বাংলা নিউজ > বায়োস্কোপ > ত্রিদিবলোকে ত্রিদিব ঘোষ। শেষ সাক্ষাৎকার দিয়ে গিয়েছিলেন HT বাংলা-কে…
পরবর্তী খবর

ত্রিদিবলোকে ত্রিদিব ঘোষ। শেষ সাক্ষাৎকার দিয়ে গিয়েছিলেন HT বাংলা-কে…

কিংবদন্তি ত্রিদিব ঘোষ।

 হয়ত এখন ‘মাটির খেলনা গাড়ি ’ গড়ার মহড়ায় ব্যস্ত তিনি অমর্ত্যলোকে! জীবনের শেষ সাক্ষাৎকারে HT বাংলা-কে বলেছিলেন ‘ সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে যাত্রার জন্ম হয়েছিল শূদ্রকের মৃচ্ছকটিক-এর সেই মাটির মঞ্চে। আজও চলছে, যাত্রা শিল্পের মৃত্যু নেই ’। অসম্ভব প্যাশানেট একজন মানুষ ছিলেন ত্রিদিব ঘোষ। রইল শেষ নিবেদন।

এত এত সুপার ডুপার হিট সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, এই সবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রার ভবিষ্যত কতটা সুরক্ষিত?

শূদ্রক একটা নাটক লিখেছিলেন, নাটকটির নাম মৃচ্ছকটিক। রাজা বসন্তসেনাকে নৃত্য পরিবেশনা করার জন্য রাজ দরবারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। বসন্তসেনা তা প্রত্যাখানকরে বলেন, নটরাজ ছাড়া তিনি অন্য কারও সামনে নাচ করবেন না। সেই কাহিনিতে নাচের জন্য যে স্থানটার কথা বলা হয়েছে সেই স্থানটা ছিল মাটি দিয়ে তৈরি করা করা একটি প্ল্যাটফর্ম। 

সেদিনের ওই মাটির স্টেজ বা প্ল্যাটফর্মই হল পৃথিবীর প্রথম যাত্রার মঞ্চ। ওটাই ছিল যাত্রার আতুর ঘর। ইতিহাস অনুযায়ী শূদ্রক জন্মেছিলেন সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে। অতএব সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে শুরু হওয়া যাত্রার ফরম্যাটটা যুগের সঙ্গে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আধুনিকীকরণ হয়ে পরিত হয়েছে আজকের সামাজিক, পৌরাণিক, ঐতিহাসিক ইত্যাদি যাত্রাপালায়। সে যুগে যাহা নৃত্য প্রদর্শন তাহাই আজ গ্রুপ ডান্স!

সিনেমার ইতিহাস তো মোটে একশ বছর। সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আর একশ বছরে অনেক তফাত। তাই তুলনা চলে না। আগে যাত্রার মতো প্রাচীন হোক সিনেমা শিল্প, তারপর তো তুলনার প্রশ্ন!

এই বছরের কথাই বলছি, বর্ধমানে যাত্রা করতে গিয়েছি, প্যান্ডেলে ঢোকার সময় শুনছি, মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে, ‘ আপনারা আর এই লাইনে দাঁড়াবেন না। চেয়ারের টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছে। এবার আপনারা জমির টিকিট কাটুন’। এই শুনতে পাওয়াটা যে কতটা আরামের এবং আনন্দের তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তখনও পালা শুরু হতে এক ঘন্টা বাকি, আশা করাই যায় জমিনের টিকিট গুলিও কিছুক্ষণের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে। অতএব বলাই বাহুল্য, যাত্রাকে শেষ করা যাবে না। একশ বছর আগে যাত্রার দল ছিল হয়ত সাত থেকে আটটা। আজ সেখানে  একশটা দল। এবং প্রত্যেকটা দল কিন্তু শো পাচ্ছে বলেই টিকে রয়েছে। গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে দল গুলি টিকে রয়েছে কেমন করে? 

