কানাডায় 'নির্বাচনী হস্তক্ষেপ'-র ক্ষেত্রে ভারতকে দ্বিতীয় স্থানে রেখে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে, তা খারিজ করে দিল নয়াদিল্লি। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আমরা একটি রিপোর্ট দেখেছি, যেখানে (কানাডার নির্বাচনী ক্ষেত্রে) হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলা হয়েছে। বাস্তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে লাগাতার হস্তক্ষেপ করে চলেছে কানাডা। যা বেআইনি অভিবাসন এবং সংগঠিত অপরাধমূলক কাজকর্মের পরিবেশও তৈরি করেছে। ওই রিপোর্টে ভারতকে নিয়ে যে ভিত্তিহীন কথা বলা হয়েছে, সেটা খারিজ করে দিচ্ছি আমরা। আর আশা করছি, যে সাপোর্ট সিস্টেম বেআইনি অভিবাসনের পথ খুলে দিচ্ছে, সেটাকে ভবিষ্যতে আর তোল্লাই দেওয়া হবে না।'
কানাডার উপরে চূড়ান্ত বিরক্ত নয়াদিল্লি
যে ভাষায় এবং যে দ্রুততার সঙ্গে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে ওই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তা থেকে সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে যে পুরো বিষয়টা নিয়ে কতটা বিরক্ত নয়াদিল্লি। ১৬ মাসের তদন্তের পরে কানাডার নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপরে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ নিয়ে মঙ্গলবার যে রিপোর্ট পেশ করেছে কমিটি, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সেই কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে।
কানাডার কমিটির রিপোর্টে কী কী বলা হয়েছে?
ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, কানাডার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যে বিদেশি শক্তিগুলি হস্তক্ষেপ করে, তার মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। শীর্ষে আছে চিন। আর চিনের মতোই নিজেদের কূটনীতিবিদদের মাধ্যমে কানাডার ভোটপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে থাকে ভারত। আড়াল থেকেও হস্তক্ষেপের কাজটা করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছে কমিটি।
তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই একসঙ্গে ভারত এবং কানাডা একসঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু ভারত মনে করে যে অতটাও গুরুত্ব সহকারে খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদের বিষয়টি বিবেচনা করে না অটোয়া। আর ভারত যে কর্মকাণ্ড চালায়, সেটা মূলত ভারতে বসবাসকারী প্রায় আট লাখ শিখ বাসিন্দাদের জন্য। নয়াদিল্লি ভারত-পন্থী এবং খলিস্তান-বিরোধী ভাবধারা গড়ে তুলতে চায় বলে ওই তদন্ত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
সেই রিপোর্ট পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। যে রিপোর্টের জেরে ভারত এবং কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আরও শৈত্য তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এমনিতেই ২০২৩ সালে খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের ঘটনায় ভারত সরকারের এজেন্টরা যুক্ত থাকতে পারেন যে অভিযোগ তুলেছিলেন কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, তার জেরে নয়াদিল্লি এবং অটোয়ার সম্পর্ক সর্বকালীন তলানিতে ঠেকেছে।
আরও পড়ুন: Canada IRCC Report: গত বছর কানাডার কলেজ থেকে ডুব ২০,০০০ ভারতীয় ছাত্রের, এসেছে বড় রিপোর্ট
নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দার জন্য খলিস্তানি জঙ্গিদের ঠাঁই, অভিযোগ দিল্লির
ভারত বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ট্রুডো যা বলছেন, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। বরং নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ফায়দা লুটতে কানাডা সরকার ভারত-বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত খলিস্তানি জঙ্গিদের ঠাঁই দিচ্ছে। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে কানাডার অভ্যন্তরে ভারত-বিরোধী কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে সরকার চোখ বুজে আছে বলেও স্পষ্টভাবে জানিয়ে এসেছে নয়াদিল্লি।