স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হোক বা শুধুমাত্র বন্ধুত্বের সম্পর্ক, প্রতিটি সম্পর্কই বহু পর্যায় অতিক্রম করে। এই সময়ে অনেক উত্থান-পতনও আসে, যার মধ্য দিয়েই কোনো সম্পর্ক তার লক্ষ্যে পৌঁছায়। বিশেষ করে যখন রোমান্টিক সম্পর্কের কথা আসে, তখন এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। কারণ, প্রতিটি প্রেমিকের লক্ষ্য একটাই এবং তা হল তার অংশীদারের সাথে অবিচ্ছেদ্য ভালোবাসা এবং দুজনের একাকার হয়ে যাওয়া।
এখন এটা কোনও বলিউডের ছবি নয় যে দেখতেই সত্যিকারের প্রেম হয়ে যাবে। যেমনটি আমরা আগে জেনেছি, যেকোনো সম্পর্কই বহু পর্যায় অতিক্রম করে এবং প্রতিটি পর্যায় অতিক্রম করার পর আরও গভীর হতে থাকে। তাহলে আজ জেনে নেওয়া যাক কোন কোন পর্যায়গুলি প্রেমের সম্পর্কের মধ্যে আসে। এবং হ্যাঁ, আপনি বর্তমানে কোন পর্যায়ে আছেন তা পরীক্ষা করা ভুলবেন না।
প্রথম পর্যায় হল আকর্ষণের
প্রেমের সম্পর্কের প্রথম পর্যায় হল আকর্ষণ। বলা হয়, ‘প্রথম দেখাতেই প্রেম’। আসলে তা প্রেম নয়, বরং আকর্ষণ। কিন্তু সাধারণত প্রেমের সূচনা এখান থেকেই হয়। যখন আপনি কাউকে দেখেই যেন টানা টানা অনুভব করেন এবং আপনার মন সেই ব্যক্তির সম্পর্কে আরও জানতে চায়। এই পর্যায়কে কিছু মানুষ প্রেম নয়, বরং কামনা (lust) সাথেও যুক্ত করে দেখে। কারণ এখানে আপনি অনেক বেশি জানা বা বোঝার আগেই শুধুমাত্র রূপ-রঙ বা অন্য কোনও ভিত্তিতে শুধুমাত্র পেতে চান। শরীরেও এমন হরমোন তৈরি হয় যা এই আকর্ষণের পর্যায়কে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে।
দ্বিতীয় পর্যায় হল হানিমুনের
প্রেমের সম্পর্কের দ্বিতীয় পর্যায়কে ‘হানিমুন ফেজ’ বলা হয়। এই পর্যায় প্রথম পর্যায় থেকে কিছুটা আলাদা নয়। কারণ এই পর্যায়েও হরমোন চরমে থাকে এবং সবকিছু শুধুমাত্র প্রেমে ডুবে থাকে। সব কাজ ছেড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে ব্যস্ত থাকা, চাঁদ-তারা তুলে আনার কথা বলা এবং পৃথিবীকে প্রেমের শত্রু মনে করা, এসবই এই পর্যায়ে ঘটে। তবে এই পর্যায়ে আপনি একে অপরকে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করেন এবং যেকোনো প্রেমের সম্পর্কের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সম্পর্কের প্রথম কয়েক মাস হানিমুন ফেজেই গণ্য হয়।
হানিমুনের পর আসে ইমোশনাল পর্যায়
প্রেমের তৃতীয় পর্যায় তখন আসে যখন আপনি আপনার অংশীদারের সাথে মানসিকভাবে (ইমোশনালি) আবদ্ধ হতে শুরু করেন। এখন আপনার একে অপরের সুখ-দুঃখের খেয়াল থাকে। এই পর্যায়ে এসেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। আসলে এটাই সেই পর্যায় যখন আপনি সিদ্ধান্ত নেন যে আপনার অংশীদারের সাথে এগিয়ে গিয়ে বিয়ে করবেন কি না। সামগ্রিকভাবে আপনি একে অপরকে ভালোভাবে বুঝতে শুরু করেন। এই পর্যায়ে এসে অবশেষে জানা যায় যে সামনে থাকা ব্যক্তির সাথে সত্যিই আপনার কোনও যোগাযোগ ছিল নাকি এটি শুধুমাত্র আকর্ষণ ছিল।
মেক অর ব্রেক পর্যায়
ইমোশনাল পর্যায়ের পর আসে মেক অর ব্রেক পর্যায়। একে আত্মনির্ভরশীল পর্যায়ও বলা হয়। এটাই সেই পর্যায় যখন আপনি অবশেষে সেই অবস্থানে পৌঁছান যেখানে আপনি পরিপক্কতার সাথে আপনার সম্পর্ক সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই পর্যায়ে আপনি একে অপরের প্রতি সমর্পণ বা প্রতিশ্রুতি পরীক্ষা করেন। সম্পর্কে আসা সমস্যাগুলি মিলেমিশে সমাধান করার ক্ষমতা রাখেন। যদি আপনি এই পর্যায়টি ভালোভাবে পালন করতে পারেন, এর অর্থ হল আপনি এমন একটি সম্পর্কে আছেন যা জীবনভর চালিয়ে যেতে পারেন।
একে অপরের প্রতি আস্থার পর্যায়
এটি প্রেমের শেষ পর্যায়। এই পর্যায়ে পৌঁছানোর সাথে সাথেই দম্পতিরা বেশ পরিপক্ক হয়ে ওঠে এবং তাদের সম্পর্কও। এটি এমন একটি পর্যায় যেখানে আপনি একে অপরকে খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন, একে অপরের ভালো ও খারাপ দিকগুলি সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করেছেন এবং এখন আপনি একে অপরের উপর সম্পূর্ণরূপে আস্থা রাখতে পারেন। এই পর্যায়ে এসে আপনি একে অপরের সাথে থাকার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়ে যান। এখন চাঁদ-তারা তোলার মতো কথা হয় না বরং একে অপরের জীবনের লক্ষ্য, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং একসাথে জীবন উপভোগ করা আপনাদের আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।