 

ত্রিদিব ঘোষ। শিল্পী ও শিল্পের কখনও অবসান হয় না।
ত্রিদিব ঘোষ। শিল্পী ও শিল্পের কখনও অবসান হয় না।

শু্নেছি আপনাকে নিয়ে দুই দলের মধ্যে মামলা চলেছিল হাইকোর্টে?

(প্রশ্ন শুনেই টেলিফোনের ওপার থেকে ভেসে এল মঞ্চ সম্রাটের ভুবন কাঁপানো সেই  বিখ্যাত হাসি)  সম্ভবত ৯৩' বা ৯৪' সাল, আমাকে নিয়ে মামলা হয়েছিল হাইকোর্টে। দুই বিখ্যাত দলের মালিকের মধ্যে বিরাট ঝগড়া! কে আমায় নেবে এই নিয়ে। আসলে নট্য কম্পানি আমায় এক বছরের চুক্তি করে দলে নিলেও সেবার ওই দলের স্ক্রিপ্ট আমার পছন্দ হয়নি তাই না করে দিয়েছিলাম। ওঁরাও আমায় আটকান নি। কিছুদিন পর অন্য দলে কন্ট্র্যাক্ট সাইন করি। সেই দলে বীনা দাশগপ্তও ছিলেন। আমাদের পালা সব রেকর্ড ভেঙ্গে সুপার হিট হয়। পালার নাম ‘মা বিক্রির মামলা’। 

এদিকে ওই হিট দেখে নট্য কম্পানির মাথায় হাত! ওঁরা তখন করলেন কি, আমার যে পুরনো চুক্তি পত্রটা হয়েছিল ৯২ সালে নট্য কম্পানির সঙ্গে, সেটা আমি ফেরত নিইনি। ওঁরা করলেন কি,  সেই কাগজটায় ৯২ এর পাশে কায়দা করে ৯৩টাও জুড়ে দিয়েছিলেন। মানেটা দাঁড়াল যে আমি নাট্য কম্পানির সঙ্গে দু'বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ।  হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে চলে গেল সেই মামলা। বিচারপতি ছিলেন শ্যামল সেন। অবশেষে নাট্য কম্পানিই  জিতল।  মালিক পরদিন আনন্দবাজার সংবাদপত্রে বিশাল বিজ্ঞাপণ দিলেন ‘এই বছর ত্রিদিব ঘোষ নাট্য কোম্পানির যাত্রা পরিচালনা ও অভিনয়ের দায়িত্বে থাকবেন’।

আপনার মতে যাত্রার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই?

যাত্রার গ্রহণযোগ্যতা ছিল, আছে, এবং থাকবে।  আজ টেকনোলজি নির্ভর এই জমানায় মানুষ যেখানে মাল্টিপ্লেক্স, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, সেখানে যখন যাত্রা পালা শুরু হয় তখন প্যান্ডেলে দশ হাজার, বারো হাজর দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। সামলাতে পুলিশ ফোর্সের সাহায্য নিতে হয়। অতএব যাত্রার ভবিষ্যত নিয়ে অনশ্চিত হওয়ার কোনও কারণ দেখি না।

 বুকিং দেখলে, টিকিট কাটা দেখলে, মানুষের আবেগ দেখলে একটা কথাই বলতে পারি, আজও যাত্রা যথেষ্ট ভালো জায়গায় রয়েছে। যাত্রার যে বাজার সেখানে বেশ কিছু সিস্টেম রয়েছে। যেমন,  কিছু দল রয়েছে  যাদের শো মানুষ টিকিট কেটে দেখেন। সেখানে প্যান্ডেল করে মাঠ ঘিরে দেওয়া হয়। আবার বেশ কিছু দলের শো মানুষ টিকিট না কেটে দেখেন। সেক্ষেত্রে লোকাল ক্লাব থেকে চাঁদা তুলে সর্বসাধারণের জন্য খোলা মঞ্চে যাত্রা পালার আয়োজন করা হয়। এই পুরো বিষয়টা অরগানাইজাররা ব্যবস্থা করেন। এই দু'ভাবেই পুরো সিজন সব দলগুলিই কম বেশি কাজ পেয়ে যায়, রোজগারও হয়। কেউ বসে থাকে না। 

