বিগত কয়েক বছরে বারবার ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। সাধারণ মানুষের বাড়ির চাল উড়েছে, মাঠ ভেসে গিয়েছে জলে, ভেঙেছে নদী বাঁধ। আর যতবারই ঘূর্ণিঝড় এসেছে, ততবারই তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ত্রাণ চুরির অভিযোগ উঠেছে। ক্ষোভে ফুঁসেছে সাধারণ মানুষ। ২০২৪ সালেও ঘূর্ণিঝড় রেমালের দাপটে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বহু জায়গায়। তবে এবার সেই ঘূর্ণি কাঁটা ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলবে না তো? এই প্রশ্ন জেগেছে অনেকের মনে। তবে তেমনটা যাতে না হয়, তার জন্যে তৈরি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। একদিকে যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গতদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। অপরদিকে সোমবার রাতে প্রচার বাতিল করে সোজা ত্রাণ শিবিরে পৌঁছে গিয়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। (আরও পড়ুন: ক্ষমতায় ফিরছেন মোদী? 'অনিশ্চিত' মমতার বড় দাবি, নয়া অঙ্ক কষে বললেন...)
আরও পড়ুন: '৪ আসনও পাবে না…', ইন্ডিয়ার বড় শরিককে নিয়ে শাহি দাবি, খোঁচা - 'মমতা PM হবেন?'
রবিবার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এর জেরে অনেক জায়গায় মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের। অনেকেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। এই আবহে সোমবার ডায়মন্ড হারবারে পূর্ব নির্ধারিত প্রচার বাতিল করে একাধিক ত্রাণ শিবিরে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অটোতে চেপে তিনি যান এই সব ত্রাণ শিবিরে। থাকা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে অভিষেক তাঁদের ক্ষয়ক্ষতির কথা জানতে চান। সেখানে থাকা সাধারণ মানুষদের অভিষেক পাশে থাকার বার্তা দেন।
এদিকে শুধু তিনি নিজে নন, দলের নেতাদেরও দুর্গতদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রেমালের জেরে মৃত্যু হয়েছে দু'জনের। জানা যায়, মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপে ঘরের চালে গাছ পড়ে মারা যান আশি বছর বয়সি রেণুকা মণ্ডল। বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর পেয়ে মথুরাপুরের তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদারকে ফোন করেন অভিষেক। সেই সময় বাপি মথুরাপুর ১ নম্বর ব্লকের নালুয়ায় প্রচার করছিলেন। তবে অভিষেক তাঁকে প্রচার বন্ধ করে মৌসুনি দ্বীপে যাওয়ার নির্দেশ দেন। অভিষেকের কথা মতো তখনই কর্মসূচি থামিয়ে মৌসুনি দ্বীপে যান বাপি। অপরদিকে মহেশতলার নুঙ্গিতে বিদ্যুতের ওভারহেড তার ছিঁড়ে বাড়ির সামনেই জমা জলে পড়ে থাকায় সেখানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ার। এই আবহে মহেশতলা পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অলকা মাইতিকে মৃত মহিলার বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দেন অভিষেক।
এদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে কালো রঙের টিশার্টটি পরে রেমাল দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করতে যান, সেটির দাম নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়, অভিষেক যে টিশার্টটি পরেছিলেন, সেটির দাম আট হাজার টাকা। এই নিয়ে বিজেপি খোঁচা মেরে বলে, ঘূর্ণিঝড়ের দুর্গতদের ত্রাণ কাজ দেখতে ৮০০০ টাকার টিশার্ট পরেছেন অভিষেক। তিনি গরিবদের উহাস করেছেন। তৃণমূলের লজ্জা হওয়া উচিত। এদিকে বিজেপির পোস্ট করা ছবিতে একদিকে আছে অটোতে বসে থাকা অভিষেক, অন্যদিকে একটি অনলাইন সাইটের স্ক্রিনশট। তাতে একটি দামী ব্র্যান্ডের টিশার্ট দেখা যাচ্ছে, যার দাম ৭৯৯৯ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। বিজেপির দাবি, ওই ব্র্যান্ডের টিশার্ট পরেই অভিষেক ত্রাণ শিবিরে গিয়েছিলেন।