় এবার সাক্ষীর বয়ান বদল ঘিরে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মামলার এক সাক্ষী আদালতকে জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী স্কোয়াডের (এটিএস) অফিসাররা তাঁকে এই মামলায় যোগী আদিত্যনাথ থেকে স্বামী অসীমানন্দ সহ একাধিক আরএসএস নেতার নাম বলতে বাধ্য করেছেন। এক্ষেত্রে সাক্ষীকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি আদালতে অভিযোগ করেন।মালেগাঁও বিস্ফোরণের ঘটনায় এপর্যন্ত ২২০ জন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যে সাক্ষীর বয়ান আলোচনায় রয়েছে, তিনি মালেগাঁও বিস্ফোরণের অন্যতম অভিযুক্ত লেফ্টনেন্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিতের সঙ্গে সম্পর্কিত। এক বিশেষ এনআইএ আদালতে তিনি দাবি করেছেন যোগী আদিত্যনাথ সহ আরও চার আরএসএস সদস্যের নাম এই মামলায় তাঁকে বলতে বাধ্য করা হয়েছে। এর নেপথ্যে যোগী আদিত্যনাথকে ফাঁসানোর চক্রান্ত নিয়েও নিজের বক্তব্যে ইঙ্গিত দেন ওই সাক্ষী। এদিকে, মালেগাঁও বিস্ফোরণে পর পর সাক্ষীদের বয়ান বদলের ঘটনায় তদন্তের গতিপ্রকৃতি ঘিরে বহু ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এপর্যন্ত মোট ১৫ জন সাক্ষী এই মামলায় বয়ান বদল করেছেন। এদিকে, বর্তমানে এই সাক্ষীর বয়ান আগের বয়ানের থেকে পাল্টে যাওয়ায় প্রসিকিউশন তাঁকে 'হস্টাইল' ( প্রতিকূল) বলে আখ্যা দিয়েছে।এই সাক্ষীর পরিচিতি নিরাপত্তার কারণে গোপন রাখা হয়েছে। এদিকে, এনআইএর বিশেষ আদালতে এই সাক্ষী জানিয়েছেন, এটিএস অফিসার পরমবীর সিং ( যিনি পরবর্তীকালে মুম্বই পুলিশ কমিশনর হন) এবং আরও এক অফিসার তখন মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাস বিরোধী শাখা এটিএস-এর অংশ ছিলেন। তাঁরাই এই হুমকি দিয়েছেন বলে, বয়ানে জানিয়েছেন ওই সাক্ষী। সাক্ষী বলেন, 'ওঁরা বলেছিলেন, আমাদের গল্প তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। আপনাকে শুধু আমাদের বলে দেওয়া ব্যক্তিদের নাম নিতে হবে। তাঁরা আমাকে হুমকিও দিয়েছিলেন, যদি আমি নামগুলি না নিই , তাহলে আমাকে এর পরিণাম ভুগতে হবে। তাঁরা আমাকে বহুদিন ধরে আটকও করে রেখেছিলেন।' উল্লেখ্য, অভিযুক্ত কর্নেল পুরোহিতের তরফের আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে আদালতে একথা জানান ওই সাক্ষী।সাক্ষী জানিয়েছেন, পাঁচটি নাম তাঁর কাছে দেওয়া হয়েছিল। আর সেই নামগুলি নিজের বয়ানে রাখার জন্য বলা হয়েছিল। সাক্ষীর এই বক্তব্য শুনে বিচারপতি বলেন, 'আপনি চাইলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। আপনি কি এর জন্য পুলিশি নিরাপত্তা চান?' এই সময়ই বিপক্ষের আইনজীবী দাবি করেন যে, যদি সাক্ষী এতদিন ধরে অত্যাচারিতই হয়ে আসছিলেন বা হুমকি পাচ্ছিলেন , তাহলে এতগুলো দিন তিনি কেন কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি? প্রসঙ্গত, এর আগে এই সাক্ষী মহারাষ্ট্র এটিএসকে জানিয়েছেন যে, তিনি অভিনব ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই সংগঠন একটি দক্ষিণপন্থী সংগঠন। যে সংগঠনের বিরুদ্ধে মালেগাঁও বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ওই ব্যক্তি বহুদিন ধরেই কর্নেল পুরোহিতের সঙ্গে সংগঠনের বিভিন্ন কাজ করেছেন বলে জানিয়েছিলেন। আচমকা এই সাক্ষীর বয়ান বদলের ঘটনা ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মালেগাঁও বিস্ফোরণের ঘটনায়।