যাত্রার ক্ষেত্রে কখনও কারও পেমেন্ট আটকে রাখা হয় না। অসম্ভব ডিসিপ্লিন  মেনে কাজ চলে, একটা দলে প্রত্যেকের ভূমিকা সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন,  একজন আর্টিস্ট যদি একলক্ষ টাকা পেমেন্ট নেন তাহলে পঞ্চাশ হাজার তিনি অগ্রিম নিয়ে থাকেন। শো শুরুর সময় ওই পঞ্চাশ হাজার টাকাটা রিড্যাক্ট হয়ে তার রেমুনারেশন মাসে ভাগ করা হবে। অসম্ভব ডিসিপ্লিন মেনে চলা হয় বলেই আজও অত গুলো মানুষ নিয়ে, অত বড় প্রডাকশন টিম নিয়ে আমরা কাজ করে যেতে পারছি।

বসন্তসেনা ও চারুদত্ত। মৃচ্ছকটিক অবলম্বনে বলিউডের ছবি ‘’উৎসব'' এর দৃশ্য। 
বসন্তসেনা ও চারুদত্ত। মৃচ্ছকটিক অবলম্বনে বলিউডের ছবি ‘’উৎসব'' এর দৃশ্য। 

যাত্রায় ফিল্ম স্টারদের কেন নেওয়া হয়? কেবলমাত্র যাত্রা শিল্পীরা কি সাফল্য আনতে পারেন না?

সিনেমায় অভিনয় করা অভ্যেস যাঁদের, তাঁদের অনুরোধ করব, যে পুজোয় যে মন্ত্র লাগে সেটা আগে জেনে তারপর  আসুন। না জেনে আসবেন না দয়া করে।  কালি পুজো আর লক্ষ্মী পুজোর মন্ত্র এক নয়।  না জানার ফলে অনেক সর্বনাশ হয়েছে যাত্রা শিল্পের। থিয়েটারেরও কম সর্বনাশ হয় নি। আমাদের নিজের একটি থিয়েটার দল রয়েছে, নাম ‘রেনবো থিয়াটার’, তাই খুব কাছের থেকে সমস্যাটা জানি।

 কয়েক বছর আগের কথা, যে কমার্শিয়াল থিয়েটারের শো হাউস ফুল হত সেই থিয়াটার দল সিনেমার কোনও স্টারকে নিয়ে তাঁদের শো করতে গিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে সুপার ফ্লপ প্রমাণিত হয়েছে। আমি প্রডিউসারকে আত্মহত্যা করতেও দেখিছি। ‘বিশ্বরূপার’ প্রডাকশন করে শুক্লা বন্দোপাধ্যায় আত্মহত্যা করেন, এ তো সকলেরই জানা। যাত্রার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে, সিনেমার স্টার (নাম না করে বলছি) নিয়ে পালা করতে গিয়ে টাকা পাননি প্রডিউসার ফটিক মাইতি, পরে আত্মহত্যা করেন। খুবই দূর্ভাগ্যজনক। 

আমি মনে করি, আমি এমন একজন মালিকের কাছে যাব না এবং মালিককে এমন পথ দেখাব না, যার জন্য তাঁকে সুইসাইড করতে হবে।

