স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। পড়াশোনাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই স্কুলে ব্যবহার করা যাবে না স্মার্টফোন। পড়ুয়াদের স্বার্থে বড় সিদ্ধান্ত নিল ক্যালিফোর্নিয়া। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম, নতুন এই বিলে ইতিমধ্যেই স্বাক্ষর করেছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্লাসরুমে মোবাইল নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিল দীর্ঘদিন ধরেই। ২০২৩ সালে ফ্লোরিডা প্রথম রাজ্য হিসাবে, ক্লাসে ফোন নিষিদ্ধ করার পরে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, আমেরিকার আরও অন্যান্য ১৩টি রাজ্য এই বছর স্কুলে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয় শিক্ষকদেরও অবিলম্বে এই নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত ৬০ লক্ষ শিশুকে প্রভাবিত করবে
জুন মাসে, ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেস কাউন্টিতে স্কুল বোর্ড, শ্রেণীকক্ষে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করেছিল। এর দরুণ ক্লাসে ফোন আনা বন্ধ হয় ৪,২৯,০০০ জন পড়ুয়ার। এবার, ক্যালিফোর্নিয়ার এই নিয়মে, প্রায় ৬০ হাজার শিশু স্কুলে স্মার্টফোন আনতে পারবে না।
স্মার্টফোন ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে
প্রসঙ্গত, স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করার একটি বিল রাজ্য বিধানসভায় ৭৬-০ এবং সেনেটে ৩৮-১ ভোটে পাস হয়েছে ইতিমধ্যেই। এই আইনের অধীনে, স্কুল বোর্ডগুলিকে অবশ্যই ২০২৬ সালের ১ জুলাইয়ের মধ্যে, স্কুলে শিক্ষার্থীদের ফোনের ব্যবহার সীমিত বা নিষিদ্ধ করার নিয়ম তৈরি করতে হবে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর এই নিয়মগুলি আপডেট করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে, নিউজম একটি বিবৃতিতে বলেছেন যে আমরা জানি যে স্মার্টফোনের অত্যধিক ব্যবহার উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ায়। এক্ষেত্রে আমাদের হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা আছে। এই নতুন আইন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবিদ, সামাজিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতে ফোকাস করতে সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন: (সরকারি প্রাথমিক স্কুলে বসল মদের আসর, বার ড্যান্সার নিয়ে অশ্লীল নাচ, ভিডিয়ো ভাইরাল বিহারে)
স্মার্টফোনের কারণে বিপর্যস্ত ছাত্রসমাজ
উল্লেখ্য, কোভিড ১৯ ছোটদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা বাড়িয়েছে। সবার হাতেই এখন স্মার্টফোন। অনলাইনে পড়াশোনা, পড়াশোনার থেকে বেশি সিনেমা দেখা, গেম খেলার আসক্তি বাড়িয়েছে। মোবাইল ফোন এবং ট্যাবলেটে ক্লাস করার অভ্যাস, ছোটদের স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ নষ্ট করেছে। করোনার পর, গত দুই বছর ধরে একটানা অফলাইনে ক্লাস হলেও, এখন শিশুরা মোবাইল ফোন নিয়ে ক্লাসরুমে পৌঁছে যাচ্ছে। নোটের বদলে মোবাইলের পিডিএফটাই বেশি সহজলভ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি তো হচ্ছেই। এরই সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোনের কারণে, মানসিক রোগ ও শ্রবণশক্তি হ্রাসের ঝুঁকিতেও রয়েছে তারা। এতে বিচলিত হয়েই আমেরিকার অন্যতম বড় রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া ক্লাসরুমে স্মার্টফোন আনা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ছোটদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ
ছোটদের মধ্যে অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এই কারণে মার্কিন সার্জন জেনারেল বিবেক মূর্তি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে, সতর্কতা লেবেল যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। মেডিকেল জার্নাল যেএএমএ-তে একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করে এও বলেছেন যে কিশোর-কিশোরীরা, যারা দিনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বেশি। একটি গ্যালাপ পোলও দেখিয়েছেন মূর্তি। যেখানে দেখা গিয়েছে যে কিশোর-কিশোরীরা গড় হিসাবে দিনে ৪.৮ ঘন্টা সোশ্যাল মিডিয়া সময় ব্যয় করে।