আব্রাহাম থমাসসশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে পরকীয়াকে শাস্তিযোগ্য করার অনুমতি দেওয়া হোক। সুপ্রিম কোর্টে এমনই আর্জি জানাল কেন্দ্র। এমনিতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় আওতায় পরকীয়া যে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হত, সেটিকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। বুধবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়ের করা সেই আর্জি গ্রহণ করেছে বিচারপতি আরএফ নরিম্যানের নেতৃত্বধীন তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল কেকে ভেনুগোপাল আদালতে জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে শীর্ষ আদালত যে রায় দিয়েছিল, তা সেনা, নৌবাহিনী এবং বায়ুসেনার আইনের আওতায় পরকীয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর আধিকারিকদের শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিন বাহিনীতে এমন নিয়ম আছে যে সেই অনুূযায়ী পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার বিষয়টি সামনে এলে তাঁদের শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। এমনকী তাঁদের কোর্ট-মার্শাল করা যেতে পারে।কেন্দ্রের আবেদনে দাবি করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে আবেদনকারীর কাজের ক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। কারণ কঠিন পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনী আধিকারিকরা কাজ করবেন বলে আশা করা হয়। সেই সময় তাঁদের দীর্ঘদিন পরিবারের থেকে দূরে সীমান্ত বা বিরূপ আবহাওয়া এবং অঞ্চলে তাঁদের মোতায়েন থাকতে হয়। ২০১৮ সালের রায়ের প্রেক্ষিতে যে সশস্ত্র বাহিনীর আধিকারিকরা বাড়ি থেকে দূরে কঠিন পরিস্থিতিতে থাকছেন, তাঁরা সর্বদা উদ্বেগে থাকবেন যে তাঁর পরিবার কোনও অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে পড়েনি তো।অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হবে। কারণ ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে একটি দাবি করা যেতে পারে, যা কিছু সরাসরি করা যাচ্ছে না, তা পরোক্ষভাবে করা যাবে। সওয়ালের প্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দেওয়ায় বিচারপরতি নরিম্যানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারে। তার ভিত্তিতে নোটিস জারি করেছে শীর্ষ আদালত। একইসঙ্গে কেন্দ্রের আবেদন বিবেচনা করার জন্য একটি পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ গঠনের জন্য বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছে তিন সদস্যের বেঞ্চ।২০১৮ সালে জোসেপ সাইন বনাম ভারত সরকারের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তা মহিলা ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের প্রেক্ষিতে দেওয়া হয়েছিল। কারণ সেই ধারায় কোনও মহিলাকে পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। শুধুমাত্র বিবাহিত মহিলার স্বামী তৃতীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ আনতে পারতেন। এরকম ক্ষেত্রে জড়িত মহিলাদের আইনে শাস্তির বিধান দেওয়া হয়নি। সুুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, পরকীয়া কোনও অপরাধ না হলেও তা বিবাহ বিচ্ছেদের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ভারতীয় দণ্ডবিধির সেই আইনে মহিলা এবং পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদের বিষয়টিও তুলে ধরেছে কেন্দ্র। আবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় মতো সশস্ত্র বাহিনীতে মহিলা এবং পুরুষের মতো কোনও ভেদাভেদ করা হয় না। অর্থাৎ পরকীয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলার ক্ষেত্রে য়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা একই প্রক্রিয়া মেনে হলে। একইসঙ্গে সংবিধানের ৩৩ ধারায় নির্দিষ্টভাবে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তাতে সশস্ত্র বাহিনীতে কোনও মৌলিক অধিকার প্রয়োগ রুখতে বা তা সংশোধিত করতে পারে সংসদ।