আজ যদি অমিতাভ বচ্চন কলকাতায় আসেন আমরা তাঁকে দেখার জন্য ছুটে গিয়ে ভিড় করব। তেমনই গ্রাম বাংলায় অডিয়েন্সরা বাংলা সিনেমার চেনা মুখ দেখার জন্য যাত্রার শোয়ের মাঠে ভিড় জমান। পাবলিক সিনেমার স্টারদের যাত্রা মঞ্চে দেখতে চান এটা ঠিক। সেটা অভিনয়ের জন্য নয়, অডিয়েন্স ওই চেনা মুখটা কাছের থেকে দেখতে চান বলেই ফিল্ম স্টাররা যাত্রায় সুযোগ পান। কিন্তু বেশি দিন সেই অভিনেতা তাঁর চরিত্রের ভার টানতে পারেন না। আমি সবার কথা বলছি না, অল্প সংখ্য কিছু মহান শিল্পী রয়েছেন যাঁরা যে কোনও ক্ষেত্রেই রাজা। কিন্তু যাঁরা শুধুমাত্র সিজনের সময় যাত্রায় টাকা কামাতে আসেন তাঁরা আসলে যাত্রার বিরাট ক্ষতি করছেন। সিনেমায় যে রোজগারটা তাঁরা করেন তাতে এত বিলাসবহুল জীবন মেইনটেন করা যায় না। কেবল মাত্র পয়সার জন্য যাত্রা শিল্প ও শিল্পীদের ক্ষতি করছেন সিনেমার আর্টিস্টরা। অতএব আজকের যাত্রার মান নিয়ে একটা বিরাট প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রথিত যাত্রা শিল্পী ছাড়া অন্য শিল্পীরা যাত্রার মান ধরে রাখতে পারছেন না। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাও কিন্তু সত্যি।

আগামী প্রজন্ম যাত্রা ভালোবেসে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে আসবে বলে মনে করেন?

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রার স্টাইলাইজেশন পাল্টাছে, এখন আর যাত্রা কিন্তু সেই লাউড অভিনয়, বা প্রচুর বাজনা বাজছে এমন নয়। টেকনোলজির অবদান এবং প্র্যাক্টিস এই দুইয়ে মিলে অনেকটা বদলে গিয়েছে যাত্রার চিত্র। আমি যে ভাবে তোমার সঙ্গে ফোনে কথা বলছি ঠিক সেই ভাবেই যাত্রায় সংলাপ বলি, কোনও আলাদা কন্ঠস্বরে নয়।

 যাঁরা আমার সঙ্গে কাজ করে তাঁরা কাজের পর বলে, আমরা আপনার কাছে শিখলাম। কারণ আমি টেকনিক ফলো করি। এখন অনেক উন্নত মাইক্রোফোন এসে গিয়েছে, তাতে খুব সুন্দর শব্দ কন্ট্রোল হয়।  যখন রিহার্সাল হবে তখন কোনও ভাবেই মাইক্রোফোনের কাছে দাঁড়িয়ে সংলাপ বলা চলবে না। মাইকের দিকে তাকানোও চলবে না। তাহলে মনে হবে অতি অভিনয়। ঠিক যে ভাবে এখন তোমার সঙ্গে কথা বলছি, এই ভলিউমে সাবলীল ভাবে কথা বলে যেতে হবে। সব জিনিসটাই কিন্তু মাপা। কতটা পা যাব, কোনদিকে তাকাব, সবটাই প্র্যাক্টিস। চোখ বাঁধা থাকলেও যেন অঙ্কটা ভুল না হয়। তবেই পূর্ণতা পাবে তোমার অভিনয়। এমন অনেক খুটিনাটি বিষয় রয়েছে যা আমি চাই আগামী প্রজন্ম মন দিয়ে শিখুক।

রাজা শূদ্রকের  মৃচ্ছকটিক।
রাজা শূদ্রকের  মৃচ্ছকটিক।

 থিয়েটারের ক্ষেত্রে এই সময়টা কেমন?

