ইসলামিক নববর্ষ মহরমের প্রথম দিনে পালিত হয়, কারণ এই পবিত্র মাসেই নবি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন বলে বিশ্বাস। কিন্তু মাসের দশম দিন, যা আশুরা নামে পরিচিত, সেদিন কারবালায় নবির নাতি হুসেন ইবনে আলির শাহাদাতের মৃত্যু হয়। তাঁর স্মরণে মুসলমানরা এই দিন শোকপ্রকাশ করেন।
মুহরম শব্দের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ইতিহাস। এই শব্দটির অর্থ ‘অনুমতি নেই’ বা ‘নিষিদ্ধ’। তাই এই দিনে মুসলমানদের যুদ্ধের মতো ক্রিয়াকলাপে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ। এই দিনটি প্রার্থনা এবং আত্মদর্শনের দিন হিসাবেও পালিত হয়।
মহরম হল ইসলামিক চান্দ্র ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। তারপরে সাফার, রাবি-আল-থানি, জুমাদা আল-আউয়াল, জুমাদা আত-থানিয়া, রজব, শাবান, রমাদান, শাওয়াল, জুল-কাদাহ এবং জু আল-হিজ্জাহ মাস আসে। রমজান বা রামাদানের পরে, মহরমকে ইসলামে সবচেয়ে পবিত্র মাস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি চান্দ্র ক্যালেন্ডারের সূচনা করে। তাই এটিকে নতুন বছরের সূচনা হিসাবে ধরা হয়।
ইসলামিক ক্যালেন্ডার চন্দ্র চক্রের উপর ভিত্তি করে চলে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চলে সূর্যের গতির উপর ভিত্তি করে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে একটি মাসে ৩০ বা ৩১ দিন থাকে। চান্দ্র ক্যালেন্ডারে একটি মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ বা ৩০ দিনে হয়।
একটি নতুন মাস শুরু হয় যখন পুরনো মাসের ২৯তম দিনে নতুন চাঁদ দেখা যায়। যদি এটি ২৯ তারিখে দেখা না যায়, তাহলে চলমান মাস ৩০ দিন পূর্ণ হয় এবং পরের দিন একটি নতুন মাস শুরু হয়।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের যেখানে ৩৬৫ দিন থাকে, ইসলামিক ক্যালেন্ডারে ৩৫৪ দিন ১২ মাসে বিভক্ত হয়। এই বছর, ইসলামি নববর্ষকে ১৪৪৬ হিজরি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর অর্থ নবি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর থেকে ১৪৪৬ বছর কেটে গিয়েছে। এই বছর, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, ইরাক, বাহরিন এবং অন্যান্য আরব রাষ্ট্র-সহ মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে মুসলমানরা বুধবার ৭ জুলাই, ২০২৪ তারিখে নতুন ইসলামি বছরের সূচনা পালন করেছেন। এটি ছিল পবিত্র মহররম আল হারাম মাসের প্রথম দিন। তাই, এই দেশগুলিতে অশুরা ১৭ জুলাই, ২০২৪ তারিখে পালন করা হবে।
এই দিনটির ইতিহাস ও তাৎপর্য
১৪৪৬ বছর আগে হজরত মহম্মদ ও তাঁর অনুগামীরা মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশে রওনা হতে বাধ্য হন। ওই দিনটি ছিল মহরমের প্রথম দিন। তাঁকে মক্কায় ইসলামের বার্তা প্রচার করায় বাধা দেওয়া হয়। মহরমের দশম দিনটি অশুরা হিসেবে পালিত হয়, এদিন ইমাম হুসেনের মৃত্যুর শোক পালন করা হয়। ইমাম হুসেন ছিলেন হজরত মহম্মদের পৌত্র এবং হজরৎ আলির পুত্র। ৬৮০ খ্রিষ্টপূর্বে কারবালার যুদ্ধে প্রাণ ত্যাগ করেন।
ইসলামের অন্যান্য উৎসব থেকে মহরমের পৃথক, কারণ এই মাসটি হল শোকজ্ঞাপন ও প্রার্থনার মাস। এ সময় কোনও উৎসব পালিত হয় না। শিয়াদের জন্য এই মাসটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। শিয়ারা এদিন একটি শৃঙ্খল তৈরি করে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকেন। একে ততবীর বা কামা জানি বলা হয়। আবার সুন্নিরা এদিন উপবাস পালন করেন ও ‘ইয়া হুসেন’ অথবা ‘ইয়া আলি’ উচ্চারণ করে।