মঙ্গলবার এসেছে সিবিএসই-র রেজাল্ট। আর এই বছর ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষাও দিয়েছিলেন দর্শকদের আদরের ‘জোনাকি’ অর্থাৎ পারিজাত। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার তরফে অভিনেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে জানালেন যে, ৮২ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন তিনি।
একদিকে শ্যুটিং, আরেকদিকে পরীক্ষার প্রস্তুতি, দুটো সামলানো মোটেও সহজ ছিল না পারিজাতের জন্য। জোনাকি-অভিনেত্রী জানালেন, ‘মিত্তির বাড়ি করতে করতে পরীক্ষা দেওয়া খুব চাপেরই ছিল আসলে। আসলে আমার মিত্তির বাড়ি শুরুই হয়, পরীক্ষার চার মাস আগে। আমি খুব পাজেলড ছিলাম। বাবা-মা বলেছিল আমাকে, বোর্ডের পরীক্ষার চারমাস বাকি, তুই এখন জয়েন করিস না। পরীক্ষা হোক তারপর করিস। তবে আমার গল্পটা এত বালো লাগে, তাই না করতে পারিনি। মা-বাবাকে বলেছিলাম, তুমি আমার উপর ভরসা রাখো, আমি দেখবে ঠিক ভালো রেজাল্ট করেই পাশ করব।’
‘আমার বাবা আসলে অধ্যাপক। বাবার কাছে তাই লেখাপড়াটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এবার বলে তো দিয়েছি, আমার তো এটাই সিরিয়ালে প্রথম কাজ। বুঝতে পারিনি আসলে ঠিক কতটা কঠিন হবে। শ্যুটিং যখন শুরু হয় প্রথম কদিন খুব চাপ থাকে। ব্যাঙ্কিং থাকে না, নতুন চরিত্রকে দাঁড় করাতে হবে, টিআরপির প্রেসার থাকে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল অবধি, রাতে ৩-৪ ঘণ্টাও ঘুমোতে পারতাম না। শ্যুটিং করতাম, বাড়িতে এসে পড়াশোনা করতাম, তারপর এক-দেড় ঘণ্টা ঘুমোতাম, তারপর আবার সেটে চলে যেতাম।’, জানান অভিনেত্রী আরও।
হিউম্যানিটিসের ছাত্রী পারিজাত। এরপর ইংরেজিতে অনার্স ও তারপর মাস্টার্স করার স্বপ্ন দেখেন। বিশ্বাস করেন, লেখাপড়ার ভিত মজবুত হওয়া দরকার। সঙ্গে সাহিত্য নিয়ে জ্ঞান না থাকলেও, বিভিন্ন ধরনের চরিত্রকে গড়ে তোলা অসম্ভব বলেও বিশ্বাস করেন। পারিজাতের মতে, ‘আমার পছন্দের বিষয়ও ইংরেজি। আসলে আমি ভালোবাসি লেখাপড়া করতে। তবে শ্যুটিং করতে করতে পরীক্ষা দেওয়া খুব শক্ত ছিল। এর ক্রেডিট আমি আমার প্রোডাকশনকেও দেব। ওরা সবদিক দিয়ে খেয়াল রেখেছে আমাদের। ওদেরও তো হাত-পা বাধা। নাইট শ্যুট করতেই হবে, আর আমি তো নায়িকা। আমাকে নিয়েই চলছে। কিন্তু বুম্বা আঙ্কেল (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, তিনিই মিত্তিরবাড়ির প্রযোজক) আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করতেন, কী করে সব ঠিকঠাক তো? পরীক্ষা ভালো হবে তো? দেখিস ঠিকঠাক দিস। পরীক্ষা দিয়ে জানাস।’
পারিজাত জানান, পরীক্ষার জন্য কোনো ছুটি নিতে পারেননি। সকালে পরীক্ষা দিতেন, তারপর আসতেন শ্যুটে। টেকনো ইন্ডিয়া পাবলিক স্কুল, কোন্নগরের ছাত্রী তিনি। পরীক্ষা শেষ করে, চারটেয় ঢুকতেন সেটে, স্কুল ড্রেসেই। তারপর ভোর অবধি শট দিয়ে, পরেরদিন আবার পরীক্ষা দিতে যেতেন। শ্যুটের ফাঁকে ফাঁকেই চলত বইয়ে চোখ বোলানো।
‘আসলে আমি তো আগে কখনো সিরিয়াল করিনি। প্রথম প্রথম না ওরকম পাতার পর পাতা ডায়লগ মুখস্থ করাতে আমার জ্বর আসত। আমি যখন ইন্দুবালা করেছি, বা সিনেমা করেছি, ১ মাস আগে থেকে স্ক্রিপ্ট পেয়ে যেতাম। নিজেকে তৈরি করতাম। এখানে তো দিনের দিন স্ক্রিপ্ট পাই। তখন ডায়লগ মুখস্থ করব না পড়াশোনা করব। নিজেকে পাগল পাগল লাগত। ফ্লোরে বসে বসে কাঁদতাম। তখন আদৃত আর সুজিতদা আমাকে শান্ত করত। ওরা ইয়ার্কি ঠাট্টা করে আমার মন ভালো করত। আমি তো কথা বলতেও খুব ভালোবাসি। শ্যুটে ব্রেকে যখন সবাই আড্ডা দিত, আমার মন কাঁদত যে, সবাই মজা করছে, আমি পড়াশোনা করছি। ভাবতাম কবে পরীক্ষাটা শেষ হবে, আমিও আড্ডা দেব। দিতিপ্রিয়াদিকে ফোন করে টিপস নিতাম, ও তো পড়াশোনা আর শ্যুটিং দুটো একসঙ্গে করেছে।’
তবে মেয়ে এত পরিশ্রম, ব্যস্ততার মাঝেও যে ৮০ শতাংশের উপরে ফলাফল করেছে, তাতে খুশি পারিজাতের মা ও বাবা। ভবিষ্যতে কি ইংরেজিকে পেশা করার স্বপ্ন দেখেন অভিনেত্রী? জবাবে ‘জোনাকি’ জানালেন, তাঁর মূল ফোকাস অভিনয়ই। তবে মাস্টার্স কমপ্লিট করারও ইচ্ছে রয়েছে মনে।