 থিয়েটারও কিন্তু ভালো নেই। আমি এখনও রেগুলার থিয়েটার দেখি। দু, একটা দলের শো ছাড়া, হলে গিয়ে দেখি লোকজন খুব কম। আমাকে কেউ পাশ দিলে নিই না। টিকিট কেটে দেখতে যাই। এবং পাঠকদের অনুরোধ করব, পাশ না নিয়ে টিকিট কেটে থিয়েটার দেখুন। আপনার ওই একশ বা দু'শো টাকাটা দলের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। টাকা উঠলে তবেই তো পরবর্তী প্রডাকশনটা মঞ্চস্থ করা যাবে।

আগে থিয়েটার থেকে ভালো অভিনয় করে এমন ছেলে মেয়েদের বেছে নিয়ে যেতেন সিনেমার প্রডিউসার, পরিচালকরা। আর এখন ছেলে মেয়েরা থিয়েটার করতে আসে কারণ ওখান থেকে যদি সিনেমা, সিরিয়ালে সুযোগ পাওয়া যায় এই ভেবে। যাত্রাতেও তাই, বাজারে চাকরি নেই চলে এল যাত্রা করতে! শ্রদ্ধা, ভালোবাসা কোনওটাই নেই! এভাবে হয় না। আবার অ্যাক্টিং স্কুলে গিয়ে, প্রচুর পয়সা খরচা করে পোর্টফলিও শুট করে, বা ব্যাকরণ মুখস্থ করে কোনও লাভ নেই। ভেতরে যদি কিছু না থাকে, তাহলে অভিনেতা হওয়া যায় না।পার্ফর্মিং আর্ট এত সহজ নয়। এটা বুঝতে হবে অভিনয়টা অপশন নয়। প্যাশন।

সাহিত্য থেকে সিনেমা, এই সময়ে দাঁড়িয়ে কতটা নিশ্চিন্ত?

সব সিনেমা হিট করে না। কিছু  সিনেমা বাক্সবন্দি হয়, অনেক সিনেমা বাক্সবন্দি হয় না, বছরের পর বছর একটা হাউসে চলে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে সিনেমা হলই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, কারণ মাল্টিপ্লেক্সের চোখরাঙানিতে সাধারণ হল মালিকরা সিনেমা আনতে পারছেন না। সে কথা তো সকলেই জানি। 

সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রে জটিল অবস্থা এই মুহূর্তে। সর্বত্র অভাব, ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে। সুনীল গাঙ্গুলীদের ওই যুগটার পর কোথায় গেল সেই সব সোনার সাহিত্য? কে নাট্য রচনা করবেন? কেমন করে নতুন কাব্য রচনা হবে? কে-ই বা সংস্কৃতির অভিভাবক হবেন?  আসলে এখন ‘সবাই সব কিছু করে’ এমন শিল্পীর সংখ্যা প্রচুর।  চিত্রনাটা, সংলাপ, সঙ্গীত, ফাইট, হিরো, সবই একজন! ভাবখানা এমন, ‘আমি খরচা করছি মানে আমিই সব করব’! আমি একজন প্রডিউসারকে জানি, তাঁর একটা প্রজেক্টে আমি ছিলাম। সেই ফিল্মটার জন্য বম্বে থেকে এবং বাংলাদেশ থেকে আর্টিস্ট আনা হয়েছিল, টলিউডের স্টাররা তো ছিলই। আমি বারবার গল্পটা শুনতে চেয়েছিলাম। কারণ মানুষ গল্পটা দেখে। গল্প আর স্ক্রিপ্টের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে ছবি। অথচ প্রডিউসার সেই গল্প আমায় ঠিক করে শোনাতে পারেন নি। বম্বে থেকে খরচা করে আর্টিস্ট নিয়ে আসা হচ্ছে কিন্তু তাঁর ভূমিকা কতটুকু? তাঁর নামের ক্রেডেনশিয়াল দিয়ে তুমি দর্শক আনছ সেটা ভালো কথা, কিন্তু সিনেমা দেখতে বসে যখন সেই স্টারকে মানুষ এক দুই সিনের পর খুঁজে পাবেন না তখন তো তোমার সিনেমা সুপার ফ্লপ! ঠকাচ্ছ

 আসলে কাকে? মানুষকে না নিজেকে?

