এক বছর পর বিধানসভা নির্বাচন। ঠিক এক বছর আগেই বিজেপির অন্দরে প্রবল বিদ্রোহের জেরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতকেই পদত্যাগ করতে হল। তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। অনেকে বলছেন, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতীতে রাজ্যে রাজ্যে বিরোধীদের সরকারে ভাঙন ধরিয়ে একের পর এক রাজ্য দখল করতে সফল হয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল। কিন্তু এবার নিজেদের ঘরে, বিজেপি শাসিত রাজ্যেই দলের কোন্দল চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে।জানা গিয়েছে, একঝাঁক বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াতের উপর প্রচণ্ডভাবে ক্ষুব্ধ। ২০১৮ সাল থেকে ক্ষোভ জমা হতে শুরু করে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রচারক থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসা ত্রিবেন্দ্রর সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা তেমন ছিল না। বরং একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের এবং সরকারের বদনাম করেছেন তিনি বলে বিধাযকদের একাংশের অভিযোগ। এমনকী বারবার তাঁর নামে সেই অভিযোগ জমা পড়েছিল জেপি নড্ডা এবং অমিত শাহের কাছে। ফলে চাপ বাড়ছিল ত্রিবেন্দ্রর উপর।সূত্রের খবর, এই মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে বেশ কয়েকজন বিধায়ক কথা বলেছিলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির সঙ্গে। তারপর রাজ্যপাল একটি ছবি টুইট করেছিলেন। যেখানে দেখা যায়, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের ছবি। হঠাৎ সেই ছবি দেওয়ায় বেশ আলোচনা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু তখন কেউ ভাবতে পারেননি রাজ্যপালের সঙ্গে দেবভূমির বিধাযকদের সমীকরণ তৈরি হয়ে গিয়েছে। আসলে এই রাজ্যপালকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করতে চান সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক। তিনি আগেও এখানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।এখন যা পরিস্থিতি তাতে উত্তরাখণ্ড থেকে হরিয়ানা, মসনদ রক্ষা নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে পদ্ম–শিবিরে। কারণ তামিলনাড়ুতে নির্বাচনের ঠিক আগে এনডিএ ছেড়ে দিয়েছে অন্যতম জোটসঙ্গী চিত্রতারকা বিজয়কান্তের দল ডিএমডিকে। তার আগে অসমে গেরুয়া শিবির ছেড়ে কংগ্রেসের মহাজোটে শামিল হয়েছে বোরোল্যান্ড পিপল’স ফ্রন্ট (বিপিএফ)। এবার তামিলনাড়ু এবং হরিয়ানাতেও শরিকি চাপে সঙ্কট বেড়েছে বিজেপির। গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসাবে দেখা দিয়েছে উত্তরাখণ্ড।যদিও এই বিষয়ে দলের বিধায়ক তথা মুখপাত্র মুন্না চৌহান বলেন, ‘এটা একেবারেই ভুল ভাবনা যে, দল এমন কোনও কারণের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছে। বিরোধীরা পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ তোলেনি। আমার মনে হয় দল তাঁর বৃহৎ নেতৃত্বকে জাতীয় স্তরে কাজে লাগাবে বলে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে।’ কিন্তু এই সাফাই অনেকেই মানতে নারাজ। কারণ আপনাকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ কী? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দিল্লির নেতাদেরই জিজ্ঞাসা করুন এর কারণ কী!’ সুতরাং একটা সংঘাতের চেহারা পাওয়া যাচ্ছে স্পষ্টভাবে।দলীয় সূত্রে খবর, বুধবার উত্তরাখণ্ডে বিজেপি পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নাম স্থির হবে। বিদ্রোহ দমন করতে নতুন কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করলে চলবে না। পাশাপাশি উপ মুখ্যমন্ত্রীর পদেও বসাতে হবে বিদ্রোহী বিধায়কদের মধ্যে থেকে কোনও একজনকে। কিন্তু তাতেও সঙ্কট কাটার কোনও লক্ষণ নেই। কারণ, বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীর অনুগামী একঝাঁক বিধায়ক ও মন্ত্রী রয়েছেন। আর তা নিয়েই উদ্বিগ্ন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। এই বিষয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক রমন সিং বলেন, ‘রাওয়াতের সরে যাওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রযেছে। দলের বিভিন্ন স্তরে এই বিষয়ে আলোচনা হয়ে তবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হযেছে।’