ছাত্র নেতা আনিস খানের খুন হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য–রাজনীতি। তারপর সেটা খানিকটা থিতিয়ে গেলেও আবার তাকে খুঁচিয়ে সামনে নিয়ে এল সিপিএম। তাই এখন এটাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে হয়ে উঠেছে ‘হট টপিক’। কারণ এই নিহত আনিস খানের দাদা সামসুদ্দিন খানকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী করল সিপিএম। যা কার্যত মাস্টারস্ট্রোক বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই প্রার্থী করার পর এলাকায় আওয়াজ তোলা হয়েছে—দেখ কেমন লাগে।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? কুশবেড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির ৪২ নম্বর আসনে প্রার্থী করা হয়েছে আনিস খানের দাদা সামসুদ্দিন খানকে। তাই রবিবার দেখা গেল ছেলের সমর্থনে দেওয়ালে সিপিএমের নির্বাচনী প্রতীক কাস্তে–হাতুড়ি–তারা আঁকছেন আনিস খান, সামসুদ্দিন খানের বাবা সালেম খান। বুকে পাথর রেখেও চোখের জলকে ধরে রাখতে পারছেন না তিনি। তবু ছেলের হত্যাকাণ্ডের লড়াই থেকে তিনি এক ইঞ্চি সরতে নারাজ। তাই তাঁকে আজ রাজনীতির মাঠে দেখা গেল। ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে আজও দাবি বাবার। তাই এভাবেই তিনি ছেলের হত্যার বদলা নিতে চান।
ঠিক কী বলছেন প্রার্থী? বাংলার রাজনীতিতে আগেও দেখা গিয়েছে, খুন হওয়া ব্যক্তির পরিবার থেকে প্রার্থী হতে। রিজওয়ানুর রহমানের হত্যার পর তাঁর দাদা রুকবানুরকে বিধায়ক করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। নন্দীগ্রামের ‘শহিদের মা’ ফিরোজা বিবির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের খুন হওয়া তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রূপালি বিশ্বাসকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট আসনে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এবার সিপিএম আনিসের দাদাকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী করল। সিপিএমের প্রার্থী সামসুদ্দিন খান সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘আনিস যে সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল, যে কারণে ভাইকে রাষ্ট্রীয় অত্যাচারে খুন হতে হল, আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতেই আমার রাজনীতির ময়দানে নামা।’
ঠিক কী বলছেন আনিসের বাবা? এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিপিএমের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই সহানুভূতি দিয়ে ভোট পেতে চাইছে। মানুষ ভোট দেয় উন্নয়ন দেখেই। আনিসের মৃত্যুর পর প্রতিবাদ কর্মসূচি করে গ্রেফতার হন যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। ইদের দিন আনিসদের বাড়িতেই সময় কাটিয়েছিলেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। আর আনিসের দাদা সামসুদ্দিন খান প্রার্থী হওয়ায় আনিসের বাবা সালেম খান সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘আনিসের হত্যার বিচারের জন্য আমার লড়াই চলবে।’