সম্মানিত যাত্রা সম্রাট।
সম্মানিত যাত্রা সম্রাট।

আজকাল রিয়েলিটি শো, মেগা সিরিয়াল ইত্যাদি থেকে প্রচুর নতুন ইয়ং ছেলেমেয়ে উঠে আসছে। কাজের সুযোগ পাচ্ছে। আপনি কি বলেন? 

সমস্যটা আসলে অনেক গভীরে, যত দিন যাচ্ছে মানুষ তত যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে। এই প্রজন্মকে আমরা কথায় কথায় দোষ দিই, তাদের অধৈর্য্য বলি, কিন্তু ওরা কেন এতটা উদ্ভ্রান্ত, ভেবে দেখেছি  কখনও? কারণ  আমরা ওদের ঠিক মত শেখাতে পারি নি। নিজের শিকড়কে চিনতে শেখাই নি, মাম্মা, পাপা এই কালচারে মানুষ করছি। শেখার ইচ্ছে কম, জেতার ইচ্ছা বেশি! রিয়েলিটি শো ধংশ করছে ওদের কেরিয়ার। কোথায় গেল রাশি ধারাবাহিকের সেই সুপার হিট অভিনেত্রী? একটা সময় কোন দল ওকে যাত্রা, থিয়েটারে হিরোয়িন করবে সেই নিয়ে কত টানাটানি! কিছুদিন পর সব কেমন থেমে গেল!

 যেমন বাচ্চারা রিয়েলিটি শোয়ের চ্যাম্পিয়ান হওয়ার পর তাদের গর্বিত বাবা মায়েরা কিছুদিন মেতে থাকেন শোয়ের বিজনেসে। ততদিনে হারিয়ে যায় সন্তানের ছেলেবেলা! অথচ ২/১ টা সিজিন শেষ হলেই কমে যায় তাদের শো।  কারণ ততদিনে নতুন চ্যাম্পিয়ান এসে গিয়েছে মার্কেটে।… এইভাবে আর যাই হোক শিল্পী হওয়া যায় না। এটা কোনও সফলতা নয়। ঘরকা না ঘাটকা হয়ে থেকে যায় ওদের ভবিষ্যত।

 বিনোদন জগতের রোজগারের ভবিষ্যত তো এখনও অনিশ্চিত।  আর্থিক ক্ষতি সামাল দিয়ে মূলস্রোতে ফেরা সম্ভব?

টলিউডের ক্ষেত্রে যেটা হয়,  ধরুন আমি একটা ফিল্ম  তৈরি করছি, সেই ফিল্মটা যখন শেষ হয় তখন কিন্তু আর্টিস্ট টেকনিশিয়ানদেরও ওই কাজটা  শেষ হয়ে যায়, এবং ছবিটা চলে যায় ডেভেলপমেন্টের কাজে। সেখানে প্রিন্ট ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি চলবে। সেই কাজটাও একটা সময় শেষ হবে। তখন তাঁরা আবার একটা অন্য ফিল্মের সঙ্গে যুক্ত হন। ফলত বছরভর রোজগারের একটা চেইন সিস্টেম থাকে। কিন্তু যাত্রার ক্ষেত্রে সেটা হয় না। যা করার সেটা ওই কয়েক মাসের মধ্যেই করতে হয়।  

একজন টেকনিশিয়ান খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলেও তাঁর রোজগার কতটুকু? ফ্লোরে যে ছেলেটি জল দেয়, যেমন একটা শট দেওয়ার পর কখন কার জল তেষ্টা পাচ্ছে সেটা বুঝে জল নিয়ে হাজির হওয়া এটা আমার মতে খুব জরুরি একটা কাজ। কিন্তু সেই ছেলেটার রোজগার কত? কেউ খবর রাখে?

