আজও পশ্চিমবঙ্গের শহর, শহরতলি এলাকায় এবং গ্রামে গঞ্জে এমন অনেক পুজোর চল রয়েছে, যা বহু মানুষের কাছে রয়েছে অজানা। এমনই একটি প্রচলিত পুজো কোন্নগরের শকুন্তলা কালীপুজো। দীর্ঘ ১৩৬ বছর ধরে কোন্নগরের নবগ্রাম এলাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই কালীপুজো।
শকুন্তলা কালীপুজোর ইতিহাস
স্থানীয়দের মতে, ১৮৩৬ সালে কোন্নগরের নবগ্রাম এলাকা ছিল বন জঙ্গলে ঢাকা। এলাকায় মাঝে মাঝেই হানা দিত ডাকাত। প্রতিবছর নাকি বৈশাখ মাসের কৃষ্ণা তৃতীয়া বা তার পরের শনিবার রাতে ওই ডাকাতরা মা কালীকে পুজো করে ডাকাতি করতে যেত। একটি অশ্বত্থ গাছের নিচে ছিল মায়ের বেদি, সেখানেই পড়ে থাকতো রক্তমাখা হাঁড়িকাঠ। যে গাছের তলায় মায়ের পুজো হত, সেই গাছের মধ্যে থাকত শতাধিক শকুন, সেখান থেকেই এই মায়ের নাম হয় শকুন্তলা মা কালী, যা পড়ে লোকমুখে ছড়ায় শকুন্তলা রক্ষাকালী মা নামে।
আরও পড়ুন - ‘জঙ্গি হামলার আগে থেকেই ওখানে…’ পহেলগাঁও নিয়ে বিষ্ফোরক কাশ্মীর ভ্রমণ সংস্থাগুলি
তবে ডাকাতরা তো বটেই, পরবর্তীকালে মায়ের মহিমা নিজের চোখে দেখেন দেবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। মায়ের অপরূপ দৃশ্য দেখার পরেই সেই রূপের আদলে মাটির মূর্তি গড়ে পুজো শুরু হয়। তৈরি হয় মন্দির। প্রতিবছরের মতো এই বছরেও মৃৎশিল্পী বাদল চন্দ্র পাল মায়ের মূর্তি গড়েছেন নিজের হাতে।
চলতি বছর ২৬ এপ্রিল অর্থাৎ বাংলার ১২ বৈশাখ হতে চলেছে মায়ের পুজো। পুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকেই সারা কোন্নগর সেজে ওঠে আলোর সাজে। সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যেই সেরে ফেলা হয় মায়ের পুজো, সূর্যের আলো দেখেন না এই মা। তিনি অসূর্যস্পর্শা।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা গোটা হুগলি জেলার মানুষের বিশ্বাস, মায়ের কাছে কিছু চাইলে মা সেটা পূরণ করেন। মায়ের কাছে চাওয়া হয়েছে কিন্তু তা পূরণ হয়নি কোনওদিন এমন ঘটনা শোনা যায়নি। মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ায় বহু মানুষ দূর থেকে এসে মায়ের মন্দিরে পূজো দিয়ে যান। শুধু তাই নয়, মনষ্কামনা পূর্ণ হাওয়ায় দূর দূর থেকে মানুষ আসেন পাঁঠা বলি দেওয়ার জন্য। বলি দেওয়ার পর হয় যজ্ঞ।
আরও পড়ুন - Optical Illusion: ছবিতে শুধুই বৃদ্ধ দেখছেন? আদতে কিন্তু একজন তরুণীও লুকিয়ে আছে! দেখুন তো খুঁজে পান কি না
প্রতি বছর পুজোর দিন সন্ধ্যে হতেই ভক্তদের কাঁধে চেপে মা আসেন মন্দিরে। দ্বিতীয় প্রহর শেষ হলে পুজো শুরু হয় এবং সূর্যোদয়ের আগেই মায়ের বিসর্জন হয়ে যায়। মহামূল্যবান সোনা এবং রুপোর সাজে সাজানো হয় মাকে। তবে শুধু শকুন্তলা একা নন, ওই একই দিনে আরও বেশ কয়েকটি কালীপুজো হয় কোন্নগর এলাকায়।
প্রসঙ্গত, হাওড়া থেকে ব্যান্ডেলগামী, বর্ধমানগামী অথবা তারকেশ্বরকগামী যে কোনও ট্রেন ধরে কোন্নগর স্টেশনে নামতে হবে। স্টেশন থেকে নেমেই দেখবেন অগণিত ভক্ত হেঁটে যাচ্ছেন মায়ের মন্দিরের উদ্দেশ্যে। স্টেশন থেকে নামমাত্র দূরত্বেই রয়েছে মায়ের মন্দির।