অনেক ওপর নিচ হয়েছে, সাময়িক অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে, কিন্তু জীবনে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। এই থেমে যাওয়া মানে জীবনটাই যেন থেমে গিয়েছে! আমার টেকনিশিয়ানরা, মিউজিশিয়ানরা ফোন করছেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে যতটা পারছি তাঁদের সাহায্য করছি। তবে সেটা তো সলিউশন নয়। কারণ রথের দিন থেকে যাত্রার নতুন বছর শুরু হয়। ফলে এই যে বছরটা চলে গেল সেই লসটা তো লসই থেকে গেল।  সেই পুজোর দু'দিন আগে থেকে নতুন সিজিন আরম্ভ হবে। ওইটুকুই এখন বড় আশা।

বাংলার যাত্রা সম্রাট
বাংলার যাত্রা সম্রাট

রিকভারির  সম্ভব?

পৃথিবীর সমস্ত মানুষের রিকভার করার যে দিনটা চলে যায় সেটা কিন্তু আর ফেরত আনা যায় না। যাত্রার সিজন বলতে ৫ থেকে ৬ মাস। সবে মহড়ার তোড়জোর শুরু হয়েছিল, কিন্তু মাঝ পথেই তা বন্ধ করে দিতে হল কারণ লকডাউন হয়ে গেল। এই সময়টা তো কোনও ভাবেই যাত্রার জীবনে আর ফিরে আসবে না, সুতরাং সমস্যাতে তো পড়বেনই সমস্ত শিল্পী, টেকনিশিয়ানরা। এই পাঁচ ছয় মাসের সিজনে কাজ করে সারা বছরের জন্য অর্থ সঞ্চয় করেন যাত্রার সঙ্গে যুক্ত মানুষরা। তাঁদের সংসার চলে এই রোজগারে। এই বছর কিন্তু অঙ্কটা বদলে গেল। যাত্রার কলাকুশলীদের জন্য অনুদানের কোনও জায়গা রয়েছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। সম্ভবত নেই। এমনিতে সাধারণ মানুষরা তাঁদের রেশন কার্ডের দ্বারা যে ভাবে সরকারি অনুদান পেতে পারেন বা বেসরকারি উপায়ে যা অনুদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে সেই সাহায্য তাঁরা পেতে পারেন। ফলে বিরাট একটা সমস্যা তো হবেই, এবং এই নিয়েই চালাতে হবে।

আমরা কেউ জানি না পুজোর সময় থেকে যদি নতুন সিজিন শুরু হয় তখন সোশ্যাল ডিসটেন্সিং থাকবে কি না? যাত্রার ক্রাউড সিনেমার চেয়ে হাজার গুণ বেশি। পুলিশ দিয়ে ক্রাউড কন্ট্রোল করতে হয়। অডিয়েন্সরা একসঙ্গে বসে যাত্রা দেখার অনুমতি পাবেন কিনা তাও এখনও জানি না! অতএব  আমি আমার সকল সহকর্মী ভাই বোনদের বলেছি, একটুও সময় নষ্ট না করে যে যা পারো, তাই করো, সে মাঠে ধান চাষ থেকে হকারি যাই হোক না কেন। কাজে যুক্ত হও। যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ততদিন রোজগারের অন্য পথ খুঁজে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। সংসারটা তো চালাতে হবে।

আজ অনেক প্রাচীন শিল্প, লোক শিল্প, ট্র্যাডিশন হারিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে কিন্তু যাত্রা আজও বেশ আলো করেই রয়েছে বাংলার শিল্প তালিকায়। এটা সত্যিই আনন্দের এবং গর্বের। এই আশা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।  

 

Latest News

সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিকের ভাগ্যে আজ কী রয়েছে? ২৪ জুন ২০২৫ রাশিফল রইল মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কটের মধ্যে আজ কার ভাগ্যে কী রয়েছে? রইল ২৪ জুন ২০২৫ রাশিফল বিরাট-রোহিতের অবসরের পরে ইতিহাস ভারতের, চিরকালীন লজ্জা থেকে মুক্তি পেল বাংলাদেশ লিডস টেস্টে জোড়া ক্যাচ ধরে রাহুল দ্রাবিড়ের বিশ্বরেকর্ড ছুঁলেন জো রুট এখনও আড়ালেই অকায়-ভামিকা! কবে ছেলেমেয়ের মুখ দেখবেন বিরুষ্কা?কী বললেন অভিনেত্রী বাড়িতেই লিঙ্গবৈষম্যের ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন অপূর্বা! স্মৃতি হাতড়ে কী বললেন? বর্ষায় এসি চালাচ্ছেন আরাম পেতে? ওত পেতে রয়েছে এইসব বিপদ, সাবধান হন আজই ইংল্যান্ডের মাটিতে ব্যাট হাতে দাপট তিলক বর্মার, দাঁড়িয়ে শতরানের দোরগোড়ায় হনুমানের চরিত্র করতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে পড়েন সানি! রণবীরের প্রশংসায় কী বললেন? কানে দুল পরে স্কুলে, নিয়ম মনে করানোয় শিক্ষাকর্মীকে দলবল এনে বেধড়ক পেটাল ছাত্র

Latest entertainment News in Bangla

এখনও আড়ালেই অকায়-ভামিকা! কবে ছেলেমেয়ের মুখ দেখবেন বিরুষ্কা?কী বললেন অভিনেত্রী বাড়িতেই লিঙ্গবৈষম্যের ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন অপূর্বা! স্মৃতি হাতড়ে কী বললেন? হনুমানের চরিত্র করতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে পড়েন সানি! রণবীরের প্রশংসায় কী বললেন? 'মিশন ইম্পসিবল' থেকে ‘নে যা ২’, দেখে নিন এই বছরের হিট ছবির তালিকা প্রকাশ্যে এল বিগ বস ১৯-এর শুরুর দিনক্ষণ! কবে থেকে শুরু হচ্ছে সলমনের শো? কানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ে করানো হবে দিলজিৎ দোসাঁঝের ওপর কোর্স, কী শেখানো হবে? গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শোয়ের জন্য আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিক নিচ্ছেন কপিল! মস্তিষ্কের কঠিন রোগে আক্রান্ত সলমন! কিন্তু জানেন কী এই ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া? সানি নন, প্রথমে এই অভিনেতাকে শোনানো হয় গদরের গল্প!একটি দৃশ্যে অভিনয় করেন কপিলও ট্রোলের মুখে পড়েই সুর বদল কাজলের! রামোজিকে ভুতুড়ে এলাকা বলার পর এবার কী বললেন?

IPL 2025 News in Bangla

সামনে নেই T20! তবু কেন টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেই ইংল্যান্ডে গেলেন সূর্যকুমার যাদব? আইপিএল ২০২৫-এ সাফল্যের পর ওজন বেড়েছে বৈভব সূর্যবংশীর! কী বললেন রাহুল দ্রাবিড়? আমি Royal Challenge খাই না! RCBকে নিয়ে কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রীর মজাদার মন্তব্য বেঙ্গালুরুতে RCB সমর্থকদের পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় মুখ খুললেন রাহুল দ্রাবিড়! বিক্রি হতে পারে আইপিএল ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন RCB-র ফ্র্যাঞ্চাইজি: রিপোর্ট প্রীতি জিন্টার প্রশ্ন শুনে অবাক রিকি পন্টিং! কী বললেন পঞ্জাব কিংসের হেড স্যার? চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন সুনীল গাভাসকর বিরাট কোহলির জন্য ক্যাপ্টেনের প্রচলিত রীতি ভাঙলেন RCB-র অধিনায়ক রজত পতিদার অধিনায়ক হিসেবে রোহিত-গিলকে চ্যালেঞ্জ দেওয়া শুরু শ্রেয়সের! বলছেন BCCI কর্তারাই ‘সিতারে জামিন পর’-র প্রিমিয়রে সচিন! আমিরের বাড়িতে লিটল মাস্টারের নামে স্লোগান

Copyright © 2025 HT Digital Streams Limited. All RightsReserved.